শিরোনাম
পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ পুনর্গঠনের দাবিতে রাঙ্গামাটিতে বিক্ষোভ-সমাবেশ ডিসেম্বরে বাংলাদেশ-ভারত বৈঠকের প্রস্তুতি, হাসিনার প্রত্যর্পণ নিয়ে আলোচনার সম্ভাবনা বিচারের পর আ.লীগকে নির্বাচনে স্বাগত জানানো হবে-টাইম ম্যাগাজিনকে ড. ইউনূস আগামী নির্বাচন নিয়ে দিল্লি ভয়ংকর পরিকল্পনা করছে: জাগপা নেতা রহমত নতুন সিইসি নাসির উদ্দীনের নাম ছিল বিএনপির তালিকায় নাসির উদ্দীনকে সিইসি করে নির্বাচন কমিশন গঠন ‘জনগণ যাতে ক্ষমতার মালিক হতে পারেন তেমন দেশ গড়তে চাই’ রাঙ্গামাটির কাপ্তাই অটল ছাপ্পান্ন আয়োজনে সশস্ত্র বাহিনী দিবস উদযাপন খালেদা জিয়াকে সেনাকুঞ্জে আনতে পেরে আমরা গর্বিত : প্রধান উপদেষ্টা সেন্ট মার্টিনে পর্যটন নিয়ন্ত্রণে কমিটি, অ্যাপস থেকে পাস

পার্বত্য জেলায় ভোটের বিপরীত চিত্র,কোথাও শূন্য কোথাও ১৮৩৮

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় শনিবার, ১৩ জানুয়ারী, ২০২৪
  • ২৩১ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের ভোট বর্জন আর হরতালের মধ্যেই অনুষ্ঠিত হলো দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সদ্য সমাপ্ত এই নির্বাচনে ইসির হিসাবে প্রথম ৭ ঘণ্টায় ভোট পড়েছে ২৭ শতাংশ। আর শেষ এক ঘণ্টায় ভোট পড়েছে ১৪ দশমিক ৯৯ শতাংশ। নির্বাচনের দিন কেন্দ্রে সকাল থেকে ভোটার উপস্থিতি কম থাকলেও শেষ ঘণ্টায় এমন অস্বাভাবিক ভোট পড়ার তথ্য অবাক করেছে নির্বাচন বিশ্লেষক ও রাজনৈতিক দলগুলোকে। স্বয়ং ইসির কোনো কোনো কর্মকর্তাও শেষ ঘণ্টার ভোটের হারকে অস্বাভাবিক মনে করছেন। এ ছাড়া শেষের দিকের ভোটের হার নিয়ে ইসির কাছে অভিযোগও করেছেন এক প্রার্থী। সব ছাপিয়ে এই নির্বাচনে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ‘শেষ ঘণ্টা’।

দেশের পার্বত্য ৩ জেলার ভোটের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, খাগড়াছড়ির লক্ষীছড়ি, পানছড়ি ও দীঘিনালা উপজেলার ১৯টি কেন্দ্রে সারাদিনে কোনো ভোট পড়েনি। অন্যদিকে রাঙ্গামাটির ৮টি কেন্দ্রে কোনো ভোটই পড়েনি। তবে এতগুলো কেন্দ্রে শূন্য ভোটের পরও দুই আসনের একটিতে প্রায় ৫০ শতাংশ আরেকটিতে ৫৯ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছে।

তথ্য অনুযায়ী, খাগড়াছড়ির লক্ষীছড়ি উপজেলার বর্মাছড়ি উচ্চ বিদ্যালয়, কুতুবছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও শুকনাছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে কোনো ভোটার ভোট দিতে কেন্দ্রে যাননি। পাশের পানছড়ি উপজেলার ১১টিতে কোনো ভোট পড়েনি।
বিজ্ঞাপন
একটিমাত্র ভোট পড়েছে দক্ষিণ লতিবান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে। খাগড়াছড়ি আসনের বেশকিছু কেন্দ্রের ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, অনেক কেন্দ্রের ফলাফল শিটে কোনো পোলিং এজেন্টদের স্বাক্ষর নেই। আবার কোনো কোনো ফলাফল শিটে ৩ আওয়ামী লীগের এজেন্টের স্বাক্ষর মিলেছে। প্রতিপক্ষ সোনালী আঁশের প্রার্থীর একাধিক এজেন্টের স্বাক্ষরও মিলেছে বিভিন্ন ফলাফল শিটে।

খাগড়াছড়ির শিশু কল্যাণ প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ১ হাজার ৮৩৮ ভোট পড়েছে। যার মধ্যে নৌকা মার্কায় কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা একাই পেয়েছেন এক হাজার ৬১৯ ভোট। যেখানে অস্বাভাবিক ভোটের চিত্র দেখা যাচ্ছে এমন বেশকিছু কেন্দ্রের নৌকার একাধিক এজেন্টের স্বাক্ষর ছিল। আবার অনেক ফলাফল শিটে কোনো এজেন্টের স্বাক্ষর পাওয়া যায়নি। খাগড়াছড়ি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে এক হাজার ৮০৯ ভোটের মধ্যে এক হাজার ৭২৩ ভোটই পেয়েছেন নৌকার প্রার্থী। যেখানে আওয়ামী লীগ ছাড়া কোনো প্রার্থীর এজেন্টই ছিল না।

খাগড়াছড়ির দীঘিনালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৮৪ দশমিক ২৭ শতাংশ ভোট পড়েছে। কেন্দ্রটির ফলাফল শিটে কোনো এজেন্টের স্বাক্ষর পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া প্রিজাইডিং অফিসারের স্বাক্ষর থাকলেও সিল নেই। কাটারুংছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোট পড়েছে মাত্র ২টি। রসিকনগর পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রায় ৮৩ শতাংশ ভোট পড়েছে। এই কেন্দ্রে ৩ হাজার ৯০ জন ভোট দিয়েছেন। যার মধ্যে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ২ হাজার ৫৩৬ ভোট পেয়েছে। কেন্দ্রে একজন এজেন্ট ছিল। তিনি নাম না লিখলেও স্বাক্ষর দিয়েছেন। এ ছাড়া প্রিজাইডিং অফিসারের সিলসহ স্বাক্ষর পাওয়া যায়নি।

অন্যদিকে রাঙ্গামাটির ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, মোট ৪ লাখ ৭৪ হাজার ভোটের মধ্যে ২ লাখ ৭১ হাজার ভোট পেয়ে এই আসন থেকে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের দীপঙ্কর তালুকদার। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের প্রার্থীর ভোট মাত্র ৪ হাজার ৯শ’। এই আসনে অনেকগুলো কেন্দ্রে কোনো ভোটই পড়েনি। আর ২১৩টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ৮টি কেন্দ্রেই নৌকা প্রার্থীর ভোট দশটির নিচে।

শুধু এই দুইটি আসনের কেন্দ্রেই নয়, ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে সারা দেশের অধিকাংশ বুথেই সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ভোটারের খরা থাকলেও বিকাল ৩টার পর থেকে ৪টা পর্যন্ত এক ঘণ্টায় অস্বাভাবিক গতিতে ভোটের হার বেড়েছে।

ইসির তথ্য অনুযায়ী, সিরাজগঞ্জ-১ আসনে ১৭৪টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ৬৪টি কেন্দ্রে ৮০ শতাংশ বা তার বেশি হারে ভোট পড়েছে। অপরদিকে মাত্র ২টি কেন্দ্রে ৩০ শতাংশের কম ভোট পড়েছে। আসনটিতে ভোট পড়েছে ৭২ দশমিক ৩২ শতাংশ। অন্যদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ আসনের ৯১টি কেন্দ্রের মধ্যে ৩০টিতেই ৮০ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছে। বাকি ৬১টি কেন্দ্রের মধ্যে ৬০টিতে ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পড়ে। বাকি একটিতে ৪৭ দশমিক ৪৫ শতাংশ ভোট পড়েছে। এখানে ভোট পড়ার হার ৭৬ শতাংশ।

