গোপনীয় ও স্পর্শকাতর নথি নিয়ে লাপাত্তা বিমানের দুই কর্মকর্তা

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ১৮ জানুয়ারী, ২০২৪
  • ২১৬ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের গোপনীয় ও স্পর্শকাতর নথি চুরি করে পালিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির দুই কর্মকর্তা গোপনীয় বিভিন্ন এগ্রিমেন্ট, আরআই পলিসি ও সফটওয়্যার সম্পর্কিত স্পর্শকাতর নথিপত্র চুরি হওয়াতে তথ্য পাচারের শঙ্কায় রয়েছে রাষ্ট্রীয় এ প্রতিষ্ঠানটি। দীর্ঘদিন ধরে কর্মরত দুই কর্মকর্তা প্রলোভনে পড়ে এমনটি করেছেন বলে ধারণা করছেন প্রতিষ্ঠানের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের কর্মকর্তারা। কারণ পলাতক ওই দুই কর্মকর্তার কাছে পাসওয়ার্ড, সিস্টেম অ্যাকসেস, ফাইলপত্রসহ গুরুত্বপূর্ণ আরও অনেক কিছুই ছিল। যার কোনোটিই বিমানকে বুঝিয়ে না দিয়ে তারা পালিয়েছেন। তাদের একজন হলেন, প্রতিষ্ঠানটির সহকারী ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মো. আনোয়ার হোসেন ও বাণিজ্যিক তত্ত্বাবধায়ক সোহান আহমেদ। এ ঘটনায় বিমানের নিরাপত্তা বিভাগের সহকারী ব্যবস্থাপক মো. মাছুদুল হাছান সোমবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) বিমানবন্দর থানায় জিডি করেছেন।

বিমানের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আনোয়ারের বিরুদ্ধে আগে থেকেই অভিযোগ ছিল। অভিযোগ ওঠার পর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে তাকে শোকজ করে রাজশাহী অফিসে বদলি করা হয়। সেখানেই তিনি দায়িত্ব পালন করছিল। তদন্ত চলমান থাকলেও তার কোনো সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করা হয়নি। কিন্তু তদন্তে তার বিরুদ্ধে নানা অসঙ্গতির প্রমাণ পাওয়া যায়।

তদন্ত চলাকালেই তিনি ওমরাহ করার ছুটি নিয়ে ২৪শে অক্টোবর বিজি-৩০৫ ফ্লাইটে কানাডা পালিয়ে যান। কানাডা যাওয়ার বিষয়ে তিনি অফিসিয়ালি কাউকে কিছু বলেননি। তার কাছে বিমানের গুরুত্বপূর্ণ অনেক নথি ছিল। সেগুলো নিয়েই তিনি পালিয়েছেন।

সূত্রগুলো বলছে, আনোয়ারের কানাডা যাওয়া নিয়ে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। এখানে রহস্য রয়েছে। তিনি ওমরাহ করার এনওসি নিয়ে কীভাবে বিমানের ফ্লাইটে কানাডা গেলেন। কারণ তার কাছে কানাডা যাওয়ার কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছিল না। তার কানাডা গমনে বিমানবন্দর বা বিমানের কেউ সহযোগিতা করেছেন কিনা সেটিও সামনে এসেছে। তবে আনোয়ার কানাডা পালিয়ে গেলেও বাণিজ্যিক তত্ত্বাবধায়ক সোহান আহমেদ বেশি সুবিধা নিয়ে দেশেই আরেকটি প্রতিষ্ঠানে কাজ শুরু করেছেন। গত ৭ই ডিসেম্বর সকাল ১০টার দিকে কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই প্রথমে চাকরি থেকে অব্যাহতির আবেদনপত্র ও পরে ছুটির আবেদন দিয়ে কর্মস্থল ছাড়েন। সোহানের কাছে বিমানের সফটওয়ারের আইডি, পাসওয়ার্ড, সিস্টেম অ্যাকসেস, ফাইলপত্র ছিল। নিয়ম অনুসারে কেউ চাকরি ছাড়লে অডিট, আইটি ও সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্স হওয়ার পর তিনি চাকরি থেকে অব্যাহতি নিতে পারেন। শুধুমাত্র চাকরি থেকে অব্যাহতি ও ছুটির আবেদনপত্র দিয়ে তিনি কোনো কিছু না বুঝিয়ে গোপনে অন্য কোম্পানিতে কাজ শুরু করার বিষয়টি রহস্যজনক।

অভিযুক্ত আনোয়ার হোসেনের গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরের শাহরাস্তি থানাধীন হরিয়ায়। সপরিবারে তিনি রাজধানীর মিরপুর মডেল থানাধীন ৭ নম্বর সেকশনে বসবাস করতেন। তিনি কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই দেশ ছেড়েছেন। আর সোহান আহমেদ সপরিবারে রাজধানীর আশকোনা এলাকায় বসবাস করেন।
বিমানবন্দর থানায় জিডির অভিযোগে বিমান কর্তৃপক্ষ বলেছে, আনোয়ার ও সোহানের কাছে রক্ষিত বিমানের গোপনীয় বিভিন্ন এগ্রিমেন্ট ও আরআই পলিসি এবং স্পর্শকাতর সফটওয়্যার সম্পর্কে তথ্য রয়েছে। এসব তথ্য পাচার করার আশঙ্কা করছে বিমান। তথ্য পাচার হলে বিমান অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিমানবন্দর থানায় করা জিডির তদন্ত করছেন এসআই রুবেল শেখ। জিডির তদন্তের অগ্রগতি জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা জিডির তদন্তের জন্য আদালতে আবেদন দিয়েছিলাম। আদালত অনুমতি দিয়েছেন এখন আমরা তদন্ত করবো। তদন্ত করলেও ঘটনার রহস্য উদ্‌ঘাটন হবে।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শফিউল আজিম বলেন, আমরা জিডি করেছি। তবে জিডির আগে থেকেই আনোয়ারের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করে প্রশাসনিক তদন্ত হচ্ছিল। তাকে শোকজ ও বদলি করা হয়েছিল। এর ফাঁকেই সে পালিয়েছে। আর সোহান আহমেদ ওভারস্মার্ট। বেশি টাকার লোভে সে আমাদের প্রতিষ্ঠানে রিজাইন লেটার দিয়ে ই-রেগুলার হয়ে যায়। তখন বিমান থেকে তাকে বলা হলো আমাদের আরেকটু সময় দিতে হবে কারণ তার কাছে থাকা ফাইলপত্র, দেনা-পাওনা বুঝিয়ে দেয়ার জন্য। কিন্তু সে ওই সময় আরেকটি ছুটির দরখাস্ত দিয়ে ই-রেগুলার হয়ে যায়। সোহান এক্ষেত্রে কোনো নিয়ম মানেনি। কারণ অফিসিয়াল কিছু বিষয় থাকে সেগুলো শেষ হলে বিমান থেকেই তাকে অব্যাহতির বিষয়টি জানিয়ে দেয়া হতো। এগুলো না করেই সে আরেকটি কোম্পানিতে কাজ করা শুরু করে এবং আইডিও জমা দেয়নি। তার অডিট, আইটি ও সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্স লাগবে অথচ কোনোটাই না করে অন্য কোম্পানিতে চলে গেছে। তার কাছে আমাদের পাসওয়ার্ড, সিস্টেম অ্যাকসেস, ফাইলপত্র আছে সেগুলো বুঝিয়ে না দিয়ে সে যেতে পারে না।

আনোয়ার কানাডা বৈধ উপায়ে গিয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এসব বিষয়ে এখনো তদন্ত চলছে। তাকে যখন রাজশাহীতে বদলি করা হয়, তখন সেখানকার ডিস্ট্রিক ম্যানেজারের অধীনে সে ছিল। সেখান থেকেই তার ছুটির বিষয়টি দেখা হয়। ওমরাহ করার কথা বলে আনোয়ার সেখান থেকে ছুটি নেয়। পরে সেখান থেকে পালিয়ে যায়। বিমানবন্দরে কেউ সহযোগিতা করেছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়েও তদন্ত চলমান। এ ছাড়া তার কোনো সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করা হয়নি তবুও সে পালিয়েছে। এ থেকে বোঝা যায় সে কোনো কিছুর সঙ্গে জড়িত। শফিউল আজিম বলেন, তাদের এভাবে চলে যাওয়াতে আমরা বড় ধরনের ক্ষতির শঙ্কা করছি। যদিও আমাদের সবকিছুতে বেকআপ আছে। তবুও বড় ধরনের কোনো ক্ষতির আগেই আমরা সতর্ক হয়েছি। আরও বড় পর্যায় থেকে এ ধরনের ঘটনা তো ঘটতে পারতো। মানবজমিন

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.net
Website Design By Kidarkar It solutions