রাঙ্গামাটি:- দুর্যোগময় মুহূর্তে যান চলাচল সচল রাখতে প্রায় সাড়ে তিনশ’ কোটি টাকা ব্যয়ে সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে রাঙ্গামাটির সড়ক ও জনপথ বিভাগ। ২০১৭ সালের ১৩ই জুন পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় পাহাড় ধসের ঘটনায় রাঙ্গামাটিতে ৫ সেনাসদস্যসহ ১২০ জনের প্রাণহানি, ২০১৮ সালের ১২ই জুন রাঙ্গামাটির নানিয়ারচরে ফের পাহাড় ধসে আরও ১১ জনের প্রাণহানির ঘটনার পর সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে সারা দেশ থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল রাঙ্গামাটি। এসব ঘটনায় বাস্তবতার প্রেক্ষিতে পাহাড়ের সড়ক যোগাযোগব্যবস্থা আধুনিকীকরণে নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে পর্বতবেষ্টিত রাঙ্গামাটির সর্বমোট ১৬৭টি স্পট নির্ধারণ করে প্রায় ৬ হাজার ৪০০ মিটার দৈর্ঘ্যের পাইলিংসহ রিটার্নিং ওয়াল নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে রাঙ্গামাটির সড়ক ও জনপথ বিভাগ কর্তৃৃপক্ষ।
স্থানীয় বাসিন্দা ও জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, এই উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ দ্রুততম সময়ে বাস্তবায়িত হয়ে গেলে স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবন মানোন্নয়নে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে। এদিকে, রাঙ্গামাটি একটি পর্যটন এলাকা, এই জেলার সার্বিক উন্নয়ন তথা পর্যটকদের আকর্ষণে তাদের নিরাপদ গমনাগমনে উন্নত সড়ক যোগাযোগব্যবস্থার কোনো বিকল্প নেই মন্তব্য করে পরিবহন মালিক সমিতি ও আবাসিক হোটেল সমিতির নেতা মঈন উদ্দিন সেলিম বলেন, রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের রাউজান পর্যন্ত চার লেনের রাস্তা ইতিমধ্যেই নির্মিত হয়ে গেছে। তার ধারাবাহিকতায় রাঙ্গামাটি পর্যন্ত চার লেনের রাস্তা নির্মাণ করা হলে এই অঞ্চলের সড়ক যোগাযোগব্যবস্থা আরও গতিশীল হয়ে নিরাপদ যাতায়াত বৃদ্ধি পাবে।
অপরদিকে, রাঙ্গামাটি একটি পিছিয়ে পড়া জেলা, এ জেলার যোগাযোগব্যবস্থা উন্নত করা ছাড়া সামনের দিকে যেতে পারবো না মন্তব্য করে রাঙ্গামাটি চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আব্দুল ওয়াদুদ বলেছেন, ২০১৭ সালের প্রাকৃতিক দুর্যোগে রাঙ্গামাটির সড়ক যোগাযোগব্যবস্থায় যে ধস নেমেছিল সেটিকে গুরুত্ব দিয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার বিশেষ মনোযোগ দিয়ে অত্রাঞ্চলের সড়ক যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নে ব্যাপক প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। যার ফলে ব্যবসায়ীরা লাভবান হচ্ছে। এই ক্ষেত্রে রাঙ্গামাটির অভ্যন্তরের উপজেলাগুলোর সড়কগুলোকে সংস্কারের মাধ্যমে টেকসই করে গড়ে তুললে অত্রাঞ্চলে উৎপাদিত সকল প্রকার পণ্য দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠানো যাবে। প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশ করতে গেলে প্রথমে স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট সোসাইটি, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট গভর্মেন্ট, স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে আমাদের যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন একটি অন্যতম উপদায়ক বলেও মন্তব্য করেছেন চেম্বার সভাপতি।
রাঙ্গামাটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আদনান ইবনে হাসান জানিয়েছেন, পাহাড়ের বৈচিত্র্যতাকে অক্ষুণ্ন রেখে নিরবচ্ছিন্ন সড়ক যোগাযোগব্যবস্থা নিশ্চিতে রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রামসহ জেলার ক্ষতিগ্রস্ত ৫টি সড়কের মধ্যে রাঙ্গামাটির অভ্যন্তরে, রাঙ্গামাটি-খাগড়াছড়ি সড়ক, রাঙ্গামাটি-বান্দরবান সড়ক, বাঙ্গালহালিয়া-রাজস্থলী সড়ক ও বগাছড়ি-নানিয়ারচর-লংগদু সড়কে প্রায় ১৬৭টি স্পট নির্ধারণ করে সে সকল সড়কগুলোকে টেকসই করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে সড়ক রক্ষায় রিটার্নিং ওয়াল, স্ট্রিল ব্রিজ ভেঙে গার্ডার ব্রিজ নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করছে রাঙ্গামাটির সড়ক বিভাগ। ইতিমধ্যেই প্রায় ২৫০ কোটি টাকার কাজ বাস্তবায়িত হয়ে গেছে এবং চলতি বছরের জুন মাসের মধ্যেই বাকি কাজগুলো সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন তিনি। মানবজমিন