খাগড়াছড়ি;-খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙ্গা উপজেলার আমতলী ইউনিয়নের পাহাড়ী দুর্গম বামা গোমতি এলাকায় মাটি খুঁড়ে কালো কয়লার সন্ধান পেয়েছে স্থানীয়রা। আমতলী ইউনিয়ন থেকে ৫ কিলোমিটারেরও বেশি পাহাড়ি সরু পথ আর ঝিরি মাড়িয়ে ৮নং ওয়ার্ডের দুর্গম বামা গোমতীতে মাটি খুঁড়ে সম্ভাব্য কয়লার খনির সন্ধান মিলেছে। মাটিরাঙ্গা উপজেলা থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে আমতলী ইউনিয়ন সদর থেকে মোটরসাইকেল ও ঘণ্টাখানেক পায়ে হেঁটে পাহাড়ি উঁচুনিচু পথ পেরিয়ে দুর্গম বামা গোমতী পৌঁছানো যায়।
বৃহস্পতিবার (৯ মার্চ) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, স্থানীয় লোকজন কোদাল দিয়ে মাটি খুঁড়ে কয়লা বের করে নিয়ে আসছে। এই কয়লা এনে তারা শুকিয়ে বাসা বাড়িতে রান্নার কাজে ব্যবহার করছেন। তবে সেখানে বেশ কয়েকটি জায়গায় এমন কয়লা আছে বলে জানিয়েছেন তারা।
জানা গেছে, এক বছর আগে দুর্গম পাহাড়ে কৃষি কাজ করার উদ্দেশ্যে মাটি খনন করতে গিয়ে এ কয়লার সন্ধান পান তারা। ইতোমধ্যে এসব কয়লা সংগ্রহ করে তারা রান্নার কাজে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহারও করছেন। কালো সোনা খ্যাত কয়লার খনি দেখতে স্থানীয়রা প্রতিদিন সেখানে ছুটে গেলেও এখনো তা প্রশাসনের নজরে আসেনি।
স্থানীয় কৃষক মো. হানিফ বলেন, প্রায় বছর খানেক আগে আদা-হলুদ রোপণের জন্য মাটি খনন করতে গিয়ে কয়লা দেখতে পাই। পরে কৌতূহলী হয়ে এসব কয়লা সংগ্রহ করে আগুনে পুড়িয়ে বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছি। অন্যদের জানালে অনেকেই আগ্রহী হয়ে সেসব কয়লা সংগ্রহ করে পারিবারিক কাজে ব্যবহার করছে।
আমতলী ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মো. ইউনুছ মিয়া বলেন, বামা গোমতি এলাকায় কয়লা পাওয়ার বিষয়টি আমরা শুনেছি সরকার যদি যাচাই বাছাই করে কয়লা উত্তোলন করা হলে বর্তমান দেশের যে জ্বালানি সংকট রয়েছে তার ঘাটতি পুরন হবে। দুর্গম পাহাড়ে কয়লা পাওয়ার বিষয়টি সঠিক হলে তা পাহাড়ের বড় পাওয়া হবে বলেও মনে করেন তিনি। বামা গোমতির একাধিক স্থানে মাটির নীচে কয়লা থাকার কথা জানিয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য নিলয় ত্রিপুরা কয়লা উত্তোলনে সরকারী উদ্যোগ নেয়ার দাবী জানান।
গোমতি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো:মনির হোসেন জানান বৃহত্তর বামা গোমতি এলাকার কয়লার খনির সন্ধান পাওয়া গেছে স্থানীয়দের কাছে আমি শুনেছি। বিষয়টি যদি সত্যি হয় সরকার জ্বালানীয় খনিজ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করে। কয়লার সন্ধান যদি পাওয়া যায় তাহলে বর্তমান সরকারের জ্বালানি সংকট যেভাবে নিরসন হবে তেমনি স্থানীয় বাসিন্দাদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
আমতলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল গণি বলেন, দূর্গম পাহাড়ী বামা গোমতি এলাকায় মাটি খুড়ে পাওয়া কয়লার বিষয়টি যাচাই করে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া হলে দেশে বিদ্যমান কয়লা ঘাটতি পুরণ হবে। বিদ্যুতের যে জ্বালানি সঙ্কট রয়েছে তাও দুরীভুত হবে। পাশাপাশি নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে বলেও মনে করেন তিনি।
কয়লা রাষ্ট্রীয় তেল-গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের বিশেষজ্ঞদের দ্বারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানোর দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। তারা বলছেন, বামা গোমতীতে কয়লার খনি আবিষ্কৃত হলে তাদের ভাগ্য বদলে যাবে।
খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক মো: সহিদুজ্জামান বলেন, আমি বিষয়টি শুনেছি মাটিরাঙ্গা উপজেলার আমতলী ইউনিয়নের বামা গোমতী এলাকায় কয়লা পাওয়া যাচ্ছে। স্থানীয়রা জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করছে। আমি সংশ্লিষ্ট নির্বাহী কর্মকর্তাকে বলেছি বিষয়টি তদন্ত করে আমাদের কাছে রিপোর্ট পাঠানোর জন্য ।রিপোর্ট পাওয়ার পরে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে। মাটিরাঙ্গা উপজেলার বামা গোমতীতে কয়লা পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হলে দেশের জ্বালানি সংকট নিরসন হবে বলে জানান তিনি।