ডেস্ক রির্পোট:- সদ্য সমাপ্ত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কারচুপি ও অনিয়মের অভিযোগ করেছেন পরাজিত প্রার্থীরা। গতকাল বুধবার পর্যন্ত ২১ জন প্রার্থী এমন অভিযোগ এনেছেন। তাঁদের মধ্যে ১৯ জনই আওয়ামী লীগের নেতা। তাঁদের মধ্যে কয়েকজন আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেন। দুজন ১৪ দলীয় জোটের নেতা এবং নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেছেন।
গতকাল পর্যন্ত ৯ জন প্রার্থী নির্বাচন কমিশনে (ইসি) অভিযোগ জমা দিয়েছেন বলে জানা গেছে। কেউ কেউ কমিশনে এসে করণীয় সম্পর্কে খোঁজখবর নিচ্ছেন। এর আগে ভোটকেন্দ্র দখল, জাল ভোট, এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়াসহ নানা অভিযোগে ৭ জানুয়ারি ভোটের দিন নির্বাচন বর্জন করার কথা জানান অর্ধশতাধিক প্রার্থী।
নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করা কুষ্টিয়া-২ আসনের প্রার্থী জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু, মাদারীপুর-৩ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আব্দুস সোবহান গোলাপ ও বরগুনা-১ আসনের একই দলের ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু সংবাদ সম্মেলন করে কারচুপির অভিযোগ এনেছেন। গণমাধ্যমে ভোটে সূক্ষ্ম কারচুপির অভিযোগ করা স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন ফরিদপুর-২ আসনের মোহাম্মাদ জামাল হোসেন মিয়া, লালমনিরহাট-২ আসনের সিরাজুল হক, পাবনা-৩ আসনের মো. আব্দুল হামিদ, ময়মনসিংহ-১০ আসনের আবুল হোসেন ও কায়সার আহমেদ, রাজশাহী-১ আসনের গোলাম রব্বানী, রাজশাহী-৪ আসনের এনামুল হক, রাজশাহী-৫ আসনের ওবায়দুর রহমান ও রাজশাহী-৬ আসনের রাহেনুল হক রায়হান। এ ছাড়া ফলাফল ঘোষণার পরপরই কারচুপির অভিযোগ করেছেন ঢাকা-৫ আসনের একই দলের প্রার্থী হারুনর রশিদ মুন্না।
ইসি সূত্রে জানা যায়, ভোট নিয়ে ইসিতে অভিযোগ দিয়েছেন ফরিদপুর-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আরিফুর রহমান দোলন, ঢাকা-৪ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী সানজিদা খানম, পিরোজপুর-৩ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. রুস্তম আলী ফরাজী, রাজবাড়ী-২ আসনের নূরে আলম সিদ্দিকী, গোপালগঞ্জ-১ আসনের মো. কবির মিয়া, ঝিনাইদহ-১ আসনের নজরুল ইসলাম, ময়মনসিংহ-৩ আসনের সোমনাথ সাহা, রাজশাহী-২ আসনের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ১৪ দলীয় জোটের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির ফজলে হোসেন বাদশা প্রমুখ। করণীয় সম্পর্কে খোঁজ নিতে গতকাল ইসিতে এসেছিলেন মানিকগঞ্জ-২ আসনে আওয়ামী লীগের পরাজিত প্রার্থী মমতাজ বেগমসহ বেশ কয়েকজন।
সূত্র জানায়, কারচুপির অভিযোগ এনে গতকাল স্বতন্ত্র প্রার্থী আরিফুর রহমান দোলন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের কাছে চিঠি দেন।
অনিয়মের ভিডিও, স্থিরচিত্রসহ তথ্য-প্রমাণাদি তুলে ধরে লিখিত অভিযোগে তিনি অনিয়ম হওয়া অর্ধশতাধিক কেন্দ্রের ভোট বাতিল করে পুনর্নির্বাচন চেয়েছেন। আরও কিছু কেন্দ্রের ভোট পুনরায় গণনারও দাবি জানান তিনি। মৃত ও প্রবাসী ভোটারের ভোট নেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ তাঁর।
এ ছাড়া ভোটে কারচুপি, যোগসাজশে নির্বাচনী ফল পরিবর্তন ও কেন্দ্রে অনিয়মের অভিযোগ এনে ফলাফল স্থগিত চেয়ে সিইসিকে চিঠি দিয়েছেন সানজিদা খানম। রুস্তম আলী ফরাজী অভিযোগ করেছেন, ৫০টির বেশি ভোটকেন্দ্রে প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী বিজয়ী প্রার্থীর পক্ষে ২০ হাজার ভোট কেটে দিয়েছেন। ব্যাপক অনিয়ম, জালভোট ও পুনরায় গণনার দাবি জানিয়েছেন কবির মিয়া। ২১টি ভোটকেন্দ্রের ফলাফল স্থগিত ও পুনরায় ভোট গ্রহণের জন্য আবেদন করেছেন নজরুল ইসলাম। ভোট পুনর্গণনা, অবৈধ ফলাফল বাতিল এবং পুনরায় ভোট গ্রহণের আবেদন করেছেন সোমনাথ সাহা। অবশ্য অনিয়মের কারণে এই আসনের একটি কেন্দ্রের ভোট বাতিল করা হয়েছে। এই কেন্দ্রে আগামী শনিবার ভোট গ্রহণ করা হবে।
অভিযোগ জমার বিষয়ে ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, যেসব অভিযোগ জমা পড়েছে, সেগুলো কমিশনে নথি আকারে উপস্থাপন করা হচ্ছে। কমিশন যে সিদ্ধান্ত দেবে, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ৩০০ আসনের মধ্যে ২৯৮টির ফলাফল অনুযায়ী, নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন ২২২টিতে, স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ৬২টি আসনে। লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা ১১টি আসনে এবং জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি ও কল্যাণ পার্টি ১টি করে আসনে বিজয়ী হয়েছে।
অনিয়মের অভিযোগের বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, এই নির্বাচন আওয়ামী লীগের নিজেদের মধ্যে নির্বাচন। এখানেও বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ আসছে। নির্বাচন কমিশনের উচিত এগুলোর তদন্ত করে নির্বাচনকে কলুষমুক্ত করা।