শিরোনাম

আমাদের স্বল্পদৈর্ঘ্য কুয়াকাটা ভ্রমণ সমাচার,’সাগর কন্যার সূর্যোদয়’!!

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় শনিবার, ১১ মার্চ, ২০২৩
  • ৪৬৮ দেখা হয়েছে

Basantadut Ruma:- বিশাল সমুদ্রের নীল জলরাশি দোলনার মতো যখন দুলে দুলে তীরে আসতে থাকে শত সহস্র স্বপ্ন নিয়ে, তখন পূর্ব আকাশে সূর্যের হালকা রক্তিম বৃত্তের আলোতে আলোকিত হয়ে পাল্টে যায় কুয়াকাটার সমুদ্রের নীলাভ জল। লাল বর্ণের সূর্যটা অল্প সময়ের মধ্যেই পূর্ণ বৃত্তে রূপ নেয়। আর কেন্দ্রের বুকে তখন তীব্র রক্তক্ষরণ।
পৃথিবীর দুটি মাত্র অঞ্চলে একই স্থানে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত দেখা যায়। পূর্বে সূর্যোদয় আর পশ্চিমে সূর্যের প্রস্থান।বাংলাদেশের সেই স্থানটি হলো কুয়াকাটা (Kuakata) ১৮ কিমি দৈর্ঘ্য । যা দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র সৈকত (Sea beach) যেখান থেকে সূর্যোদয় (Sunrise) ও সূর্যাস্ত (Sunset) দুটোই দেখা যায়।
এই নিয়ে দু’বার কুয়াকাটা গেলাম সূর্যোদয় দেখবার ইচ্ছেটা প্রবল হলো এবার। কুয়াকাটা আমার মহামান্য স্বামীর প্রপার্টি দেখভালের জন্য যাওয়া তবুও মন মহুয়ার বনে কেবল সূর্যের হাতছানি!!
ফাল্গুনী ভোরে ৫:৪৫ মিনিটে আমাদের গাড়ি নিয়ে রওনা হলাম বেড়িবাঁধ ধরে পূর্বের দিকে।
সূর্যোদয়ের পূর্ণাঙ্গ দৃশ্য দেখতে হলে যেতে হবে মূল সমুদ্র সৈকত থেকে প্রায় আট কিলোমিটার পূর্বে, গঙ্গামতির চর পেরিয়ে কাউয়ার চর। সেখান থেকেই দেখা মিলবে সূর্যোদয়। তখনো জানিনা কতটা পথ!!
প্রয়োজন জানিয়ে দেয় পথের সীমানা…..
কুয়াকাটা থেকে ভাড়া করা মোটরসাইকেলে বা যানবাহনে সৈকত ধরে এগোতে থাকলে মিলবে গঙ্গামতির চর, এরপর কাউয়ার চর। আগে থেকেই ঠিক করে রাখা মোটরসাইকেলে চেপে যেতে হবে সে জায়গায়। আমি আর আমার ছোট্ট অনুভব বাইকে উঠে
রওনা হলাম সূর্যমুখীর দেশে।
গঙ্গামতির চরে সূর্যোদয়ের দৃশ্য দেখার জন্য ভোর থেকে দর্শনার্থীরা অপেক্ষায় থাকায় সেখানে বসেছে বেশ কয়েকটি খাবার দোকান, ডাব-পানীয়ের স্টল। সূর্যোদয় দেখতে এই স্থানেই ভিড় বেশি থাকে দর্শনার্থীদের।
স্বল্প আয়ের, মধ্য আয়ের, উচ্চ আয়ের দর্শনার্থীরা একত্রিত হয়েছে শ্রেণি বৈষম্য ভুলে।
আমি মনে মনে গাইছিলাম “হায়রে আমার মন মাতানো দেশ রূপ দেখে তোর কেন আমার পরান ভরে না….. ”
সদ্য জাগা রক্তিম সূর্য, নিচে সমুদ্রের নীল জল, দীর্ঘ বেলাভূমি আর সমদ্রতটের পাশের ঘন সবুজ ঝাউবনের সমন্বয়ে কুয়াকাটা (Kuakata) সৈকত হয়ে উঠে শিল্পীর আঁকা কোন ছবি।
সৈকতে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয়-সূর্যাস্তের অপরূপ দৃশ্য, লাল কাঁকড়ার সাথে অবিরাম ছোটাছুটি, বালুকা বেলায় প্রিয়জনের সাথে মানে আমার মহামান্য স্বামীর হাত ধরে হাঁটাহাঁটি, দিগন্ত জোড়া আকাশ আর সমুদ্রের নীল জলের তরঙ্গায়িত ঢেউ ও উড়ে যাওয়া সাদা গাংচিলের দল, মাছ শিকারের জন্য যাওয়া লড়াকু জেলেদের চলাচল ও মাছ শিকার , সৈকতের এক পাশে বিশাল সমুদ্র আর অন্য পাশে আছে নারিকেল গাছের সারি, বুনো কাঠগোলাপ আর রঙবেরঙের বুনো ফুল, ঝাউগাছ, বেলাভূমি, অনিন্দ্য সুন্দর সৈকত এবং ম্যানগ্রোভ বন, ওপারে সুন্দরবনের অংশ বিশেষ ফাতরার চর, কুয়াকাটাকে দিয়েছে ভিন্ন মাত্রা।
গোধূলিতে পাখির কিচির-মিচির শব্দ আর জেলেদের (Fishermen) বাড়ী ফেরার সাথে মিল রেখে সাগরের ঢেউয়ের মধ্যে আস্তে আস্তে হারিয়ে যায় লাল থালার মত সূর্যটা।মনে হয় সাগরের মধ্যেই সূর্যের বাড়ি ঘর।
দোলপূর্ণিমার রাতে (Full Moon) কুয়াকাটায় যাওয়া মানেই আমার মনের মধ্যে আঁকা ছবিকে হার মানায়। চাঁদের আলোয় বিশাল বিশাল ঢেউগুলো যেন আমাদের জন্য ছুটে আসে। সাথে হরেক রকম মাছ ভাজা,ভর্তা,ঝালমুড়ি খেতে দারুণ লাগে। মাঝে মাঝে ফানুস উড়িয়ে মনের বেদনা হালকা করে পর্যটক।
কুয়াকাটা স্থানীয়রা যাকে ডাকে সাগর কন্যা বলে যা বাংলাদেশের (Bangladesh) সর্ব দক্ষিণে পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার মহিপুর থানার লতাচাপলী ইউনিয়নে কুয়াকাটা অবস্থিত। একেবারে দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর (bay of Bengal) কূলের নিরিবিলি একটি স্থান। পূর্বে গজমতির সংরক্ষিত বনাঞ্চল, পশ্চিমে কুয়াকাটার বনভূমি, উত্তরে কলাপাড়া জনপদ ও দক্ষিণে বিশাল বঙ্গোপসাগর। যেখানে দীর্ঘ ১৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যর কুয়াকাটা বাংলাদেশের অন্যতম নৈসর্গিক সমুদ্র সৈকত যার যেকোন স্থানে দাঁড়িয়ে উপভোগ করা যায় সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য।
কূপ কিংবা কুয়া থেকে কুয়াকাটা
ইতিহাসে যতটুকু জানা যায়, বর্মিরাজা ১৭৮৪ সালে রাখাইনদের মাতৃভূমি আরাকান দখল করার ফলে হাজার হাজার রাখাইন তাদের মাতৃভূমি আরাকান ত্যাগ করে। বড় বড় নৌকায় করে অজানা গন্তব্যের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ে। ভাসতে ভাসতে তারা বঙ্গোপসাগরের তীরের রাঙাবালি দ্বীপে এসে অবতরণ করে। গড়ে তোলে নতুন বসতি। তৎকালীন বাকেরগঞ্জ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এইচ বিভারেজের অনুসন্ধানী জরিপ মতে অঞ্জু মং-এর নেতৃত্বে এ এলাকায় প্রথম আদিবাসী হিসেবে রাখাইন সম্প্রদায়ের আগমন ঘটে। পরে থুঙ্গারী ও হাঙ্গারী মং দু ভাইয়ের নেতৃত্বে বন জঙ্গল কেটে রাখাইন সম্প্রদায় আবাসভূমি গড়তে শুরু করে, মিষ্টি পানির অভাব মেটাতে রাখাইনরা বালুমাটি খুঁড়ে ছোট ছোট কূপ খনন করে পানি সংগ্রহ করত। ‘কুয়া’ শব্দটি এসেছে ‘কূপ’ থেকে। কুয়া খনন করে এখানে সুপেয় পানি পাওয়ায় তারা এর নাম দিয়েছিল কুয়াকাটা!!
ধন্যবাদ মহামান্য পাঠকবৃন্দ।ফেসবুক থেকে

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.net
Website Design By Kidarkar It solutions