ডেস্ক রির্পোট:- বাংলাদেশের বিষয়ে দেয়া জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের (ওএইচসিএইচআর) বিবৃতির প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, ওই বিবৃতিতে ‘বাস্তবতাকে ভুলভাবে উপস্থাপন’ করা হয়েছে। একইসঙ্গে ওই বিবৃতিকে ‘মানবাধিকার নিয়ে রাজনীতিকরণ ও পক্ষপাতমূলক মূল্যায়নের পুনরাবৃত্তি’ বলে অভিহিত করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
আজ রোববার (১৪ জানুয়ারি) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দেয়া এক বিজ্ঞপ্তি এসব তথ্য জানানো হয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তি উল্লেখ করা হয়, ‘জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয় (ওএইচসিএইচআর) থেকে বাংলাদেশের বিষয়ে সম্প্রতি প্রকাশিত একটি প্রেস বিবৃতি সরকারের দৃষ্টিতে এসেছে। বিবৃতিটি বাস্তবতাকে ভুলভাবে উপস্থাপন করেছে। একইসঙ্গে এটি মানবাধিকার নিয়ে রাজনীতিকরণ ও পক্ষপাতমূলক মূল্যায়নের পুনরাবৃত্তি। এ প্রেক্ষাপটে সরকার সঠিক পর্যবেক্ষণ তুলে ধরতে চায়।’
এতে বলা হয়, ‘গণতান্ত্রিক নীতি সমুন্নত রাখার জন্য সরকারের দৃঢ় প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ৭ জানুয়ারি জনগণের অংশগ্রহণে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হয়ে। কয়েকটি ভোট কেন্দ্রে কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া নির্বাচনের দিনটি অভূতপূর্বভাবে শান্তিপূর্ণ ছিল, যা অনেক আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষক এবং সাংবাদিকদের পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে। যারা মাঠ পর্যায়ে নির্বাচনের খবর সংগ্রহ করেছিলেন।’
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘সরকার একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে। তবে দুঃখজনকভাবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অসাংবিধানিক দাবির অজুহাতে নির্বাচনী প্রক্রিয়ার বাইরে থাকার সিদ্ধান্ত নেয়। যা দুর্ভাগ্যজনক। বিএনপি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে নস্যাৎ করতে সহিংসতা ও নিরপরাধ মানুষ হত্যার আশ্রয় নিয়েছিল।’
এতে আরো উল্লেখ করা হয়, ‘গত ২৮ অক্টোবর থেকে বিএনপিকর্মীরা নিরীহ বেসামরিক নাগরিক এবং কর্তব্যরত আইন প্রয়োগকারী কর্মীসহ ২৪ জনকে হত্যা করেছে। তারা সরকারি-বেসরকারি প্রায় এক হাজার যানবাহনে আগুন দিয়েছে। লাইনচ্যুত করে এবং ট্রেনে হামলা চালিয়ে মা ও তার তিন বছরের শিশুসহ যাত্রীদের জীবন্ত পুড়িয়ে দিয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন নিশ্চিত করা সত্যিই একটি চ্যালেঞ্জ ছিল। ব্যাপক সহিংসতার পরও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের প্রতিক্রিয়া সংযত, যৌক্তিক ও আইনি সীমার মধ্যে ছিল।’
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘ওএইচসিএইচআরের অভিযোগ যেমন—নির্বিচারে গণগ্রেফতার, হুমকি, গুম, আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তাদের দ্বারা ব্ল্যাকমেইলিং ও নজরদারির বিষয়টি ভিত্তিহীন এবং অপ্রমাণিত। গ্রেফতারের সংখ্যা নিছক অতিরঞ্জন। যারা সহিংসতা ও বেআইনি কর্মকাণ্ডে জড়িত বা উসকানি দিয়েছিল তাদের গ্রেফতার এবং আইনি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আইনের শাসন বজায় রাখতে এবং সব নাগরিকের অধিকার রক্ষার জন্য এ ব্যবস্থা প্রয়োজনীয় ছিল।’
অনেক মানবাধিকার রক্ষাকারীকে আত্মগোপনে যেতে বাধ্য করা হয়েছে, এবং কেউ কেউ দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন বলে ওএইচসিএইচআরের অভিযোগও প্রত্যাখ্যান করেছে সরকার। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এটি বাস্তবতা থেকে অনেক দূরে এবং ওএইচসিএইচআরের পক্ষ থেকে দায়িত্বহীনতার একটি সরল উদাহরণ। পাবলিক স্টেটমেন্টে ব্যবহারের আগে তথ্যের সত্যতা যাচাই করাটা গুরুত্বপূর্ণ।
বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, সরকার গঠনমূলক সমালোচনাকে স্বাগত জানায় এবং যেকোনো বৈধ উদ্বেগের সমাধান করতেও প্রস্তুত। বাংলাদেশ জাতিসংঘ এবং এর মানবাধিকার ব্যবস্থার সঙ্গে সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে উন্মুখ।