শিরোনাম
৩ কোটির ক্যাশ চেক দিয়ে ডিসির পদায়নের বিষয়টি ভিত্তিহীন প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সাম‌নে ৩৫ প্রত্যাশীদের অবস্থান, টিয়ারশেল নিক্ষেপ উন্নয়নের অংশীদার হলেও ১৫ বছরে শ্রমিকরা ন্যায্য পারিশ্রমিক পাননি— দেবপ্রিয় ৩ বছরে উচ্চ শিক্ষা সম্পন্ন করা প্রায় ১৯ লাখ শিক্ষার্থীর অধিকাংশই বেকার দুই সচিব ও ৬ অতিরিক্ত সচিবকে ওএসডি ২০ হাজারের বেশি বাংলাদেশির পাসপোর্ট ফেরত দিলো ভারত সচিবালয়ে হট্টগোল,শাস্তি পাচ্ছেন ১৭ উপসচিব সাভারে শ্রমিকদের সঙ্গে যৌথবাহিনীর সংঘর্ষ, গুলিবিদ্ধ একজনের মৃত্যু বাংলাদেশি নাগরিকদের ভিসা নিয়ে অবস্থান জানাল ভারত ‘পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সেনাবাহিনী সরকারকে সহযোগিতা করছে’

বিচিত্রসাজাপ্রাপ্ত অপরাধীদের এই দ্বীপের একমাত্র নারী বাসিন্দা তিনি

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় শনিবার, ১৩ জানুয়ারী, ২০২৪
  • ১৩০ দেখা হয়েছে

অনলাইন ডেস্ক:- সাজাপ্রাপ্ত অপরাধীদের এক পুনর্বাসন কেন্দ্র দ্বীপটি। সেখানে কেবল একজন নারীরই বাস। তবে কোনো অপরাধের সাজা খাটার জন্য দ্বীপে পাঠানো হয়নি তাঁকে। তাহলে?

একসময় কারাগার হিসেবে ব্যবহার করা ইতালির পিয়ানোসা দ্বীপে ২০১১ সালে প্রথম পা রাখেন জুলিয়া মানকা। তাঁর ইচ্ছা ছিল রৌদ্রকরোজ্জ্বল একটি জায়গায় কয়েকটা দিন সময় কাটানো। কিন্তু সেখানকার সৈকতমুখী হোটেল মেলিনায় পৌঁছার পর পরিস্থিতি পুরোপুরি পাল্টে গেল। তিররেনীয় সাগরের দ্বীপটিতে পাকাপাকিভাবে রয়ে গেলেন মানকা।

মেলিনা হোটেলটি পরিচালিত হয় পর্যবেক্ষণে থাকা সাজাপ্রাপ্ত অপরাধীদের দ্বারা। আর তাসকানির মেরিন পার্কের অংশ পিয়ানোসা দ্বীপে বাস করা একমাত্র নারী মানকা। হোটেলটির ম্যানেজার এবং দ্বীপের পুনর্বাসন কর্মসূচির তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে কাজ করছেন তিনি। এই কর্মসূচি পরিচালনা করছে অলাভজনক প্রতিষ্ঠান আরনেরা ও তাসকানির কারা কর্তৃপক্ষ।
‘আমি হোটেলে এক সপ্তাহ কাটালাম এবং তারপর জায়গাটি ছেড়ে যেতে চাইলাম না।’ মানকা বলেন মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে, ‘অসাধারণ ছুটি কেটেছিল এবং পুনর্বাসন প্রকল্পটি মুগ্ধ করে আমাকে। বন্দীরা দ্বিতীয় একটি সুযোগ পায় এখানে।’

‘আমি পিয়ানোসার প্রেমে পড়ে যাই—এর নীরবতা, এখানকার সাগরের স্বচ্ছ জল, শান্ত তারাময় রাত—সবকিছুর।’ বলেন মানকা।

কর্সিকা ও মূল ভূখণ্ডের মধ্যে অবস্থিত একসময় ডেভিল’স আইল্যান্ড বা শয়তানের দ্বীপ নাম পাওয়া দ্বীপটি অসাধারণ সুন্দর সৈকত এবং সবুজ গাছপালার জন্য পর্যটকদের পছন্দের একটি গন্তব্যে পরিণত হয়েছে এখন।

দ্বীপের স্থায়ী বাসিন্দাদের মধ্যে মানকা ছাড়া আছেন একজন কারা প্রহরী ও ১০ জন সাজাপ্রাপ্ত অপরাধী। এই অপরাধীদের কেউ হোটেলটির রাঁধুনি, কেউ মালি, আবার কেউ ওয়েটার। দ্বীপে পর্যটকদের থাকার একমাত্র জায়গা এই হোটেলই।

পাইনগাছে ঘেরা হোটেল মিলেনায় চমৎকার কাঠের আসবাবে সজ্জিত ১১টি কক্ষ রয়েছে। কামরাগুলো থেকে সাগরের অসাধারণ দৃশ্যও নজর কাড়ে। এ ছাড়া এখানে রয়েছে চমৎকার একটি রেস্তোরাঁ এবং একটি বার।

সারা বছর খোলা থাকা হোটেলটির অতিথি থাকা অবস্থায় মানকাকে ওই সময়কার ম্যানেজার তাঁকে জানান যে সংস্থাটি (আরনেরা) আর্থিক সমস্যায় আছে এবং হোটেলটি বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। এমনটা হলে বন্দীদের আবার কারাগারে স্থানান্তর করা ছাড়া উপায় থাকবে না।

