ডেস্ক রিরোট:-২০১৪ সালের টোল নীতিমালা সংশোধন করে নতুন একটি টোল নীতিমালার খসড়া প্রস্তুত করেছে সরকার। ‘টোল নীতিমালা ২০২৩ (সংশোধিত)’-এর খসড়ায় বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হয়েছে টোলহার নির্ধারণ পদ্ধতিতে। পুরনো নীতিমালায় ‘ভিত্তি টোল’ পরিবর্তন ছাড়া টোলহার বাড়ানোর সুযোগ ছিল না। নতুন নীতিমালায় টোলহার নির্ধারণের ক্ষেত্রে সংযুক্ত করা হয়েছে পরিবহন ও যোগাযোগ খাতের ভোক্তা মূল্যসূচককে। এর ফলে ‘ভিত্তি টোলে’ কোনো পরিবর্তন ছাড়াই প্রতি বছর বাড়বে টোলহার। এজন্য খসড়া নীতিমালায় ‘টোলহার নির্ধারণ’ শব্দগুলোকে ‘টোলহার সমন্বয়’ দিয়ে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে।
নতুন এ টোল নীতিমালা কেবল সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের আওতাধীন মহাসড়ক, এক্সপ্রেসওয়ে ও সেতুর জন্য প্রযোজ্য। পদ্মা সেতু, বঙ্গবন্ধু সেতু, মুক্তারপুর সেতু, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল ও ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এ নীতিমালার আওতায় পড়বে না। এসব অবকাঠামোর টোলহার নির্ধারণ ও পরিবর্তন হয় সরকারের সেতু বিভাগের মাধ্যমে। এছাড়া খসড়া টোল নীতিমালায় জাতীয়, জেলা ও আঞ্চলিক মহাসড়কের সংজ্ঞায়ও কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়েছে। নতুন করে টোল সড়ক হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে সীমান্ত মহাসড়ককে।
খসড়া নীতিমালাটি কার্যকর হলে টোলহারে ২০১৪ সালের পর থেকে ভিত্তি টোলের সঙ্গে ভোক্তা মূল্যসূচক সমন্বয় করা হবে। ফলে নীতিমালা কার্যকরের সঙ্গে সঙ্গে এক ধাক্কায় অনেকটা বাড়বে টোলহার। পাশাপাশি ভোক্তা মূল্যসূচকের ভিত্তিতে বছর বছর বাড়বে সড়ক-সেতুর টোল।
খসড়া নীতিমালায় ‘টোলহার নির্ধারণের সূত্র’ বাদ দিয়ে ‘টোলহার সমন্বয়ের সূত্র’ সংযোজন করা হয়েছে। নতুন সূত্রটি হলো ‘সমন্বয়কৃত টোল = ভিত্তি টোল + (বর্তমান অর্থবছরের ভোক্তা মূল্যসূচক – ভিত্তি অর্থবছরের ভোক্তা মূল্যসূচক) ÷ ভিত্তি অর্থবছরের ভোক্তা মূল্যসূচক × ভিত্তি টোল × দশমিক ৩’। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, টোলহার সমন্বয়ের ক্ষেত্রে ২০১৪ সালকে ভিত্তি অর্থবছরের ভোক্তা মূল্যসূচক হিসেবে বিবেচনা করা হবে। আর বিদ্যমান অর্থবছরের ভোক্তা মূল্যসূচক হিসেবে ধরা হবে সর্বশেষ প্রকাশিত ভোক্তা মূল্যসূচককে।
খসড়া নীতিমালাটি প্রণয়ন করা হয়েছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের টোল ও এক্সেল শাখার তত্ত্বাবধানে। নীতিমালা সম্পর্কে জানতে চাইলে এ বিভাগের উপসচিব জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘খসড়া টোল নীতিমালাটি এরই মধ্যে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। সাধারণ মানুষ যেন এ নীতিমালার ওপর মতামত দিতে পারে, সেই ব্যবস্থাও ওয়েবসাইটে রাখা হয়েছে। মতামত দেয়ার সময়সীমা আগামী ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।’
নতুন নীতিমালা অনুমোদনের পর টোলহার বাড়বে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘টোলহার কী হবে, কীভাবে তা সমন্বয় করা হবে নীতিমালায় সেসব বিষয় স্পষ্ট করে দেয়া আছে।’