একই আসনে কেন্দ্রে কেন্দ্রে ভোট পড়ার হারে বড় পার্থক্যকে অস্বাভাবিক বলছেন নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, নির্বাচন কমিশনই একেক সময় ভোট পড়ার হার নিয়ে একেক ধরনের তথ্য দিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি করেছে। সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, কেন্দ্রে কেন্দ্রে ভোট পড়ার এই ব্যবধান অস্বাভাবিক। নির্বাচনের ফলাফল ইসিই বিতর্কিত করেছে। ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পর সিইসি নির্বাচনে ২৮ শতাংশ ভোট পড়েছে জানানোর পর তাকে পাশ থেকে শুধরিয়ে ৪০ শতাংশ ভোট পড়ার কথা বলা হয়। সিইসিও ওই ঘোষণা দেন।
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, বর্তমান ভোটিং পদ্ধতিতে জাল ভোট দেয়া সহজ। কারণ, ভোটার শনাক্ত করা হয় না। ভোটার শনাক্তকরণ পদ্ধতি ভালো হলে ভোটের হার কমে যেতো। কারণ, মানুষ ভোট দিতে যায়নি। আরেকজনের ভোট দিতে গেলেও তো শনাক্ত করা হবে না। এজন্য ডিজিটাল শনাক্তকরণ পদ্ধতি থাকা উচিত বলে জানান তিনি।

ওদিকে শেষ ঘণ্টার ভোটের হার নিয়ে অভিযোগ করেছে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা প্রার্থীরাও। নির্বাচনে শেষের দিকে ফরিদপুর-১ আসনে জাল ভোটসহ অনিয়মের অভিযোগ এনে ভোট পুনরায় গণনা ও অর্ধশতাধিক ভোটকেন্দ্রে পুনর্নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আরিফুর রহমান দোলন। অনিয়মের ভিডিও ও স্থিরচিত্রসহ বুধবার আসনটির অর্ধশতাধিক কেন্দ্রে নানা অনিয়মের তথ্য-প্রমাণাদি তুলে ধরে সিইসি’র কাছে লিখিত অভিযোগপত্র দাখিল করেন। অভিযোগপত্রে বলা হয়, ভোটের শেষ দিকে অর্ধশতাধিক কেন্দ্রে ব্যাপক অনিয়ম, মৃত মানুষের ভোটসহ নানা উপায়ে জালভোট প্রদান ও ভোট শেষ হওয়ার পরেও কেন্দ্রের ভেতরে ঢুকে নৌকার পক্ষে ভোট কাটা হয়। প্রিজাইডিং কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রগুলোর নির্বাচনী কর্মকর্তা ও প্রশাসনের যোগসাজশে নৌকা মার্কার পক্ষে নির্বাচনী বিধিসহ আচরণবিধি লঙ্ঘনের মতো অবৈধ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।

গাইবান্ধা-১ আসনের জাতীয় পার্টির প্রার্থী ও একাদশ জাতীয় সংসদের সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেছেন, ভোটে কারচুপি হয়েছে। শতকরা ৯০ ভাগ কেন্দ্রে আমি ২-৩ জনের বেশি ভোটার দেখিনি। আমাদের সমর্থক ভোটাররা প্রথমে সকাল ১০টার মধ্যে ভোট দিয়ে দিয়েছেন। সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত নগণ্য ভোটার উপস্থিতি ছিল। কিন্তু দিন শেষে কাস্টিং যা দেখলাম, আমার মনে হয়েছে, এখানে ভোট কারচুপি হয়েছে।

ময়মনসিংহ-১০ আসনে ঈগল প্রতীকের প্রার্থী কায়সার আহাম্মদ বলেছেন, অস্ত্র দেখিয়ে আমার এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেয় নৌকার সমর্থকরা। কিছু কেন্দ্রে ভোট শুরুর আগেই ব্যালট পেপারে নৌকায় সিল মেরে রাখা হয়েছিল। ভোটকেন্দ্রগুলো ছিল ভোটারশূন্য। নৌকার লোকজন কেন্দ্র দখল করে অনবরত সিল মেরে ব্যালট বাক্স ভরেছে। আমরা এই ভোট বাতিল করে পুনরায় সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি জানাই।মানবজমিন

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions