ডেস্ক রির্পোট:- মধ্যরাত। রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন প্রান্তে ছোট ছোট কিছু দোকানের সামনে তরুণ-তরুণীর লম্বা লাইন। তাদের অনেকেই আসেন দামি গাড়ি কিংবা মোটরসাইকেল হাঁকিয়ে। বেশিরভাগ দোকানের নেই কোনো সাইনবোর্ড। বাইরের দিকে যেমন সাদামাটা, ভেতরটাও অপরিষ্কার। তার পরও দিন দিন বাড়ছে এসব দোকানের কদর। আশপাশের লোকজনের কাছে এগুলো ‘জুসের দোকান’ হিসেবে পরিচিত। তবে এসব জায়গায় বাস্তবে কোনো জুস মেলে না। এর পরিবর্তে বিক্রি হয় নেশা ও স্নায়ু উত্তেজক উপাদান মিশিয়ে তৈরি করা এক রকম সালশা। নতুন এই মাদকের টানে প্রতি রাতে ‘সালসা বার’ নামে পরিচিতি এই দোকানগুলোতে ছুটে আসেন তরুণরা। মাত্রা ভেদে দেড়শ থেকে দুই হাজার টাকায় এই পানীয় গ্রহণ করে নেশায় বুঁদ হয়ে থাকেন তারা।
এক মাস ধরে বিভিন্ন সূত্রে খোঁজ নিয়ে রাজধানীতে এমন ৯টি সালসা বারের সন্ধান পাওয়া গেছে। এই বারগুলোতে প্রতিদিন প্রায় কোটি টাকার মাদক বিক্রি হচ্ছে। পরে সরেজমিন ঘুরে নানা বয়সী তরুণ-তরুণীর মাদকে বুঁদ হয়ে থাকার ভয়ংকর চিত্র দেখা গেছে। অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে মাদকমিশ্রিত এই সালসার উৎপাদক ও সরবরাহকারীদের আদ্যোপান্ত।
এ ছাড়া একাধিক সালসা বার থেকে কৌশলে এই পানীয় সংগ্রহ করে ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করায় কালবেলা। এতে পাওয়া গেছে নানা মাদকসহ মারাত্মক ক্ষতিকর নানা উপাদানের অস্তিত্ব।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ক্যাফেইনের সর্বোচ্চ স্বাভাবিক মাত্রা ০.১৪৫। এর চেয়ে বেশি গ্রহণ করলে কিডনি বিকল হওয়ার আশঙ্কা থাকে। রক্তচাপ অস্বাভাবিক ওঠানামা করায় ধমনি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায়। ক্যাফেইনের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মেশানো খুবই ভয়ংকর। কারণ একটি আরেকটির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এ ছাড়া নানা ধরনের ক্ষতিকর উপাদান একসঙ্গে গ্রহণ করায় বড় ধরনের শারীরিক ক্ষতি হতে পারে।
তরুণ-তরুণীদের কাছে ‘পিনিক’ নামে পরিচিত এই সালসায় যৌন উত্তেজক উপাদান থাকায় তৈরি হতে পারে নানা ধরনের সামাজিক সমস্যা। এ ছাড়া দীর্ঘমেয়াদে এটি গ্রহণ করলে ক্ষুধামান্দ্য, নির্জীবতা, শরীরের মাংসপেশি শুকিয়ে যাওয়া, অত্যধিক দুর্বলতা, হাত-পা অনবরত কাঁপতে থাকা, এমনকি পুরুষত্বহীনতার মতো সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।
সরকারি একটি ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষায় পাওয়া ফলাফল এবং ‘পিনিক’ তৈরির কাজে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি এই সালসা তৈরিতে ব্যবহার করা হয় যৌন উত্তেজক ওষুধ। এর পাশাপাশি থাকে উচ্চমাত্রার ক্যাফেইন, গাঁজা এবং ঘুমের ওষুধ। এর সঙ্গে যুক্ত করা হয় পাকা মিষ্টি কুমড়া এবং গাঢ় রং। এসব উপাদান মিশিয়ে তৈরি করা হয় নতুন ধরনের এই মাদক। এটি গ্রহণ করলে যৌন উত্তেজনা তৈরি হওয়ার পাশাপাশি সারাক্ষণ ঘুম ঘুম ভাব লেগে থাকে। ঝিম ধরে থাকে শরীর। তৈরি হয় ক্ষুদামান্দ্য। একবার এই ‘পিনিক’ খেলে রেশ লেগে থাকে অন্তত ২০ ঘণ্টা।
জানা গেছে, রাজধানীতে কাঁটাবন, মিরপুর, আলমগঞ্জ, স্টাফ কোয়ার্টার এলাকায় সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় ‘পিনিক’ নামের এই সালসা। সরেজমিন কয়েকটি বার ঘুরে দেখা গেছে, সাধারণত রাত নয়টার পর থেকে দুইটা পর্যন্ত ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড় থাকে। ‘পিনিক’-এর ক্রেতা মূলত উঠতি বয়সের
তরুণ-তরুণীরা। দলবেঁধে এসে এই মাদক সেবন করেন তারা। অনেকে আবার হোম ডেলিভারিও নেন। বারগুলোতে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক তরুণীর দেখা মেলে।
এসব বারে নিয়মিত যাতায়াত করেন, এমন কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তারা জানান, রাজধানীতে এ ধরনের অন্তত ১৫টি বার রয়েছে। সালসা কিংবা জুসবার বলা হলেও আদতে এর কোনোটিই বিক্রি হয় না। সালসার মধ্যে নানা ধরনের নেশাদ্রব্য মিশিয়ে বিক্রি করা হয়। কী ধরনের উপাদান যুক্ত করা হচ্ছে, তার ওপর নির্ভর করে দাম রাখা হয় দেড়শ থেকে দুই হাজার টাকা। সামর্থ্য অনুযায়ী নেশা করার সুযোগ থাকায় এসব দোকানে প্রতিদিনই বাড়ছে ক্রেতা।
বেশ কয়েকজন ভোক্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দেড়শ টাকার একটা ‘পিনিক’ নিলে নেশার ঘোর থাকে অন্তত ২০ ঘণ্টা। সেইসঙ্গে তৈরি হয় তীব্র যৌন উত্তেজনা। এ সময় নিজের ওপর তেমন নিয়ন্ত্রণ থাকে না। সারাক্ষণ ঘুম ঘুম ভাব থাকলেও পুরোপুরি ঘুম আসে না। শরীর ঝিম মেরে থাকে। মাথায় হালকা সুরসুরি অনুভূত হয়।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বর্তমানে কমপক্ষে তিনটি প্রতিষ্ঠান ভয়াবহ এই সালসা উৎপাদন ও বাজারজাত করছে। এর একটির নাম শুভ আজমেরি দাওয়াখানা, যার মালিক কবিরাজ মো. নাঈম। পুরান ঢাকার নারিন্দা এলাকার বাসিন্দা এই নাঈমের বেশ কয়েকটি বাড়ি রয়েছে ওই এলাকায়।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রকৃতপক্ষে এই নাঈম কোনো হেকিম নন। নানা ধরনের দালালিই তার মূল পেশা। বিভিন্ন সময়ে ছোটখাটো অপরাধের সঙ্গেও জড়িয়েছেন তিনি। কয়েক বছর ধরে সালসার ব্যবসা করছেন। তখন থেকেই নামের সঙ্গে ‘হেকিম’ পদবি ব্যবহার করছেন।
শুভ আজমেরি ছাড়াও এ ধরনের ‘পিনিক সালসা’ রাজধানীসহ সারা দেশে সরবরাহ করে আরও দুটি প্রতিষ্ঠান। একটি তৃপ্তি সালসা ঘর এবং আরেকটি সুজন সালসা ঘর। মূলত এই তিন প্রতিষ্ঠানই সারা দেশে সরবরাহ করে নেশাদ্রব্য মেশানো সালসা।
মো. নাঈমের শুভ আজমেরি দাওয়াখানার সালসার বোতলে ঠিকানা লেখা আছে হৃষিকেশ দাস রোড, নারিন্দা। সেখানে গিয়ে ওই দাওয়াখানার অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। তবে পাইকারি ক্রেতা সেজে বোতলের গায়ে লেখা মোবাইল নম্বরে কল করা হলে বংশালের আগা সাদেক লেনের বাংলাদেশ মাঠ এলাকায় যেতে বলা হয়।
অবশ্য কালবেলার অনুসন্ধানে মাদকমিশ্রিত সালসার একটি কারখানার খোঁজ মেলে। সূত্রাপুরের কেবি রোডের ছোট্ট গলির মধ্যে একটি বাড়িতে এর অবস্থান। স্থানীয় বেশ কয়েকজন বাসিন্দা জানান, ৭-৮ মাস আগে নাঈম নামে এক ব্যক্তি এই বাড়িটি কিনেছেন। তিনি বাড়ির দোতলায় একটি কারখানা স্থাপন করেন। তখন বলা হয়েছিল, এই কারখানায় আয়ুর্বেদিক সালসা উৎপাদন করা হবে।
পাইকারি ক্রেতা সেজে ওই কারখানায় গিয়ে বাইরে থেকে তালাবদ্ধ পাওয়া যায়। তবে কিছুক্ষণ পরই একজন কারিগর আসেন। তার সঙ্গে দীর্ঘ আলাপে ‘পিনিক’ তৈরির উপাদান সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
তিনি জানান, তথাকথিত এই সালসায় এক ধরনের যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট দেওয়া হয়। এর সঙ্গে যুক্ত করা হয় সিনথেটিক ক্যাফেইন। এ ছাড়া গাজা এবং ঘুমের ওষুধ মেশানো হয়।
তিনি আরও জানান, প্রতিদিন ভোররাতে কারওয়ান বাজার থেকে আনা হয় মিষ্টি কুমড়া। সাধারণত যেসব মিষ্টি কুমড়া নানা কারণে নষ্ট হওয়ার পথে, সেগুলো অল্প দামে কিনে আনা হয়। এরপর বিচি আলাদা করে পানিতে মেশানো হয়। এর সঙ্গে যুক্ত করা হয় বিশেষ রং এবং পারফিউম।
ওই কারখানার লাগোয়া বাসায়ই থাকেন একজন মুদি দোকানি। তিনি কালবেলাকে বলেন, সব
দরজা-জানালা বন্ধ করে রাত বাড়লেই এই মাদক তৈরি শুরু হয়। গন্ধে থাকা যায় না। প্রথমদিকে দরজা-জানালা খুলেই উৎপাদন করা হতো। আশপাশের লোকজন প্রতিবাদ করায় এখন সব আটকে রাখা হয়। তার পরও গন্ধ ছড়িয়ে যায় আশপাশে।
তিনি বলেন, সব উপাদান মিক্সড করে বড় বড় কড়াইয়ের মধ্যে রেখে দীর্ঘসময় তাপ দেওয়া হয়। এরপর বোতলভর্তি করে সরবরাহ করা হয় নানা জায়গায়।
ওই এলাকার সমাজকর্মী মুহসিনা তাজরিন এলিন বলেন, ‘সালসার আড়ালে এরা মাদক বানায়। এখানেই কারখানা দিয়েছে। আশপাশের বাড়িঘরে গন্ধে থাকা যায় না। রাতের বেলা এখান থেকে রাজধানী ও দেশের বিভিন্ন স্থানে এই মাদক সরবরাহ করা হয়। সবার সামনে দিনের পর দিন এই কাজ হলেও কেউ বাধা দেয় না। স্থানীয় কয়েকজনকে নিয়ে প্রতিবাদ করেছি, কিন্তু কাজ হয়নি। কারণ কারখানার মালিক অনেক প্রভাবশালী। সবকিছু ম্যানেজ করে ফেলেন।’
তবে সালসার নামে মাদক বিক্রির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন শুভ আজমেরি সালসার মালিক হেকিম মো. নাঈম। তিনি বলেন, ‘মূলত তিনটি কোম্পানি এ ধরনের সালসা বিক্রি করে। অন্যরা সালসার নামে পিনিকও দেয়। কিন্তু আমি প্রকৃত সালসা বিক্রি করি। পিনিক বা ফোঁটা আমি বিক্রি করি না। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী এসব পিনিক বিক্রি করে আমার নামে বদনাম ছড়ায়। এর আগে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা দুজন পিনিক ব্যবসায়ীকে আটকও করেছিলেন। কিন্তু আমারটাতে কিছু পাননি।’
