ডেস্ক রিরোটপ:- শান্তিচুক্তিতে সাক্ষরকারী পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি পুণরায় সশস্ত্র যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ লক্ষে প্রশিক্ষণ গ্রহণের উদ্দেশ্যে ভারতের মিজোরাম রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় বেশ কয়েকটি সশস্ত্র প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু করেছে বলে বিভিন্ন ভারতীয় মিডিয়ায় প্রকাশিত রিপোর্টে দাবী করা হয়েছে।
২৫ জানুয়ারি ভারতের বিখ্যাত ইন্ডিয়া টুডে পত্রিকার অনলাইন ভার্সনে ‘Chakma rebels from Bangladesh training in Mizoram: Former MNF armed wing’ শিরোনামে প্রকাশিত এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্টের (এমএনএফ) একটি প্রাক্তন সশস্ত্র শাখা দাবি করেছে যে বাংলাদেশের চাকমা বিদ্রোহীরা মিজোরামে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে।
মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্ট(এমএনএফ) মিজোরামের একটি সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী যারা দীর্ঘদিন বিচ্ছিন্নতাবাদী দাবী নিয়ে সশস্ত্র আন্দোলন করেছে। বর্তমানে তারা ভারত সরকারের সাথে একটি শান্তিচুক্তির আওতায় রয়েছে। শান্তিচুক্তিকালে সদস্যদের কল্যাণের জন্য তারা পিএএমআরএ(PAMRA) নামে একটি সংগঠন করে তুলেছে।
পিস অ্যাকর্ড এমএনএফ রিটার্নিজ অ্যাসোসিয়েশন (পামরা) অনুসারে, বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের চাকমা বিদ্রোহীরা বর্তমানে মিজোরামের লুংলেই জেলা এবং মামিত জেলায় সামরিক প্রশিক্ষণ নিচ্ছে।
বিদ্রোহী দলটি সন্তু লারমার নেতৃত্বে জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) নামেও পরিচিত।
জানা গেছে, প্রশিক্ষণগুলি উত্তর-পূর্ব রাজ্যের দুটি জেলা- লুংলেই এবং মামিত জেলায় পরিচালিত হচ্ছে।
এছাড়াও লুংলেই এলাকার প্রশিক্ষণ শিবিরগুলি ছয়টি স্থানে স্থাপন করা হয়েছে। সেগুলো হলো- সাল্মস, তারা বন্যা, চুমোচুমি, মালছড়ি (জেএসএস শান্তিবাহিনীর ক্যাডারদের আবাসিক এলাকা), ভালুক্যাছড়ি এবং আন্দারমানিক গ্রাম।
এদিকে, মামিত জেলায় বর্তমানে দুটি সক্রিয় ক্যাম্প রয়েছে। এর একটি হল সিলসুরি গ্রামে। যেখানে কোম্পানি কমান্ডার হিসেবে আলো চাকমা এবং কমান্ডার বিনন্দ চাকমা দায়িত্ব পালন করছেন।
PAMRA-র আশঙ্কা, সশস্ত্র জঙ্গি গোষ্ঠীগুলির দ্বারা এই ধরনের প্রশিক্ষণ মিজোরাম এবং এর বাসিন্দাদের নিরাপত্তার জন্য গুরুতর প্রভাব ফেলতে পারে এবং তাই তারা রাজ্য সরকারকে প্রশিক্ষণ বন্ধ করার এবং জঙ্গিদের ফেরত পাঠানোর জন্য অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছে।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে যে, রাজ্য সরকার অবিলম্বে ব্যবস্থা না নিলে PAMRA এই প্রশিক্ষণ শিবিরগুলির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।
PAMRA হল প্রাক্তন সশস্ত্র গোষ্ঠী যা ভারতীয় ইউনিয়ন থেকে রাজ্যের বিচ্ছিন্নতার জন্য লড়াই করছিল এবং ১৯৮৬ সালে স্বাক্ষরিত শান্তি চুক্তির পরে তারা তাদের অস্ত্র ছেড়ে দিয়েছিল। পরে সংগঠনটি তার সদস্যদের সুবিধার জন্য পিস অ্যাকর্ড MNF রিটার্নিজ অ্যাসোসিয়েশন (PAMRA) তৈরি করেছিল।
এদিকে একই বিষয়ে মিজোরাম থেকে প্রকাশিত ‘ডিজিটাল নিউজ ডেইলি মিজোরাম’ নামের একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালে ‘চাকমা জেএসএস সন্ত্রাসীরা মিজোরামে ট্রেনিং করছে’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে।
মিজো ভাষায় প্রকাশিত এই রিপোর্টে বলা হয়েছে, সম্প্রতি ভারতের মিজোরাম রাজ্যে বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের চাকমা জনগোষ্ঠীর রাজনৈতিক সংগঠন জেএসএস-এর সশস্ত্র শাখা প্রশিক্ষণ নিচ্ছে বলে নিশ্চিত করেছে মিজোরামের গোয়েন্দা সংস্থা।
এ ছাড়াও পামরার একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি পার্বত্যনিউজের হাতে এসেছে। উক্ত নিউজ ও প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে দাবী করা হয়েছে, ১৯৯৭ সালে শান্তিচুক্তির মাধ্যমে আত্মসমর্পণ করা চাকমা জনগোষ্ঠীর রাজনৈতিক সংগঠন সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস)-এর সশস্ত্র শাখা প্রশিক্ষণ নিচ্ছে বলে সরকারকে জানিয়েছে মিজোরামের গোয়েন্দা সংস্থাসমূহ। এ নিয়ে জোরালো প্রতিবাদ জানিয়েছে, পামরা সংগঠন তথা পীস একর্ড এমএনএফ রিটার্নিস’ এসোসিয়েশন।
গোয়েন্দা সংস্থাসমূহের রিপোর্টে বলা হয়েছে, ইদানিং জেএসএস সন্ত্রাসীরা গোপনে মিজোরামে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। আর এ প্রশিক্ষণের পর জেএসএস বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধসহ ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ পরিচালনা করবে। এই রাষ্ট্রবিরোধী তথ্যটি পাওয়ার পর মিজোরাম সরকারসহ মিজৌ এনজিও সংস্থাসমূহ রাজ্যের অভ্যন্তরে চাকমা বাহিনীর তৎপরতার বিরুদ্ধে সকল কর্মকাণ্ড বন্ধের জন্যে উদ্যোগ গ্রহণ করছে।
মিজোরাম গোয়েন্দা সংস্থা নিশ্চিত করেছে, যেসব এলাকায় জেএসএস সন্ত্রাসীরা ট্রেনিং নিচ্ছে সেসব এলাকার নাম হলো: লুলেই জেলার সালমুরে, তারাবান, চুমচুমি, মালছড়ি (প্রশিক্ষণের সাথে জড়িত জেএসএসদের ফ্যামিলি কোয়ার্টাস), ভালুক্যাছড়ি ও আন্দারমানিক।
অন্যদিকে মামিট জেলার প্রশিক্ষণ ক্যাম্পগুলো সিলসুরি, এখানে কোম্পানি কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে আলো চাকমা এবং আমছড়ি, এখানে কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে বিনেন্দ চাকমা।
এসব স্থানগুলোতে জেএসএস সন্ত্রাসীদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। আর পার্বত্য চট্টগ্রামের আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান সন্তু লারমা, লশেল ডেভিড বম, উষাতন তালুকদার এবং জেএসএস সন্ত্রাসী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ প্রত্যক্ষভাবে নির্দেশনা দেয়। গোয়েন্দা সংস্থার মতে, জেএসএস সন্ত্রাসী সংগঠন তাদের আঞ্চলিক পরিষদের অর্থ (সরকারি প্রোজেক্টের টাকা) দিয়ে অস্ত্রসহ সামরিক সরঞ্জামাদি ক্রয় করে আসছে। মিজোরাম রাজ্যে এই সামরিক প্রশিক্ষণের মত ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের জন্যে মিজোরামের সকল এনজিও সংস্থা প্রতিবাদ জানিয়েছে।
তবে এই রিপোর্টের ব্যাপারে জেএসএসের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। পার্ত্য নিউজ ও ইন্ডিয়া টুডে’র রিপোর্ট