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে, ২০১৪ সালে বাংলাদেশে পরিবহন ও যোগাযোগ খাতের ভোক্তা মূল্যসূচকের মান ছিল ১৮১ দশমিক ৭৮। বিবিএস সর্বশেষ ২০২১-২২ অর্থবছরের পূর্ণাঙ্গ ভোক্তা মূল্যসূচক প্রকাশ করেছে। ওই অর্থবছর পরিবহন ও যোগাযোগ খাতের ভোক্তা মূল্যসূচকের মান ছিল ৩১৩।
বিদ্যমান নীতিমালায় গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কের ভিত্তি টোল নির্ধারণ করা আছে কিলোমিটারপ্রতি ২ টাকা। একইভাবে জাতীয় মহাসড়কে জন্য কিলোমিটারপ্রতি ১ টাকা ৫০ পয়সা, আঞ্চলিক মহাসড়কে কিলোমিটারপ্রতি ১ টাকা, জেলা মহাসড়কে ৫০ পয়সা ভিত্তি টোল নির্ধারণ করা আছে। নীতিমালার খসড়া সংশোধনীতে এর সঙ্গে নতুন করে সংযোজন করা হয়েছে সীমান্ত সড়ক, যার ভিত্তি টোল নির্ধারণ করা হয়েছে কিলোমিটারপ্রতি ১ টাকা। এর বাইরে এক্সপ্রেসওয়েকে রাখা হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়ক শ্রেণীতে।
পরিবর্তিত নতুন নীতিমালার টোলহার সমন্বয়ের সূত্র প্রয়োগ করে দেখা গেছে, এটি কার্যকর হলে পরিবহন ও যোগাযোগ খাতের সর্বশেষ প্রকাশিত ভোক্তা মূল্যসূচকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী এক্সপ্রেসওয়ে/গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় মহাসড়কের ভিত্তি টোল হবে প্রতি কিলোমিটারে ২ টাকা ৪৩ পয়সা। একইভাবে জাতীয় মহাসড়কে কিলোমিটারপ্রতি ১ টাকা ৮২ পয়সা, আঞ্চলিক ও সীমান্ত মহাসড়কে কিলোমিটারপ্রতি ১ টাকা ২২ পয়সা ও জেলা মহাসড়কের কিলোমিটারপ্রতি ভিত্তি টোল হবে ৬১ পয়সা।
সড়কের পাশাপাশি সেতুর ভিত্তি টোলও আলাদাভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে। খসড়া নীতিমালায় এক্সপ্রেসওয়ে/গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কে বিদ্যমান সেতুর ভিত্তি টোল নির্ধারণ করা হয়েছে ৪০০ টাকা। একইভাবে জাতীয় মহাসড়কে বিদ্যমান সেতুর ভিত্তি টোল ৩০০ টাকা, আঞ্চলিক মহাসড়কে সেতুর ভিত্তি টোল ২০০, সীমান্ত মহাসড়কে বিদ্যমান সেতুর ভিত্তি টোল ২০০ ও জেলা মহাসড়কে বিদ্যমান সেতুর ভিত্তি টোল ১০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। নতুন নীতিমালা অনুযায়ী, এ ভিত্তি টোল পরিবহন ও যোগাযোগ খাতের ভোক্তা মূল্যসূচকের ভিত্তিতে প্রতি বছরই পরিবর্তন হবে। এক্ষেত্রেও মহাসড়কের মতো একই সূত্র প্রয়োগ করা হবে।
সামগ্রিকভাবে টোল নীতিমালা সম্পর্কে জানতে চাইলে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নুরী বলেন, ‘বাস্তবতার নিরিখেই ২০১৪ সালের টোল নীতিমালাটি হালনাগাদের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। নীতিমালাটি এখনো খসড়া পর্যায়ে রয়েছে। আমরা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি।’
তিনি বলেন, ‘যেকোনো অবকাঠামো নির্মাণের পর সেটির রক্ষণাবেক্ষণের দরকার হয়। এতে প্রচুর টাকা ব্যয় হয়। অন্যদিকে যোগাযোগ খাতের এসব অবকাঠামো দিয়ে মানুষ সুবিধাও ভোগ করে। সড়ক-মহাসড়ক উন্নত হলে সেগুলো থেকে টোল আদায় বিশ্বজুড়েই স্বীকৃত একটি ব্যবস্থা। আমাদের দেশেও এ সংস্কৃতি তৈরির চেষ্টা আমরা করছি। এখন থেকে যেসব নতুন হবে, সেতু হবে সেগুলো টোলের আওতায় আনার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। অবশ্যই আমরা টোলের হারটি সহনশীল মাত্রায় রাখতে চাই, যেন মানুষের কোনো কষ্ট না হয়।’বণিক বার্তা