ডেস্ক রির্পোট:- জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর এখন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের জোর প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ না করায় স্বতন্ত্র প্রার্থী মাঠে ছিলেন। কারও বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। বরং উৎসাহ দেওয়া হয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে। তারা চমক দেখিয়ে সংসদে এসেছেন ৬২ জন।
উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি না এলে সংসদ নির্বাচনের মডেল অনুসরণ করবে আওয়ামী লীগ। দলীয় প্রতীক দেওয়া হলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে যে কেউ নির্বাচন করতে পারবে। আবার সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য দলীয় প্রতীক তুলে দেওয়ার বিষয়টিও আলোচনায় আছে বলে জানিয়েছে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী ফোরাম।
সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী রাখায় আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতা-কর্মীরাও চাচ্ছে না উপজেলাতে দলীয় প্রতীক থাকুক। কারণ অনেক নেতা জনপ্রিয়তা থাকার পরও নানা কারণে প্রতীক পান না। আবার কেউ কেউ নৌকার বিপক্ষে ভোটও করতে চান না। নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই প্রশ্ন উঠছে আওয়ামী লীগ কী করবে উপজেলা নির্বাচনে, প্রতীক দেবে নাকি উন্মুক্ত রাখবে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘আমরা ধরে নিচ্ছি বিএনপি নির্বাচনে আসবে না। সে কারণে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে হলে দলীয় প্রতীক তুলে দেওয়া যেতে পারে। যার বেশি জনপ্রিয়তা আছে, তিনি বিজয়ী হবেন। দলীয় প্রতীক না দেওয়ার বিষয়টি দলের কার্যনির্বাহী পরিষদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সবকিছু নির্ভর করছে দলীয় সভানেত্রীর সিদ্ধান্তের ওপর।’ ২০১৫ সালের নভেম্বরে স্থানীয় সরকার আইন সংশোধন করে উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে রাজনৈতিক দলের দলীয় প্রতীকে নির্বাচনের বিধান রাখা হয়। সে থেকেই দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকারের ভোট হয়ে আসছে। গত সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয়নি। সে কারণে উপজেলাতেও এই ভীতি তাড়া করছে ক্ষমতাসীন দলে। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী ফোরামের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, দলীয় প্রতীকে নির্বাচন শুরু হওয়ার পর থেকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে নানামুখী সমস্যা দেখা দেয়। এমপি-মন্ত্রীদের আস্থাভাজন ব্যক্তিদের বিনা ভোটে বিজয়ী করার প্রবণতা, মনোনয়নবাণিজ্যসহ নানামুখী সমস্যা দেখা দিয়েছে।
সে কারণে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের তৃণমূল নেতা-কর্মীরা বিচ্ছিন্নভাবে দলীয় প্রতীক ছাড়া স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবি তোলে। এ দাবি দিন দিন আরও জোরদার হচ্ছে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আওয়ামী লীগের যৌথ সভায় দলীয় প্রতীক ছাড়া উপজেলা নির্বাচনের দাবি করেন কেউ কেউ। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠনের নেতাদের মতবিনিময় সভায় উঠে আসে বিষয়টি। সে কারণে আওয়ামী লীগ এবার কৌশলী ভূমিকা নেবে বলে জানিয়েছেন নীতিনির্ধারণী ফোরামের একাধিক নেতা।
জানা গেছে, মার্চের প্রথম সপ্তাহে প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনের ভোট নেওয়ার পরিকল্পনা রেখে ইতোমধ্যে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে কোন উপজেলায় কবে ভোট হয়েছে, কবে প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে এসব বিষয়ে তথ্য দিতে বলেছে নির্বাচন কমিশন। এ তথ্য হাতে পাওয়ার পর প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। তৃণমূল নেতারা বলছেন, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীক দিয়ে, আবার স্বতন্ত্র প্রার্থী উন্মুক্ত রাখা হলে দল ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এমনিতে সংসদ নির্বাচনে দলের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি হয়েছে। সে কারণে হয় প্রতীক, না হয় উন্মুক্ত রাখা, যে কোনো একটি সিদ্ধান্তে থাকতে হবে বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী ফোরামের নেতারা।
তাদের মতে, আওয়ামী লীগের আয়ের অন্যতম উৎস হচ্ছে মনোনয়নপত্র বিক্রি। সে কারণে উপজেলা নির্বাচনে দলীয় ফরম ছাড়া হলে কমপক্ষে প্রতি উপজেলা থেকে পাঁচ-ছয়জন করে প্রার্থী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করবেন। ফলে দলের আয়ও বাড়বে। দলীয় প্রতীক দেওয়ার পাশাপাশি স্বতন্ত্র প্রার্থী রাখলে মানুষ পছন্দের ব্যক্তিকে নির্বাচিত করবে। অন্যদিকে শুধু দলীয় প্রতীক দেওয়া হলে অনেকেই অতীতের মতো বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়ে যাবেন। ভোট উৎসব হবে না। আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড চান, ভোট উৎসব হোক। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত দলীয় প্রতীকেই উপজেলা ভোট করার সিদ্ধান্ত আছে।’বাংলাদেশ প্রতিদিন