‘আমি অনুভব করলাম যে তাঁদের সাহায্য করার জন্য আমার কিছু করা উচিত। না হয় নতুন করে শুরুর সুযোগ ছাড়াই কারাগারে চলে যেতে হবে তাঁদের। তেমনি মুক্তি পাওয়ার পরে সাহায্য করতে পারে এমন কোনো কাজও শেখা হবে না।’ বলেন একসময় টুরিস্ট এজেন্ট হিসেবে কাজ করা মানকা।

তাসকানিতে বেড়ে ওঠা মানকা এখানে থাকার এবং হোটেলের ম্যানেজারের দায়িত্ব নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি প্রথমে বিনা বেতনে কাজ করেন এখানে। পাশাপাশি হোটেলের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করার জন্য তাঁর পরিচালনার দক্ষতা ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিলেন।

কয়েক বছরের মধ্যে পরিস্থিতি পাল্টে দিলেন মানকা। হোটেল মিলেনা হয়ে উঠল বিয়ে ও জন্মদিনের অনুষ্ঠান আয়োজনের জনপ্রিয় জায়গা।

এখন পিয়ানোসা দ্বীপ এবং এখানকার মেলিনা হোটেল পর্যটকদের খুব এখন পিয়ানোসা দ্বীপ এবং এখানকার মেলিনা হোটেল পর্যটকদের খুব পছন্দের একটি গন্তব্যএকটি গন্তব্যএখন পিয়ানোসা দ্বীপ এবং এখানকার মেলিনা হোটেল পর্যটকদের খুব পছন্দের একটি গন্তব্য। ছবি: জুলিয়া মানকার সৌজন্যে
১৯৯৮ সাল পর্যন্ত দ্বীপটি সর্বোচ্চ নিরাপত্তাব্যবস্থার একটি কারাগার হিসেবে ব্যবহৃত হতো। তার পরই এটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। এখানে থাকা অল্প কিছু কয়েদিকে অন্য জায়গায় পাঠিয়ে দেওয়া হলো। পিয়ানোসা এরপর অনেকগুলো বছর পরিত্যক্তই ছিল একরকম।

একটা সময় পর্যন্ত দর্শনার্থীদের দ্বীপে যাওয়ার সুযোগ ছিল একেবারেই কম। বিশেষ অনুমতি নিয়ে নির্দিষ্ট ট্যুর অপারেটরের মাধ্যমে একত্রে একটি নৌকায় ভ্রমণের ব্যবস্থা হতো কালেভদ্রে। পরে আবার একে সাজাপ্রাপ্ত অপরাধীদের পুনর্বাসন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হয়।

হোটেল মিলেনার পুনর্বাসন প্রকল্পে সুযোগ পাওয়ার জন্য আবেদনকারীদের অবশ্যই তাঁদের শাস্তির অন্তত এক-তৃতীয়াংশ জেলে থাকতে হবে। কঠোর মনস্তাত্ত্বিক ও সামাজিক মূল্যায়ন পরীক্ষায়ও উত্তীর্ণ হতে হয়।

গত ১২ বছরের বেশি সময়ে মিলেনায় বিভিন্ন অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত প্রায় ১০০ অপরাধী অবস্থান করেছেন, আরও পরিষ্কারভাবে বললে কাজ করেছেন।

এখন ‘পিয়ানোসার রানি’ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া মানকা স্বীকার করেন, তাঁর এই চাকরি বন্ধু ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের ভ্রু কুঁচকে দেয়। অপরাধী পরিবেষ্টিত অবস্থায় একমাত্র নারী হিসেবে এখানে থাকার ঝুঁকির বিষয়টিই তাঁরা মনে করিয়ে দেন।

‘লোকেরা বলতেই থাকে, এমন একটা চাকরি নেওয়া পাগলামি ছাড়া কিছু নয়।’ বলেন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা আরনেরার সদস্য মানকা।

মানকা জানান, কখনোই এখানে থাকা নিয়ে ভয় পাননি বা চিন্তিত হননি তিনি। বরং শহরের চেয়ে অপরাধীদের সঙ্গে এই দ্বীপে বেশি নিরাপদ বোধ করেন।

প্রতি সপ্তাহে একবার মানকা ভোরের ফেরিতে মূল ভূখণ্ড তাসকানিতে যান। সময় লাগে তিন ঘণ্টা। হোটেল-সংক্রান্ত সেখানকার বিভিন্ন কাজ শেষে রাতেই ফিরে আসেন।

এখানে যেসব অপরাধী কাজ করেন, তাঁদের মাস হিসেবে বেতন দেওয়া হয়। পুরোনো জেল কোয়ার্টারে থাকেন তাঁরা। সেখানে আছে জিম, টিভি, বাথরুমসহ ব্যক্তিগত কামরা, রান্নাঘর। পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার জন্য মোবাইল ফোন দেওয়া হয়।

‘পিয়ানোসা মডেলে’র সাফল্যে মানকা গর্ববোধ করতেই পারেন। তিনি জানান, দ্বীপে কয়েকটা বছর কাটিয়ে মুক্তি পাওয়াদের অপরাধের হার শূন্যের আশপাশে।

কেউ কেউ এখানে পাঁচ থেকে দশ বছর কাটিয়েছেন। মানকা এখান থেকে গিয়ে নতুন জীবন শুরু করা ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন।

‘এমনকি আমার মেয়ে ইয়োলান্দা, যে ছোটবেলায় আমার কাজের প্রতি কিছুটা সন্দেহপ্রবণ ছিল, সেও দ্বীপটির প্রশংসা করে এখন। আমি যা করি, তার গুরুত্ব ও বুঝতে পেরেছে। এখন বলে যে আমি একজন ভাগ্যবান মানুষ।’ বলেন মানকা।

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.net
Website Design By Kidarkar It solutions