ডেস্ক রির্পোট:- কক্সবাজারের উখিয়া ক্যাম্পে আগুনে গৃহহীন হয়ে পড়া ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গারা শীতে চরম কষ্টে আছেন। নারী-শিশুরা সবচেয়ে বেশি ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।
গত ১১ জানুয়ারি কুতুপালংয়ের (ক্যাম্প-৫) রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অগ্নিকাণ্ডের পর প্রায় সাত দিন দিন কেটে গেলেও কেউ মাথা গোঁজার ঠাঁই পাননি। অগ্নিকাণ্ডের এ ঘটনায় গৃহহীন হয়ে পড়া অন্তত পাঁচ হাজার মানুষ এখনও খোলা আকাশের নিচে মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন। ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গারা জানান, এখন দ্রুত তাদের শীতবস্ত্র আর মাথা গোঁজার ঠাঁই দরকার।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ত্রিপলের ছাউনি টেনে সেটির নিচে কোনোরকমে দিন পার করছেন রোহিঙ্গারা। তবে চালার চারদিকে কোনও ঘেরা না থাকায় শীতে কাবু হচ্ছেন নারী ও শিশুরা।
এ সময় ধ্বংসস্তূপের খোলা আকাশের নিচে বসে শীতে কাঁপছিলেন বৃদ্ধ রোহিঙ্গা নারী সোয়া বানু। তিনি বলেন, আমার কেউ নেই, একমাত্র সম্বল ঘরটি আগুনে পুড়ে গেছে। আমি এখন খুব কষ্টে আছি। শীতে রাতে ঘুমাইতে পারি না। নেই শীতবস্ত্রও। এত দিন হয়ে গেলেও এখন মাথা গোঁজার ঠাঁই হয়নি।
তিনি বলেন, ঠিকমতো খাবার আর গোসল করতে পারছি না। এখানে বসে আছি। পোড়া ঘরে বসে থাকছি। রাত হলে অন্যর বাড়ি থাকতে যাই। আমার কেউ নেই এ পৃথিবীতে।
এর পাশে ত্রিপল টাঙাতে ব্যস্ত থাকা রোহিঙ্গা নারী নুর নাহার বলেন, ‘কয়েক দিন ধরে খুব ঠান্ডা লেগেছে। ছোট কম্বলে কোনও কাজ হচ্ছে না। খোলা আকাশে পলিথিনের ছাউনিতে বৃষ্টির পানির মতো করে কুয়াশা পড়ছে। সবমিলিয়ে প্রচণ্ড ঠান্ডায় মোটেই ভালো নেই রোহিঙ্গারা।’
তিনি বলেন, ‘ঠান্ডা বাতাসে উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে। শীতের মধ্যে কোনোমতে দুঃখে-কষ্টে থাকা। পানির অভাবে গোসল করতে পারছি না। এভাবে পড়ে থাকতে হচ্ছে। গোসলের জায়গাসহ সব কিছু পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।’
কুতুপালং ক্যাম্প-৫ এর হেড মাঝি হামিদ হোসাইন বলেন, ‘শীতের তীব্রতার কারণে গৃহহীন রোহিঙ্গারা মানবেতর জীবন পার করছেন। আমার ক্যাম্পে আগুনে প্রায় ১১০০ ঘরবাড়ি পুড়ে গেছে। ঘর হারানো কেউ এখনও মাথা গোঁজার ঠাঁই পাননি। ফলে শীতে কাঁপছেন। আবার ঠান্ডায় সর্দি-কাশি বেড়ে গেছে। ছোটদের মধ্যে এর প্রকোপ বেশি দেখা গেছে।’
তিনি বলেন, ‘আরআরআরসির পক্ষ থেকে গৃহহীনদের ঘরবাড়ি নির্মাণে তিনটি এনজিওকে দায়িত্বে দেওয়া হলেও একটি ছাড়া কেউ কাজ শুরু করেনি।’
জানতে চাইলে অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ সামছু-দ্দৌজা নয়ন বলেন, ‘গৃহহীন রোহিঙ্গাদের ঘর মেরামতের কাজ শুরু হয়েছে। এ ছাড়া তাদের নিয়মিত খাবার দেওয়া হচ্ছে এবং সার্বক্ষণিক তাদের খোঁজ রাখা হচ্ছে।’
টেকনাফ উপজেলার পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা প্রণয় রুদ্র বলেন, ‘শীতকালে নারী-শিশুরা ঠান্ডাজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। তারা ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কাইটিস, সর্দি-জ্বর, কাশি ও চোখের অ্যালার্জিসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। চিকিৎসা নিতে আসা সব রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।’
প্রসঙ্গত, মিয়ানমারের রাখাইনে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের ওপর দেশটির সেনা নির্যাতনের ফলে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছেন। এর মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যা বেশি। পুরনোসহ উখিয়া ও টেকনাফের ছোট-বড় ৩২টি ক্যাম্পে ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গা অবস্থান করছেন। পাহাড় ও বন কেটে বেশিরভাগই বসতি গড়েছেন তারা।