ডেস্ক রির্পোট:- “প্রাণ-প্রকৃতি ও পরিবেশ বিনষ্টকারী লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজের ইজারা বাতিল কর” শ্লোগানে লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজের দায়েরকৃত ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলায় ভূমি রক্ষা সংগ্রাম কমিটির নেতা মথি ত্রিপুরাকে বেআইনি আটকের প্রতিবাদে এবং ম্রো ও ত্রিপুরাদের নামে মোয়াজ্জেম হোসেন, জহিরুল ইসলাম ও কামাল উদ্দীন কর্তৃক দায়েরকৃত সকল ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে ঢাকায় হাইকোর্টে সম্মুখে প্রতীকী অনশন ও প্রধান বিচারপতির বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করেছে লামা সরই ভূমি রক্ষা সংগ্রাম কমিটি।
আজ মঙ্গলবার (৭ মার্চ ২০২৩) সকাল ১১ থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত দুই ঘন্টাব্যাপী এই প্রতীকী অনশন কর্মসূচি পালন করা হয়। এ সময় রুংধজন ত্রিপুরার নেতৃত্বে দুই জনের একটি টিম প্রধান বিচারপতির বরাবরে একটি স্মারকলিপি প্রদান করেন। প্রধান বিচারপতির পক্ষে স্মারকলিপিটি গ্রহণ করেন প্রধান বিচারপতি একান্ত সচিব (রেজিস্টার বিভাগ) গোলাম রাব্বানী।
প্রতীকী অনশন চলাকালে বক্তব্য রাখেন লামা সরই ভূমি রক্ষা সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক রুংধজন ত্রিপুরার, সদস্য সচিব লাংকম ম্রো, সদস্য যোহন ম্রো।
এতে সংহতি জানিয়ে আরও বক্তব্য রাখেন জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল হাকিম, মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ডা. হারুনুর রশিদ, শ্রমিক ফেডারেশনের দপ্তর সম্পাদক বিধান দাস, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সাধারণ সম্পাদক জিকো ত্রিপুরা, গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের সমন্বয়ক ও গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সভাপতি সাইদুল হক নিশান, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি মিতু সরকার, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সহ-সভাপতি অংকন চাকমা, সাংগঠনিক সম্পাদক অমল ত্রিপুরা, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রগতি বর্মণ তমা।
প্রতীকী অনশন কর্মসূচিতে লামা সরই ভূমি রক্ষা সংগ্রাম কমিটি’র অন্যান্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে উপস্থিত ছিলেন ভূমিহীন গণপরিষদের আহ্বায়ক কামরুজ্জামান ফিরোজ, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সদস্য রূপসী চাকমা প্রমূখ।
সমাবেশে জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলে সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল হাকিম বলেন, এই রাষ্ট্র লুটেরা ধনিক শ্রেণী, দুর্নীতি, সন্ত্রাসী রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। যে লক্ষ্য নিয়ে বাংলাদেশের জনগণ পাকিস্তান শাসকের বিরুদ্ধে লড়াই সংগ্রাম করেছিল সে লক্ষ্য স্বাধীনতার ৫১ বছর পরও প্রতিষ্ঠিত হয় নাই। এদেশের সংখ্যালঘু জাতিসত্তার অধিকার প্রতিষ্ঠা হয়নি, রাষ্ট্র কর্তৃক এদেশের সংখ্যালঘু জাতির ভূমি কেড়ে নিয়ে তাদেরকে নিজ ভূমি থেকে উচ্ছেদ করা হচ্ছে, শ্রমিক, কৃষক, মেহনতি মানুষের ওপর শোষণ, নিপীড়ন, নির্যাতন চালানো হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, লামা ভূমি রক্ষা আন্দোলন শুধু ম্রো-ত্রিপুরা কিংবা পাহাড়ি জনগণের আন্দোলন নয়, তাদের সাথে সারা বাংলাদেশে শ্রমিক, কৃষক, মেহনতি মানুষের একাত্মতা রয়েছে। এই সংগ্রাম সকলের একই সূত্রে গাঁথা।
তিনি সুপ্রীম কোর্টের প্রধান বিচারপতিসহ হাইকোর্টের বিচারকদের প্রতি লামা সরই ইউনিয়নের ম্রো-ত্রিপুরাদের ৪০০ একর ভূমি ফিরিয়ে দিতে ও তাদের অধিকার বিষয়ে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে সরকারে প্রতি নির্দেশ প্রদান করে ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান। এছাড়াও লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ কর্তৃক ভূমি বেদখল বন্ধ, লামা সরই ভূমি রক্ষার সংগ্রাম কমিটির নামে দায়েরকৃত সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারসহ অবিলম্বে মথি ত্রিপুরাকে নিঃশর্ত মুক্তি দেয়ার দাবি জানান।
ভাসনী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ডা. হারুনুর রশিদ বলেন, ম্রো-ত্রিপুরারা তাদের ৪০০ একর ভূমি ফেরৎ পেতে বিভিন্নস্থানে গিয়েছিল, কিন্তু কোথাও কোন সুরাহা পাইনি। আজকে তারা হাইকোর্টের সামনে এসে বিচারের দাবি নিয়ে দাঁড়াতে বাধ্য হয়েছেন। তিনি, ৪০০ একর ভূমি ফিরিয়ে দিতে সরকারে প্রতি আহ্বান জানান।
অনশন কর্মসূচিতে বক্তারা, ভূমি রক্ষার আন্দোলনে এগিয়ে এসে লামা সরই ইউনিয়নের ম্রো-ত্রিপুরাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
বক্তারা ম্রো-ত্রিপুরাদের বিরুদ্ধে লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজের অব্যাহত ষড়যন্ত্র-উৎপীড়ন বন্ধ করা, পাড়াবাসীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও অবিলম্বে মথি ত্রিপুরাকে নিঃশর্ত মুক্তি, ম্রো-ত্রিপুরাদের ৪০০ একর ভূমি বেদখল প্রচেষ্টা বন্ধ করা ও লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজের অবৈধ জমির লিজ বাতিলের দাবি জানান।প্রেস বিজ্ঞপ্তি