শিরোনাম
‘চার মাসে সেনাবাহিনীর ১২৩ সদস্য হতাহত’ এবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার চাইবে পিলখানায় শহীদ পরিবারের সদস্যরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মন্ত্রণালয়ের ৯ নির্দেশনা রাঙ্গামাটি শহর থেকে উদ্ধারকৃত বন মুরগি কাপ্তাই ন্যাশনাল পার্কে অবমুক্ত বান্দরবানে মোটরসাইকেল চোর সিন্ডিকেটের হোতা রাহুল তঞ্চঙ্গ্যা গ্রেফতার রাঙ্গামাটিতে চট্টগ্রামে আইনজীবি হত্যার প্রতিবাদ মানববন্ধন বান্দরবানে নাশকতা মামলায় দুই চেয়ারম্যান কারাগারে বিচারপতি নিয়োগে কাউন্সিল গঠনের প্রস্তাব আইন মন্ত্রণালয়ে ছাপিয়ে ২২৫০০ কোটি টাকা ৬ ব্যাংককে দেওয়া হলো, রবিবার থেকে সংকট কাটছে আইনজীবী সাইফুল হত্যা ও চিন্ময় কৃষ্ণ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনার বিবৃতি

১৪ দলের ‘ভবিষ্যৎ’ নিয়ে যা বলছেন শরিক নেতারা

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ৯ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪
  • ২৬০ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৪ দলীয় জোট ২০ বছর ধরে সক্রিয় থাকলেও পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এই জোটের ভবিষ্যৎ কী, সেই প্রশ্ন ঘুরছে শরিক দলগুলোর নেতাদের মধ্যে। এ নিয়ে প্রকাশ্যে কেউ কোনও মন্তব্য না করলেও ভেতরে-ভেতরে আছে ক্ষোভ, হতাশা। জোটগত রাজনৈতিক তৎপরতা হ্রাস পাওয়ায় আওয়ামী লীগের সঙ্গে শরিক দলগুলোর মধ্যে দূরত্ব বেড়েছে। এই জোটের সক্রিয়তা এবং অর্জন কমতে থাকলেও ঐক্যবদ্ধ থাকার প্রয়োজনীয়তার আবেদন ফুরায়নি বলে মনে করেন শরিক নেতারা। তারা বলছেন, যা-ই হোক, জোট এখনও আছে, আগামীতেও থাকবে। তবে তৎপরতা বাড়ানো প্রয়োজন।

জানা যায়, বিএনপি-জামায়াতের চার দলীয় জোটকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলার জন্য ২০০৪ সালে বাম কিছু দলের সঙ্গে মিলে ১৪ দলীয় জোট গঠন করে আওয়ামী লীগ। ‘মুক্তিযুদ্ধ, গণতন্ত্র এবং অসাম্প্রদায়িক’ আদর্শের ভিত্তিতে গঠিত এই জোটের বয়স এখন (২০২৪ সাল) ২০ বছরে হয়েছে। এই দীর্ঘ সময়ে চারটি (২০০৮, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪) জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এরমধ্যে দুটিতে ১৪ দল জাতীয় পার্টির (জাপা) সঙ্গে মহাজোট গঠন করে জোটগতভাবে ভোট করেছে।

তথ্যমতে, ২০০৮ ও ২০১৮ সালে মহাজোট এবং ২০১৪ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনে ১৪ দলের সঙ্গে জোটগতভাবে ভোটে অংশ নেয় আওয়ামী লীগ। অর্থাৎ বিএনপি জোটের অংশ নেওয়া ২০০৮ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ছিল মহাজোট। আর বিএনপির বর্জন করা ২০১৪ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে অংশ নেয় ১৪ দলীয় জোট। এই চারটি নির্বাচনেই জাতীয় পার্টির (জাপা) সঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রকাশ্য বা অপ্রকাশ্য সমঝোতা হয়েছিল বলে জানা যায়। এর ফলে সবগুলো নির্বাচনে ‘সহজ জয়’ পেয়ে টানা চতুর্থ মেয়াদে রাষ্ট্রক্ষমতায় রয়েছে আওয়ামী লীগ, আর প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা।

