ডেস্ক রিরোট:- দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর মন্ত্রিসভা গঠনে চমক দেখিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে ঠাঁই হয়নি অনেক প্রভাবশালী মন্ত্রীর। নবীন-প্রবীণের সমন্বয়ে গঠন করেছেন ৩৭ সদস্যের নতুন মন্ত্রিসভা। মন্ত্রিসভায় চমকের পর সংসদীয় স্থায়ী কমিটিগুলোতেও অপেক্ষা করছে চমক। এবার জাতীয় সংসদের মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটিগুলোর সভাপতিসহ বিভিন্ন পদে পরিবর্তন আসবে। সংসদীয় স্থায়ী কমিটিগুলোর পাশাপাশি হুইপ পদেও চমকের কথা শোনা যাচ্ছে। ইতোমধ্যে হুইপ পদে পাঁচজনের নাম চূড়ান্ত করে অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। আজকে প্রজ্ঞাপন জারি হতে পারে। মন্ত্রিত্ব বঞ্চিতদের চোখ এখন সংসদীয় স্থায়ী কমিটিগুলোর দিকে। কমিটির সভাপতি পদে আসতেও চলছে লবিং-তদবির। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ২২৩ আসন নিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় আওয়ামী লীগ। ১০ জানুয়ারি এমপিদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। ওইদিনই আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠকে সংসদ নেতা হিসেবে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা, উপনেতা হিসেবে দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, স্পিকার পদে ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, ডেপুটি স্পিকার পদে শামসুল হক টুকু ও চিফ হুইপ পদে নূর-ই আলম চৌধুরী পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন। ৩০ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন বসবে। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তাঁর সাংবিধানিক ক্ষমতাবলে এ অধিবেশন আহ্বান করেছেন। একই সঙ্গে রীতি অনুযায়ী বছরের প্রথম অধিবেশনের প্রথম কার্যদিবসে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন দিকনির্দেশনামূলক ভাষণ প্রদান করবেন। সেই ভাষণের ওপর প্রায় মাসব্যাপী সংসদ সদস্যরা আলোচনা করবেন। ওই অধিবেশনেই সংসদীয় স্থায়ী কমিটিগুলো ঢেলে সাজানো হবে। কমিটির সভাপতি পদে আসতে এখন দলীয় সভানেত্রীর সুনজরের অপেক্ষায় আছেন নেতারা। জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদে সরকারি দলের হুইপ পদে যুক্ত হয়েছে নতুন তিন নাম; নড়াইল-২ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা, নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের নজরুল ইসলাম বাবু ও কক্সবাজার-৩ আসনের সাইমুম সরওয়ার কমল। চিফ হুইপ পদে নূর-ই আলম চৌধুরী (লিটন) বহাল থাকছেন। একাদশ সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম ও আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনও বহাল থাকছেন। সংসদ সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে, চিফ হুইপসহ হুইপ নিয়োগের ফাইল প্রধানমন্ত্রীর দফতরে পাঠানো হয়েছে। সেখানে সম্মতি মিললে রাষ্ট্রপতি হুইপদের নিয়োগ দেবেন। পরে প্রজ্ঞাপন জারি হবে। ১৯৭২ সালের ‘দ্য বাংলাদেশ (হুইপস) অর্ডার অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি এ নিয়োগ দেন। আইন অনুযায়ী সংসদে একজন চিফ হুইপ ও পাঁচজন হুইপ থাকবেন। চিফ হুইপ মন্ত্রীর মর্যাদা এবং হুইপরা প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা পেয়ে থাকেন।
