শিরোনাম
পাহাড়ের মাঠে তারকা ফুটবলার তৈরি করছেন সুইহলামং মারমা মামলার আগে যেতে হবে লিগ্যাল এইডে,আজ থেকে রাঙ্গামাটিসহ বেশ কিছু জেলায় একযোগে এ কার্যক্রম শুরু হচ্ছে শিগগিরই গ্রিন সিগন্যাল পাচ্ছেন বিএনপি’র প্রার্থীরা যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুকধারীর হামলায় ৩ পুলিশ সদস্য নিহত ১ কাপ কফির দাম ৮৩ হাজার টাকা! বিশ্ব বাঁশ দিবস আজ,বাঁশ এখন বাণিজ্যিক চাষের উদ্ভিদ দেশে আট মাসে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত ১ হাজার ২০২ ১১ লাখ কোটি টাকা ঋণের বিপরীতে জামানত থাকা সম্পত্তির বড় অংশই ভুয়া রাঙ্গামাটির সাজেকে জীপ খাদে পরে নিহত-১ আহত ১২ রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদে দুদকের অভিযান,টেন্ডারবাজি-নিয়োগবাণিজ্যসহ নানা অভিযোগে

দুই বোন বাঁচিয়ে রেখেছেন যে ভাষা

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় বুধবার, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪
  • ২৫৯ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- মৌলভীবাজার চা বাগানে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী জাতিসত্তা খাড়িয়াদের বসবাস। তাদের মাতৃভাষার নাম খাড়িয়া। চা শিল্পাঞ্চলে কর্মরত অসংখ্য খাড়িয়া জনগোষ্ঠীর প্রাণের ভাষা ছিল খাড়িয়া। কিন্তু সময়ের গতিধারায় চা বাগান থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে ভাষাটি। বর্তমানে খাড়িয়া জনগোষ্ঠীর আপন দুই বোন ৮০ বছর বয়সী ভেরোনিকা কেরকেটা ও ৭৫ বছর বয়সী খ্রিস্টিনা কেরকেটা আদি খাড়িয়া ভাষায় কথা বলতে পারেন। জাত-পাত, সংস্কৃতি, ভাষায় বৈচিত্র্যপূর্ণ বাংলাদেশের একটি ভাষার শেষ প্রতিনিধি তারা। এই দুজনের মৃত্যু হলে বিলুপ্ত হয়ে যাবে ঐতিহ্যবাহী ভাষাটি।

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের রাজঘাট চা বাগানের বর্মাছড়ায় ভেরোনিকা কেরকেটা ও খ্রিস্টিনা কেরকেটা দুই বোন খাড়িয়া ভাষায় কথা বলতে পারেন। তাদের পরিবারের সদস্য ও খাড়িয়া সম্প্রদায়ের কোনো মানুষের ভাষাটি সম্পর্কে ন্যূনতম জ্ঞান নেই। তাদের মৃত্যুর সঙ্গে এ দেশের ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি থেকে হারিয়ে যাবে বহু প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী প্রকৃত ভাষা খাড়িয়া।

সরেজমিনে শ্রীমঙ্গল উপজেলার রাজঘাট ইউনিয়নের রাজঘাট চা বাগানে ঘুরে খাড়িয়া সম্প্রদায়ের লোকজনের দেখা মিললেও ভেরোনিকা কেরকেটা ও খ্রিস্টিনা কেরকেটা ছাড়া আর কোথাও প্রকৃত খাড়িয়া ভাষায় কথা বলার মতো কাউকে পাওয়া যায়নি। অনেক সন্ধান করে বর্মাছড়া ভেরোনিকা কেরকেটার দেখা হলে এসময় তিনি খাড়িয়া ভাষা ও বাংলায় বলেন, ‘আমাদের মা-বাবা ভারতের রাচি থেকে এখানকার চা বাগানে আসেন। এখানে আমাদের জন্ম হয়। ছোটবেলা থেকেই দেখেছি বাবা-মা খাড়িয়া ভাষা বলত। তাদের কাছ থেকে শেখা। বর্তমানে বাগানে অনেক ভাষার মিশ্রণে আমাদের সন্তানরা মাতৃভাষা বলতেও পারে না, এমনকি বুঝেও না। এই বাগানের মধ্যে আমরা দুই বোন খাড়িয়াতে কথা বলতে পারি। সুখ-দুঃখে আমরা আমাদের দুই বোনের মধ্যেই আমাদের ভাষায় কথা বলি। এতে আমাদের প্রাণ খুলে মনের ভাব প্রকাশ করি। পরিবারের অন্যরাসহ বাগানে কারও সঙ্গে আমরা দুই বোন প্রাণ খুলে মনের মতো করে কথা বলতে পারি না। এটাই আমাদের দুঃখ।’

সাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রভাষা বাংলা হলেও শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে খাসি, কোড়া, পাংখুয়া, খাড়িয়া, সৌরা, কোডা, মুন্ডারি, মালতো, কন্দ, খুমি, রেংমিতচা, খিয়াং, পাত্র ও লুসাই ভাষা সহ ৪৩টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ভাষার অস্তিত্ব রয়েছে। এসব ভাষাগুলো ব্যবহার করা লোকের সংখ্যা খুবই কম।

সরকারিভাবে ২০১৯ সালে তৈরি করা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর তালিকায় খাড়িয়াকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তাদের মাতৃভাষার নিজস্ব বর্ণমালা থাকার পরও শুধু পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে খাড়িয়া ভাষা হারানোর পথে।

খ্রিস্টিনা কেরকেটা বলেন, আমরা দুই বোন একই বাগানের পাশাপাশি সেকশনের কলোনিতে সপরিবারে বসবাস করি। এ ছাড়া আর কারও সঙ্গে খাড়িয়া ভাষায় খুব একটা আলাপচারিতা হয় না। এ কারণে খাড়িয়া ভাষাটি অনেকটা মৃত্যুর মুখে।

মাংরা বস্তির খাড়িয়া সম্প্রদায়ে জহরলাল ইন্দোয়ার বলেন, খাড়িয়া ভাষা ফার্সি ভাষা থেকে এসেছে। ভারতের রাচিতে খাড়িয়া ভাষার বহুল প্রচলিত। আমাদের পূর্বপুরুষ যারা রাচি থেকে এদেশে চা বাগানে আসেন, সে সময়ে এই ভাষার ব্যাপক প্রচলন ছিল। চা বাগানগুলোর মধ্যে বহু ভাষাভাষী মানুষের বসবাস।

লিজা ইন্দোয়ার, শ্রীমঙ্গল কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী সীমা ইন্দোয়ার বলেন, আমাদের মাতৃভাষা যে খাড়িয়া, তা বাপ-দাদার কাছে শুনেছি। কিন্তু শিখতে পারিনি। বাংলায় লেখাপড়া করি আর বাবা-কাকারাও বাংলা, দেশোয়ালি ও ভাষার সংমিশ্রণে এক ধরনের ভাষায় কথা বলে। যার কারণে আমরা আমাদের মাতৃভাষা এখন বলতে পারি না। এমনকি বুঝিও না। তবে মাতৃভাষা সংরক্ষণে যথাযথ কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ আবশ্যক বলে দাবি তাদের।

শ্রীমঙ্গলে রাজঘাট ইউপি চেয়ারম্যান বিজয় বুনার্জি বলেন, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের গবেষণালব্ধ তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে নিজস্ব ভাষার অস্তিত্ব রয়েছে ৪৩টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর। এর মধ্যে একটি ভাষা খাড়িয়া। তাই এটি সংরক্ষণে যথাযথ কর্তৃপক্ষের উদ্যোগের দাবি জানান।

মৌলভীবাজার সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ আব্দুল হালিম জানান, যেহেতু দুই নারী ছাড়া দেশে আর কেউ ভাষাটি জানেন না, বোঝেন না বা চর্চা করেন না; তাই সহজেই অনুমেয় যে, তাদের মৃত্যুর সঙ্গে এ দেশের ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি থেকে হারিয়ে যাবে বহু প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী ভাষা খাড়িয়া। কালবেলা

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions