চট্টগ্রাম:- বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামে কতটি অবৈধ হাসপাতাল-ল্যাব ও ব্লাড ব্যাংক আছে, তার কোনো তালিকা নেই স্বাস্থ্য বিভাগে। অথচ প্রতিটি অভিযানেই মিলছে অবৈধ স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের ওপর নির্ভরশীল পুরো বিভাগের রোগীরা। অথচ এখানকার নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রটিতে জনবল সংকট চরমে। প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডেই শয্যা সংকটের কারণে ফ্লোর-বারান্দায় স্পর্শকাতর রোগীদেরও সেবা নিতে হয়। চট্টগ্রামে দ্বিতীয় বৃহত্তম সরকারি জেনারেল হাসপাতালে অবকাঠামো, জনবল ও শয্যা আছে। কিন্তু আশানুরূপ সেবা না থাকায় শয্যাগুলো প্রায়ই ফাঁকা।
এভাবেই বেহাল অবস্থা চট্টগ্রামে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর। ভঙ্গুর স্বাস্থ্য খাত চলছে খুঁড়িয়ে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোর অবস্থা আরও নাজুক। ফলে অন্তহীন ভোগান্তি অসহায়, গরিব ও খেটে খাওয়া মানুষদের। এমন অবস্থায় মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গ্রহণের পর আজ প্রথমবারের মতো দুই দিনের সফরে চট্টগ্রাম আসবেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন। বিকাল তিনটায় সার্কিট হাউসে তিনি সিভিল সার্জন, তত্ত্বাবধায়ক ও উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তাদের সঙ্গে ও সন্ধ্যা ৭টায় বিএমএ ও স্বাচিপ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। আগামীকাল সকালে চমেক হাসপাতালের চলমান প্রকল্প পরিদর্শন ও ৩২ শয্যার আইসিইউ উদ্বোধন, এরপর চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম-রাঙ্গামাটি-কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের শিক্ষকদের সঙ্গে, সাড়ে ১১টায় চমেক হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করার কথা।
জনস্বাস্থ্য অধিকার রক্ষা আন্দোলনের সদস্য সচিব ডা. সুশান্ত বড়ুয়া বলেন, চিকিৎসায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটা মান আছে। ১০ জন রোগীর জন্য একজন চিকিৎসক, একজন চিকিৎসকের জন্য তিন নার্স এবং একজন রোগীর জন্য একটা বেড। সেবায় এই মৌলিক অনুপাতের সমাধান এখন সময়ের দাবি। এটি শতভাগ না হোক, কিছুটা হলেও পূরণ হলে মানসম্পন্ন চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব। অন্যথায় কাক্সিক্ষত মানসম্পন্ন চিকিৎসা সম্ভব নয়। এখন রোগীরা বাধ্য হয়ে অমানবিক পরিবেশে চিকিৎসা নিচ্ছে। স্বাস্থ্যসেবায় দরকার সঠিক ও পরিকল্পিত ব্যবস্থাপনা। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছি জেনারেল হাসপাতাল কলেজে উন্নীত করার। এটি হলে চমেক হাসপাতালে চাপ কমত। এখানে রোগীর চাপ কমলে সেবার মানও বাড়বে। অথচ শতবর্ষী জেনারেল হাসপাতালে কার্যকর দৃষ্টি না দেওয়ায় এটি এখন প্রায় রোগীশূন্য। একই সঙ্গে যেসব রোগের চিকিৎসায় ঢাকায় দৌড়াতে হয়, সেগুলো চট্টগ্রামে ব্যবস্থা করাও এখন জরুরি।
সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, স্বাস্থ্য অধিদফতরের নির্দেশনায় চট্টগ্রামেও গত ১৭ জানুয়ারি থেকে লাইসেন্সবিহীন বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। গত এক সপ্তাহে চট্টগ্রাম নগরে অনুমোদনহীন ১০টি হাসপাতাল-ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও থেরাপি সেন্টার বন্ধ করা হয়। অভিযানে বের হলেই মিলছে অবৈধ হাসপাতাল-ক্লিনিক ও ল্যাব। অন্যদিকে, উপজেলা পর্যায়ে মিলছে না কাক্সিক্ষত স্বাস্থ্যসেবা। ফলে উপজেলা থেকে রোগী সরাসরি চলে আসছে চমেক হাসপাতালে। কিন্তু চমেক হাসপাতালে এত রোগীর চাপ নেওয়ার মতো ব্যবস্থা নেই। ২ হাজার ২০০ শয্যার হাসপাতালে প্রতিনিয়ত রোগী ভর্তি থাকে ৩ হাজারের বেশি। ফলে প্রতিদিনই ওয়ার্ডের বাইরের বারান্দা, মেঝেতে চিকিৎসা নিতে হয়। গতকাল সকাল থেকে দুপুরে হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে দেখা যায়, ওয়ার্ডের বাইরে রেখেই চিকিৎসা নিচ্ছেন রোগীরা। লিভার ও পরিপাকতন্ত্র বিভাগের সামনের বারান্দায় ছিল না তিল ধারণের জায়গা। সেখানে রোগীরা হাতে স্যালাইন পুশ করা অবস্থায় শুয়ে আছেন।