সংসদের কয়েকটি কমিটির সভাপতি নির্ধারিত থাকেন। পদাধিকার বলে স্পিকার সভাপতি থাকেন সেগুলোতে। আর মন্ত্রণালয় সম্পর্কিতসহ অন্যান্য সংসদীয় কমিটির সভাপতি সংসদ নেতা ঠিক করেন। এক্ষেত্রে কে বা কারা হবেন- তা সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই ঠিক করবেন। সংশ্লিষ্টদের মতে, সংসদীয় স্থায়ী কমিটির দায়িত্বে কারা আসছেন তা নিয়েও চলছে আলোচনা। বিদায়ী একাদশ সংসদে মন্ত্রিসভায় দায়িত্ব পালনকারীদের প্রাধান্য দেওয়া হবে সংসদীয় কমিটিতে। সরকারের কাজের গতি বাড়াতে এসব মন্ত্রী যেসব মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পালন করেছিলেন, তাদের সেসব মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি করার সম্ভাবনা বেশি। মন্ত্রিসভার বাইরে থাকা শরিক দলের সদস্যরাও এক বা একাধিক সভাপতি পদ পেতে পারেন। বিরোধী দল জাতীয় পার্টি থেকেও কয়েকজন সদস্য সভাপতি থাকতে পারেন। আবার স্বতন্ত্র নির্বাচিত অভিজ্ঞ কাউকে এই পদে দেখা যেতে পারে। সংসদের প্রথম অধিবেশনেই বেশির ভাগ সংসদীয় স্থায়ী কমিটি গঠন করা হবে বলে জানা গেছে। জানা গেছে, বেশকিছু সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির পদে বিগত দিনে যারা ছিলেন তাদের অনেকেইে এমপি হতে পারেননি। কেউ দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত হয়েছেন। আবার কেউ কেউ মন্ত্রিসভায় স্থান পেয়েছেন। সে কারণে ওইসব পদে নতুন মুখ আসছে এটা নিশ্চিত। এ ছাড়াও অনেক সংসদীয় কমিটিতে নতুন মুখ আনা হবে। সংসদ সচিবালয় জানায়, সংসদের কয়েকটি কমিটির সভাপতি নির্ধারিত থাকেন। পদাধিকার বলে স্পিকার সভাপতি থাকেন সেগুলোতে। আর মন্ত্রণালয় সম্পর্কিতসহ অন্যান্য সংসদীয় কমিটির সভাপতি সংসদ নেতা ঠিক করেন। এক্ষেত্রে কে বা কারা হবেন- তা সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই ঠিক করবেন। তাই সবাই প্রধানমন্ত্রীর দিকে তাকিয়ে আছেন। একাদশ জাতীয় সংসদের মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির সভাপতি মেহের আফরোজ চুমকি এবার এমপি হতে পারেননি। সরকারি হিসাব সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি রুস্তম আলী ফরাজীকে জাতীয় পার্টি মনোনয়ন দেয়নি। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ সুবিদ আলী ভুইয়া এবার মনোনয়ন পাননি। পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সভাপতি দবিরুল ইসলামকে মনোনয়ন না দিয়ে তার ছেলেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সভাপতি সিমিন হোসেন রিমি নতুন মন্ত্রিসভায় মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী হয়েছেন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি এইচ এন আশিকুর রহমান এবার মনোনয়ন নেননি। তার ছেলেকে নৌকার মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু জয় ঘরে তুলতে পারেননি। অর্থ মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির সভাপতি আবুল হাসান মাহমুদ আলী অর্থমন্ত্রী হয়েছেন। ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ কে এম রহমতুল্লাহ এবার দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত হয়েছেন। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এবার দলীয় মনোনয়ন নেননি। তার ছেলেকে নৌকা দিয়েছে আওয়ামী লীগ। জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির সভাপতি। নৌকা নিয়ে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে পরাজিত হয়েছেন। র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী ছিলেন বেসামরিক বিমান ও পরিবহন পর্যটন মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির সভাপতি। তাকে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী করা হয়েছে। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির সভাপতি ছিলেন সাবের হোসেন চৌধুরী। তাকে এ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী করা হয়েছে। লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান ছিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির সভাপতি। তাকে এবার বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী করা হয়েছে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির সভাপতি ধীরেন্দ্রনাথ শম্ভু এবার দলীয় মনোনয়ন পেলেও স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে হেরে গেছেন।