তিনি বলেন, ‘কোনো দোকানে গিয়ে পিনিক চাইলে দেখবেন তারা ড্রয়ার থেকে কোন কোম্পানিরটা বের করে, তাহলেই সত্যটা জানতে পারবেন। আমি মানুষকে নেশায় প্ররোচিত করি না।’
রাজধানীর কাঁটাবন মোড় পার হয়ে হাতিরপুলের প্রবেশমুখেই আছে এমন একটি সালসা বার। এই দোকানে সারাদিন তেমন কোনো ক্রেতা থাকে না। তবে রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভিড় বাড়তে থাকে। রাত দশটার পর থেকে কখনো কখনো ক্রেতার লাইন রাস্তায় গিয়ে ঠেকে। গত ১২ ফেব্রুয়ারি রাত ১১টা ৩৮ মিনিট থেকে ১২টা ৮ মিনিট পর্যন্ত দোকানটির সামনে অবস্থান করে দেখা যায়, মাত্র ত্রিশ মিনিটে এই দোকানে ঢুকেছেন শতাধিক ক্রেতা। প্রতি রাত দেড়টা থেকে ২টা পর্যন্ত জমজমাট থাকে এ বার।
দোকানটির বাইরে কোনো সাইনবোর্ড নেই। ছোট্ট একটা ফাঁকা জায়গা দিয়ে ভেতরে যেতে হয়। ফলে বাইরে থেকে বোঝার উপায় নেই, এখানে কী বিক্রি হয়! ভেতরে প্রবেশ করে দেখা যায়, দোকানের নাম দীপ্তি সালসা ঘর। অন্তত এক ডজন সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে আশপাশে নজরদারি করা হয়। এমনকি দোকানের মধ্যে ছবি তোলা বা ভিডিও করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
গত ২৯ জানুয়ারি দুপুর ১২টায় ক্রেতা পরিচয়ে এই দোকানে প্রবেশ করে দেখা যায়, ভেতরে একেবারেই ফাঁকা। দোকানের কর্মীর কাছে জুস চাইলে জানানো হয়, জুস নেই, আছে সালসা। দাম জানতে চাইলে তিনি জানান, দেড়শ টাকা থেকে শুরু। এরপর পিনিকের পরিমাণের ওপর নির্ভর করবে সালসার দাম। ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী মেশানো হয় আলাদা উপাদান।
ওই দোকান থেকে পনেরশ টাকায় একটি পিনিক কেনা হয়। পরে এটি একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করানো হয়। এতে দেখা যায়, ওই সালসার মধ্যে বিপুল পরিমাণ সিনথেটিক ক্যাফেইন রয়েছে। সাধারণত ০.১৪৫ পর্যন্ত মাত্রার ক্যাফেইন মানবদেহে সহনীয়। এরচেয়ে বেশি হলে নানা ধরনের সমস্যা তৈরি হয়। তবে পরীক্ষায় দেখা গেছে, ওই সালসায় ক্যাফেইনের পরিমাণ অন্তত পঞ্চাশ গুণ। কেবল তাই নয়, পিনিকের মধ্যে আরও রয়েছে গাঁজা এবং ঘুমের ওষুধ।
সরেজমিন দেখা গেছে, কাঁটাবনের ওই দোকানের পাশে রাতের বেশিরভাগ সময় নিউমার্কেট থানার একটি টহল গাড়ি অবস্থান করে। অন্তত চার দিন পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, দোকানের আশেপাশেই গাড়িটির অবস্থান। গত ১২ ফেব্রুয়ারি রাত ১২টার দিকে নিউমার্কেট থানার টহল গাড়ি থেকে নেমে পোশাক পরেই একজন পুলিশ সদস্য ওই দোকানে প্রবেশ করেন। মিনিট পাঁচেক ভেতরে অবস্থানের পর বের হয়ে গাড়ি নিয়ে এলাকা ত্যাগ করেন।
জানতে চাইলে নিউমার্কেট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে জানি না। আপনার কাছেই প্রথম শুনলাম। আপনি ঠিকানা দিন, আমরা খোঁজ নিয়ে পরীক্ষা করে অভিযান পরিচালন করব।’
তিনি বলেন, ‘সালসা বার নামটাই প্রথম শুনলাম। পরীক্ষা করে দেখতে হবে, এটা মাদকের কোন ক্যাটাগরিতে পড়ে। এরপর অভিযান চালাতে হবে।’
কেবল কাঁটাবনই নয়, বকশীবাজার সিগন্যাল থেকে চানখাঁরপুল রোডে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মার্কেটে রয়েছে এ ধরনের আরও দুটি দোকান। এসব দোকানেও সাইনবোর্ড নেই। তবে সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত শত শত তরুণ-তরুণী লাইন দিয়ে কিনছে এই পিনিক। প্রতিদিনই বাড়ছে বিক্রির পরিমাণ। আশপাশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও ঝুঁকছেন এই মাদকের প্রতি।
এ ছাড়া মিরপুর-১২-এর পল্লবী এলাকার ব্লক-সি-র ১০ নম্বর রোড, ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টার, গেন্ডারিয়ার আলমগঞ্জ, পুরান ঢাকার আনন্দ বেকারির গলি, বাংলাদেশ মাঠসংলগ্ন হরিজন পল্লির পাশে, কাজলা পেট্রোল পাম্প এবং কেরানীগঞ্জের জিনজিরায় এই টনিকের দোকান রয়েছে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের ঢাকা বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক মুজিবুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, ‘এ ধরনের মাদক সম্পর্কে আমরা একেবারেই পরিচিত নই। আপনার কাছ থেকেই প্রথম শুনলাম। বিষয়টি খতিয়ে দেখব। জুস বারের আড়ালে কেউ মাদক বিক্রি করলে অতিদ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের পরিচালক মো. আখতার মামুন বলেন, ‘বিষয়টি খতিয়ে দেখে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের প্রধান রাসায়নিক পরীক্ষক ড. দুলাল কৃষ্ণ সাহা বলেন, ‘এটি প্রখ্যাত কোনো কোম্পানি নয়। সাধারণ একটি প্রতিষ্ঠান। অনেক বড় বড় প্রতিষ্ঠানই নিয়মনীতি না মেনে এনার্জি ড্রিঙ্কস বাজারে ছাড়ছে। সালসার মধ্যে শিডিউলভুক্ত মাদক রয়েছে। আইনগতভাবে এটি দণ্ডনীয়। এ ধরনের সালসা খেলে কিডনি বিকল হয়ে যাওয়া ছাড়াও জনস্বাস্থ্যে নানা ধরনের প্রভাব পড়তে পারে।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক ও জ্যেষ্ঠ জনস্বাস্থ্যবিদ অধ্যাপক ডা. বেনজির আহমেদ বলেন, ‘মাদক কিংবা নেশাদ্রব্য সেবনের কারণে ব্রেনসেল ঠিকমতো কাজ করে না। ব্যক্তির স্বাভাবিক আচরণ নষ্ট হয়ে যায়। জুসের আড়ালে গাঁজা, ইয়াবা সেবন আরও ভয়াবহ। এতে মানুষের পরিপাকতন্ত্রের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা নষ্ট হতে পারে। ফলে হজমজনিত সমস্যা হতে পারে। লিভার সিরোসিস বা লিভারের জটিল রোগে আক্রান্ত হতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘রাজধানী থেকে প্রত্যন্ত গ্রামে যেখানে জুসের আড়ালে এসব মাদক কেনাবেচা হচ্ছে সেগুলো জনস্বার্থে বন্ধ করা জরুরি।’কালবেলা