ডেস্ক রির্পোট:- দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লড়তে ২৯৮ আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। বিষয়টি নিয়ে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে মহাজোটের শরিকদের মধ্যে। যদিও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ জানিয়েছেন- প্রার্থী ঘোষণা করা হলেও শরিকদের সঙ্গে সমন্বয় করা হবে। তবে ১৪ দলের শরিকরা মনে করে প্রার্থী ঘোষণার পর সমন্বয় করা হলেও নির্বাচনী মাঠে অসুবিধা সৃষ্টি হবে। এমনকি আওয়ামী লীগের ঘোষিত প্রার্থী কিংবা বিদ্রোহী কেউ নির্বাচনী মাঠে সক্রিয় থাকলে ১৪ দলের প্রার্থীদের জিতে আসা কঠিন হবে। ১৪ দলের শরিক একাধিক শীর্ষ নেতার সঙ্গে কথা বলে এমনটা জানা গেছে। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ অনেকে।
জোট নেতারা মনে করেন, আওয়ামী লীগের বন্ধু কেবল ১৪ দলের শরিকরা। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের কোনো বন্ধু নেই। যেনতেন ভাবে নির্বাচনী চ্যালেঞ্জ পার হয়ে যাওয়া সহজ হলেও পরবর্তীতে শরিকদের লাগবে। কারণ নির্বাচন পরবর্তী বিভিন্ন পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হতে পারে আওয়ামী লীগকে। তাই শরিকদের অবজ্ঞা করলে মাসুল দিতে হবে।
অবশ্য দলীয় প্রার্থী ঘোষণা নিয়ে ১৪ দলে অসন্তোষ নতুন নয়। এর আগেও তাদের মধ্যে টানাপড়েন দেখা গেছে। বিশেষ করে চলতি বছরের শুরুতে ৬টি আসনের উপনির্বাচনে জোটের প্রার্থীদের পক্ষে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা মাঠে না নামায় ক্ষুব্ধ হয় শরিককরা। এ ছাড়াও একাদশ সংসদ নির্বাচনে জিতে আসার পর আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রিসভায় জায়গা হয়নি শরিকদের। জোট নেত্রী শেখ হাসিনাও নির্বাচনের পর শরিকদের সঙ্গে বসেননি। দীর্ঘ তিন বছর পর ২০২২ সালে শরিকদের সঙ্গে প্রথম বৈঠক করেন তিনি। এরপর গত জুলাইতে ১৬ মাস পর দ্বিতীয়বারের মতো শরিকদের সঙ্গে বসেন শেখ হাসিনা। এসব নিয়েও অসন্তোষ রয়েছে ১৪ দলে। সবশেষ যোগ হয়েছে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ঘোষণা।
দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করা হলেও জোটের সঙ্গে সমন্বয় করা হবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, ২০০৮ সালেও আমরা জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করেছিলাম। তখনো কিন্তু প্রায় ৩০০ আসনে নমিনেশন দেয়া হয়েছিল। পরে মহাজোটের মধ্যে সমন্বয় করা হয়। গতবারও প্রায় সব আসনে নমিনেশন দিয়ে পরে জোটের সঙ্গে সমন্বয় করা হয়েছিল। এখনো ২৯৮ সিটে নমিনেশন দেয়া হয়েছে। আমরা প্রথমেই বলেছি জোটবদ্ধ নির্বাচন করবো। সেটি আমাদের দলের পক্ষ থেকে ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। নমিনেশন দিলেও জোটের সঙ্গে সমন্বয় করা হবে।
তবে দলীয় প্রার্থী ঘোষণার পর সমন্বয় করা হলেও নির্বাচনী মাঠে অসুবিধা হবে বলে মনে করেন ১৪ দলের অন্যতম শরিক বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ তাদের প্রার্থিতা ঘোষণা করেছে। আমরা আমাদের প্রস্তুতি নিচ্ছি। যদিও তথ্যমন্ত্রী বলেছেন, জোটের সঙ্গে সমন্বয় করা হবে। দেখা যাক কী হয়। তবে ২৯৮ আসনে প্রার্থিতা ঘোষণা করার পর নতুন করে সমন্বয় করলেও নির্বাচনী মাঠে অসুবিধা হবে। আমরা জোটের সভার জন্য অপেক্ষা করছি। সেখানে কী সিদ্ধান্ত নেয়া হয় তার ওপর পরবর্তী করণীয় নির্ভর করবে। আমরা আমাদের মতো নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমাদের কাজও শুরু হয়েছে।
অন্যদিকে প্রার্থিতা ঘোষণা করলেও জটিলতা তৈরি হবে না বলে মনে করেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ২৯৮টি আসনে তাদের দলীয় প্রার্থী বাছাই করেছে। আমরাও আমাদের দলের জন্য দলীয় প্রার্থী বাছাই করেছি। এটা নির্বাচন কমিশনের আইন অনুযায়ী করা হয়েছে। তবে প্রতীক বরাদ্দ হয়ে গেলে চূড়ান্তভাবে জানা যাবে, কে কোন আসনে প্রার্থী হিসেবে টিকলো। আমরা জোটগত আসন বরাদ্দ ও নির্বাচন পরিকল্পনা নিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় বসবো। আলোচনার মধ্যদিয়ে চূড়ান্ত প্রার্থিতা ঠিক করা হবে। প্রতীক বরাদ্দ না পাওয়া পর্যন্ত সবাই প্রার্থী থাকবেন। জোটগত সিদ্ধান্ত আসার পরে প্রতীক যাকে বরাদ্দ দেয়া হবে তিনিই প্রার্থী হিসেবে টিকে থাকবেন। এখন আওয়ামী লীগ কিংবা জাসদ প্রার্থিতা ঘোষণা করলেও এটা নিয়ে কোনো জটিলতা তৈরি হবে না।
জাতীয় পার্টির (জেপি) মহাসচিব শেখ শহীদুল ইসলাম বলেন, সব দলই ৩০০ আসনে মনোনয়ন দিচ্ছে, আমরাও দিচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন আলোচনা হবে, আলোচনা করেই জোটবদ্ধ নির্বাচন হবে। জোটবদ্ধ নির্বাচনের বিষয়টি আওয়ামী লীগ নির্বাচন কমিশনকেও জানিয়েছে। তবে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ঘোষণা করে দেয়ায় একটা জটিলতা হবেই। প্রার্থী ঘোষণার আগে যদি শরিকদের সঙ্গে নেগোসিয়েশন করা যেতো তাহলে উত্তম হতো। তবে আমরা মনে করি খুব বেশি অসুবিধা হবে না। কারণ জোট নেত্রীর প্রতি আমাদের আস্থা আছে।
বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী বলেন, কেবল তো মনোনয়ন দিয়েছে, প্রতীক দেয়া হয়নি। প্রতীক দেয়া হবে আরও পরে। সেই চিঠিতে জোটের বিষয়টি আসবে। শেখ হাসিনা যেখানে যেখানে জোটের সঙ্গে সমন্বয় করবেন সেখানে দলীয় প্রার্থীকে প্রতীক দেবেন না। তখন দলীয় প্রার্থী অটোমেটিক বাদ পড়বে। নৌকা না থাকলে যাকে দেয়া হচ্ছে সে সরে যাবে।
তবে ২৯৮ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ঘোষণা করায় অনেক জায়গায় জটিলতা তৈরি হবে বলে মনে করেন তিনি। বলেন, আমার আসনে জটিলতা হবে না। কারণ আমার সঙ্গে আওয়ামী লীগের সবার সম্পর্ক ভালো। আমার সক্ষমতা আছে। অন্যদের ক্ষেত্রে সেই অবস্থা নাও থাকতে পারে। তখন জটিলতা তৈরি হতে পারে। আরেকটা কথা হচ্ছে ২০১৪, ১০১৮তেও এমন প্রার্থী দেয়া হয়েছিল, পরে জোটবদ্ধ নির্বাচন হয়েছে। আমি বিষয়টিকে নেগেটিভলি নিচ্ছি না। এটা একটা রণকৌশল। যেটি আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকও বলেছেন। জোট থাকবে। বিএনপি না আসলেও জোটবদ্ধ নির্বাচন হবে। নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী বলেন, একটা বিষয় মনে রাখতে হবে- আমরা না থাকলে আওয়ামী লীগ বন্ধু ছাড়া হয়ে যাবে। কারণ নির্বাচন হয়ে যাবে কিন্তু যা হওয়ার পরে হবে। তাই ইলেকশনের পর কী হবে তা নিয়ে চিন্তা করতে হবে। বন্ধু ছাড়া নির্বাচনে জিতে আসা যাবে। কিন্তু পরে বন্ধুর দরকার হবে। আমরাই আওয়ামী লীগের বন্ধু।
বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া বলেন, প্রার্থী ঘোষণার বিষয়ে আমাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়নি। যারা ঘোষণা করেছেন তারাই জানেন কেন এভাবে ঘোষণা করেছেন। আমরা আমাদের মতো নির্বাচন করবো। তার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি।মানবজমিন