ডেস্ক রির্পোট:- ৯৬০ এর দশকে খরস্রোতা কর্ণফুলী নদীতে বাঁধ দিয়ে গড়ে তোলা হয় কাপ্তাইয়ের কর্ণফুলী জলবিদ্যুৎকেন্দ্র। যার ফলে বিশাল এলাকাজুড়ে সৃষ্টি হয় ৩৫৬ বর্গমাইল আয়তনের সুবিশাল কৃত্রিম কাপ্তাই লেক।
৭২৫ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই লেককে ঘিরে কয়েক হাজার কোটি টাকার অর্থনীতি আর ৬ লাখ মানুষের বৈচিত্র্যময় জীবনব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। এখানকার হাট-বাজার, ফসল উৎপাদন, যাতায়াত আর পর্যটন নিয়ে গড়ে উঠেছে অর্থনীতির ভিত।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সবচেয়ে বড় এই লেক প্রায় ৬ হাজার বর্গকিলোমিটারের রাঙ্গামাটি জেলাকে ঘিরে রেখেছে। লেকের মাঝে জেগে থাকা পাহাড় যেন সমুদ্রের মাঝে ছোট দ্বীপ। দ্বীপের মাঝেই বসতঘরসহ জীবনযাপনের নানা আয়োজন। চলাফেরা ও মাছ ধরায় নৌকাই ভরসা।
জেলার ১০ উপজেলা ছাড়াও পাশের জেলা খাগড়াছড়ি হয়ে ভারতের মিজোরাম সীমান্ত পর্যন্ত নৌকা যায় এ লেক হয়ে। দিনের বেলা ছোট-বড় লঞ্চ যাত্রী নিয়ে ছেড়ে যায়। এখন যোগ হয়েছে স্পিডবোটও। ভোগ্যপণ্য থেকে শুরু করে, উৎপাদিত ফসল, মাছ, কাঠ, বাঁশ, পাহাড়ে তৈরি পণ্য সবই আনা নেওয়া হয় বোটে। বছরে প্রায় ১০০ কোটি টাকার বাণিজ্য হয় নৌ-পথে।
মাছ আহরণও এ জেলার মানুষের জীবিকার অন্যতম উৎস। চাপিলা ও কাচকি মাছের জন্য বিখ্যাত হলেও অন্যান্য মাছও ধরা পড়ে। প্রায় ৫০ হাজার মানুষ জীবিকা নির্বাহের জন্য মাছ ধরার ওপর নির্ভরশীল। দেখা যায় জুমের উৎপাদিত চাল, ডাল, ফল আর পাহাড়িদের তৈরি নিজস্ব পণ্য।
বছরে দেড় হাজার কোটি টাকার প্রায় ৬ লাখ টন ফল উৎপাদিত হয় পাহাড়ে। পর্যটন মৌসুমে ব্যবসা হয় জমজমাট। তাই গড়ে উঠেছে অর্ধশত বিনোদন কেন্দ্র। আছে শতাধিক রেস্টুরেন্ট, হোটেল। এছাড়া কয়েকশ পর্যটন বোট চলাচল করে লেকে।
এক সময় এ লেকে রুই, কাতলা, সরপুঁটি, ঘাউরা, বাঘাইড়, মহাশোল, মধু পাবদা, পোয়া, ফাইস্যা মাছের মতো দেশী-বিদেশী বড় মাছ পাওয়া যেত। এখন ছোট প্রজাতির মাছই এখন বেশি ধরা পড়ছে। সারা দেশে কাপ্তাই হ্রদের মাছের বেশ চাহিদা রয়েছে।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএফআরআই) তথ্য অনুযায়ী, কাপ্তাই হ্রদ দুই প্রজাতির চিংড়িসহ মোট ৭৫ প্রজাতির মাছের আবাসস্থল। এর মধ্যে ৬৭টি প্রজাতির মাছ দেশিয় এবং ৮ প্রজাতির মাছ বিদেশি।
জেলেদের মতে, কাপ্তাই হ্রদের পাঁচটি চ্যানেলে মাছ উৎপাদন হলেও বর্তমানে লংগদুর কাট্টলী-মাইনি চ্যানেলে মাছের উৎপাদন হচ্ছে। অন্য চারটি চ্যানেলে মাছের উৎপাদন তুলনামূলকভাবে কম। বর্তমানে চেঙ্গী নদী আর রাইংখ্যং নদীর চ্যানেলে প্রজনন ক্ষেত্রগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। নদীর তলদেশ ভরাট ও নদীর প্রবাহ কমে যাওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
কাপ্তাই হ্রদ এখন জনবসতিতে পরিণত হয়েছে। দখলের হিড়িক চলছে বছরের পর বছর। তীরবর্তী এলাকায় দখলের প্রতিযোগিতা চলছে। এতে রয়েছেন প্রভাবশালীসহ নানা স্তরের মানুষ। প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুমে হ্রদের পানি শুকিয়ে গেলে দখলের প্রতিযোগিতা বাড়ে। হ্রদের পাড় এলাকা দখল করে নির্মাণ করা হচ্ছে অসংখ্য অবৈধ ও অপরিকল্পিত স্থাপনা। দখলের ফলে সংকীর্ণ হওয়ার হুমকিতে কাপ্তাই হ্রদ। প্রতিদিন হ্রদে ফেলা হচ্ছে ময়লা, আবর্জনা ও বর্জ্য।
হ্রদসংলগ্ন বসবাসকারীসহ নৌকায় যাতায়াতকারীরা এসব বর্জ্য নিক্ষেপ করছেন। ফলে দিনদিন দূষিত হচ্ছে এ হ্রদের পানি ও পরিবেশ। এছাড়া প্রতিনিয়ত জমছে পাহাড়ি ঢলে নামা পলি, লতাগুল্ম, বাঁশগাছের ঢালপালাসহ নানা আবর্জনার জট। এসব বর্জ্য ও পলি জমে ভরাট হয়ে যাচ্ছে হ্রদের তলদেশ। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে নৌ চলাচল ও মৎস্য উৎপাদন। এ হ্রদের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বাংলানিউজ