১৪ দলের জোটগতভাবে অংশ নেওয়া গত চারটি নির্বাচনের মধ্যে নবম ও দশম জাতীয় নির্বাচনে শরিক দলগুলো থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন চার জন, দশম সংসদে সংরক্ষিত দুজনসহ ১৩ জন, একাদশ জাতীয় সংসদে আট জন। একাদশ সংসদ নির্বাচনে ১৪ দলের শরিকদের ১৬টি আসনে আওয়ামী লীগ ছাড় দিলেও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেয় ছয়টি। এর মধ্যে ১৪ দলের শরিক দলগুলো প্রার্থীরা জয় পেয়েছেন মাত্র দুটিতে। এ ছাড়া জোটসঙ্গী তরীকত ফেডারেশনের গেলো সংসদে একজন সদস্য থাকলেও এবার ছাড় দেয়নি আওয়ামী লীগ।

তবে জাতীয় পার্টিকে (জাপা) একাদশ সংসদ নির্বাচনে ২৬টি আসনে ছাড় দেওয়া হয়, সংখ্যাটা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও একই ছিল। এবার ২৬টি আসনের মধ্যে দলটির ১১ জন জয় পেয়েছেন। এবারের নির্বাচনে ১৪ দলের শরিক দলগুলো এবং জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা আওয়ামী লীগের ছাড় দেওয়া আসনগুলোতে দলটির স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কাছে হেরেছেন। এমন ফলাফলের আশঙ্কায় ভোটের আগেই ছাড় দেওয়া আসনগুলো থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সরিয়ে দেওয়ার জন্য আওয়ামী লীগের প্রতি অনুরোধ করে আসছিল শরিকরা। কিন্তু আওয়ামী লীগ তাতে রাজি না হয়ে ভোট উন্মুক্ত রেখে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জিতে আসার কথা বলে। সে কারণে নির্বাচনি ফলাফল নিয়ে ১৪ দলের শরিক দলগুলো ও জাতীয় পার্টি অসন্তুষ্ট বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট দলের নেতারা।

এ ছাড়া আওয়ামী লীগের আগের তিন মেয়াদের সরকারে ১৪ দলের শরিক জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় পার্টি (জেপি) ও সাম্যবাদী দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে মন্ত্রী করা হয়েছিল। এমনকি জাতীয় পার্টিরও (জাপা) কয়েকজনকে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী করা হয়েছিল। কিন্তু এবারের মন্ত্রিসভায় এসব দল থেকে কেউই এখন পর্যন্ত মন্ত্রিত্ব পাননি। এই সরকারের সময়ে পরবর্তীতে মন্ত্রিত্ব পাওয়ার আশা করলেও সেই সম্ভাবনা খুবই কম বলে মনে করেন জোটের কয়েকজন শীর্ষ নেতা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর গত ৫ বছরে ১৪ দলীয় জোটের বৈঠক হয়েছে দেড় ডজনের মতো। এসব বৈঠকের সিংহভাগই হয়েছে জোটের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমুর বাসায়। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ সভাপতি ও জোটনেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে মাত্র দুটি বৈঠক হয়েছে। জোটগত কর্মসূচির ক্ষেত্রে বর্তমান সরকারের শুরুর দিকে তেমন কোনও কর্মসূচি পালন করা হয়নি। তবে সরকারের মেয়াদের শেষ দিকে এসে বেশ কয়েকটি সমাবেশ হয়েছে ১৪ দলের ব্যানারে। এর মধ্যে বেশি সমাবেশ ছিল শোকের মাস আগস্টে। এরপর আর কোনও কর্মসূচি পালন করতে দেখা যায়নি ১৪ দলকে।

যা বলছেন শরিক নেতারা

১৪ দলের চারটি শরিক দলের শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন নেতা বলেন, সবশেষ নির্বাচনের আগে জোটের রাজনৈতিক তৎপরতা কমিয়ে দেওয়া, নির্বাচনে আগের চেয়ে শরিকদের আসন ছাড় কম পাওয়া, ছাড় দেওয়া আসনেও আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকা, নতুন সরকারের মন্ত্রিসভায় স্থান না পাওয়া নিয়ে ক্ষোভ ও হতাশা রয়েছে। এ নিয়ে কথা বলতে জোটের বৈঠকের জন্য তারা অপেক্ষা করছেন এবং শিগগিরই একটি বৈঠক হবে বলেও আশা করছেন তারা। তবে বৈঠকের বিষয়ে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এখনও কোনও সাড়া মেলেনি।

শরিক দলগুলোর শীর্ষ নেতারা জানান, ১৪ দল আদর্শিক জোট হওয়ায় জাতীয় ও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কিন্তু আসন সমঝোতা কাঙ্ক্ষিত ও সম্মানজনক না হওয়ায় হতাশা, ক্ষুব্ধ ও ক্রুদ্ধ হয়েছেন নেতারা। ছাড় দেওয়া আসনে নৌকায় ভোট করার পরও আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকা তাদের বিব্রত করেছে। নির্বাচন-পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলায় আওয়ামী লীগের শরিকদের প্রয়োজন হবে বলেও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন তারা।

১৪ দলের শরিক দলগুলোর সঙ্গে আওয়ামী লীগের যোগাযোগ এবং জোটগত রাজনৈতিক তৎপরতা সাম্প্রতিক সময়ে আগের মতো আছে কিনা জানতে চাওয়া হয় ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের কাছে। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আগের মতো নেই, নেই।’

জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘১৪ দলের দীর্ঘ যাত্রায় বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বৈষয়িক বিষয় নিয়ে প্লাস-মাইনাস কম-বেশি হয়েছে আরকি। সেটা নিয়ে ১৪ দলে রাজনৈতিক কোনও বিভ্রান্তি নেই, সবাই একমত আছে।’

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শরিক দলগুলোকে আসন ছাড়ের বিষয়ে জানতে চাইলে রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘আগের মতো এবার দেওয়া হয়নি।’

আগের সংসদের এমপি হলেও এবার ছাড় না পাওয়া তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারি বলেন, ‘আগের মতো আসন ছাড় না পাওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের ব্যর্থতাও আছে। শরিক দলগুলো নেতারা নিজেরা বসে এ ব্যাপারে ঐক্যবদ্ধভাবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি।’

জাতীয় নির্বাচনের পর মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সঙ্গে কোনও ধরনের যোগাযোগ হয়েছে কিনা, জানতে চাইলে মেনন বলেন, ‘না, হয়নি।’ হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘নির্বাচন হয়েছে এক মাসও হয়নি। এরই মধ্যে সমন্বয় সভা করার জন্য চিন্তা করছি। যেকোনও সময় প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে বসবেন। সুতরাং সবার সঙ্গেই পারস্পরিক যোগাযোগ অব্যাহত আছে।’ নজিবুল বশর বলেন, ‘আমার সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী তারিখটা জানালে বৈঠক হবে।’

এমন প্রেক্ষাপটে ১৪ দলের ভবিষ্যৎ কী— জানতে চাইলে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি বলেন, ‘এখনও আমরা আলোচনা করছি, দেখা যাক। এর চেয়ে বেশি কিছু বলা যাবে না।’ জাসদ সভাপতি বলেন, ’১৪ দল এখন পর্যন্ত পলিটিক্যালি বহাল আছে। ১৪ দল সাম্প্রতিককালে বৈঠকে বসবে এবং প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে রাজনৈতিক বিস্তারিত আলাপ-আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করবে। ১৪ দলের ভবিষ্যৎ ঠিক আছে, আগের মতোই আছে…।

১৪ দলের অন্তত দুটি শরিক দলের নেতা বলেন, বিএনএফ, বিএনএমের মতো দলকে ‘ভাড়া করে’ নির্বাচনে এনে যে লাভ নেই, সেটা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্পষ্ট হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগকে বুঝতে হবে, ১৪ দল তাদের দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত ও আদর্শিক বন্ধু। এই জোটের শরিকদের যথাযথ মূল্যায়ন করা প্রয়োজন। সামনে রাজনৈতিক পরিস্থিতি কোন দিকে যায়, সেটি মাথায় রেখেই বিষয়টা আওয়ামী লীগের ভাবা উচিত।

জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ১৪ দলীয় জোটকে আরও সক্রিয় করা উচিত বলে মনে করেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ও জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু। জাসদ সভাপতি বলেন, ‘এই পরিস্থিতিতে ভূমিকা রাখতে হলে জোটকে আরও শক্তিশালী করতে হবে।’

১৪ দলীয় জোটের সমন্বয়ক ও মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘১৪ দলের বৈঠকের বিষয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। জাতীয় নির্বাচন শেষ হলো মাসখানেক হলো, আস্তে-ধীরে হবে। ১৪ দলীয় জোট আগের মতোই শক্তিশালী আছে, থাকবে।’বাংলা ট্রিবিউন

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions