ডেস্ক রির্পোট:- ইরানে স্কুলে পড়ুয়া ৫ হাজারেও বেশি মেয়ে শিক্ষার্থী বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে। বিষক্রিয়ার ঘটনা তদন্তকারী দলের একজন আইনপ্রণেতার বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি।
গত নভেম্বরের শেষের দিকে ইরানের স্কুলগুলোতে অনেক ছাত্রী অজানা বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হতে শুরু করে। সেই বিষক্রিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে বাড়তে সম্প্রতি ৫ হাজার পেরিয়ে গেছে। ঘটনার তদন্ত করছে সংসদীয় ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং কমিটির। ওই কমিটির একজন সদস্য ও আইনপ্রণেতা মোহাম্মদ হাসান আফসারি স্থানীয় বার্তা সংস্থা আইএসএনএকে বলেছেন, ‘সারা দেশের ২৫টি প্রদেশের অন্তত ২৩০টি স্কুলে এ বিষক্রিয়ার ঘটনা ঘটেছে। এসব স্কুলের ৫ হাজারেও বেশি ছাত্রী বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে।’
বিষের ধরন ও কারণ শনাক্ত করতে বিভিন্ন পরীক্ষা করা হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। মোহাম্মদ হাসান আফসারি বলেন, এখনো পর্যন্ত ব্যবহৃত বিষের ধরনের বিষয়ে কোনো নির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি।’
ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খোমেনি গত সোমবার বলেছেন, যারা বিষক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত তারা অমার্জনীয় অপরাধ করেছে। তিনি অবিলম্বে অপরাধীদের খুঁজে বের করার নির্দেশ দিয়েছেন।
প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি বিষক্রিয়ার সর্বশেষ তথ্য সরবরাহ করতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে দায়িত্ব দিয়েছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, হাসপাতালে ভর্তি হওয়া পাঁচ শতাংশেরও কম শিক্ষার্থী গুরুতর অসুস্থ হয়েছে।
এদিকে বার্তা সংস্থা আইএসএনএ জানিয়েছে, সর্বশেষ দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় জাহেদান শহরের একটি স্কুলে ৪০ জন শিক্ষার্থী বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে।
হোয়াইট হাউস গত সোমবার এ বিষক্রিয়ার ঘটনার স্বাধীন ও বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত করতে ইরানকে আহ্বান জানিয়েছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, বিষক্রিয়ার ঘটনার জেরে ইরানের রাজধানী ও অন্যান্য শহরে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, গত শনিবার তেহরানসহ আশপাশের কয়েকটি শহরে উদ্বিগ্ন অভিভাবকেরা প্রতিবাদ করছেন। তাঁরা ইরানের নিরাপত্তা বাহিনী বিপ্লবী গার্ডের বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়েছেন। অনেক বিক্ষোভকারী বিপ্লবী গার্ডকে জঙ্গি সংগঠন ‘ইসলামিক স্টেট’ গ্রুপের সঙ্গে তুলনা করেছেন।
জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় গত শুক্রবার ইরান সরকারকে স্কুলগুলোতে বিষ প্রয়োগের সঠিক তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে। এ ছাড়া জার্মানি ও যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কয়েকটি দেশ এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
ইরান সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নাসের কানানি রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘ইরান সরকারের তাৎক্ষণিক অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে এ সমস্যার সমাধান বের করার চেষ্টা করছে। কারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তাদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা হবে।
এর আগে গত বছরের সেপ্টেম্বরে পুলিশি হেফাজতে কুর্দি তরুণী মাশা আমিনির মৃত্যুকে ঘিরে সারা ইরানে বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছিল। কয়েক মাসের বিক্ষোভে অনেক প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে।