রাঙ্গামাটি:- রাঙ্গামাটি কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের পানি স্বল্পতায় উৎপাদন ধসের পর্যায়ে পৌঁছেছে। সাম্প্রতিক কাপ্তাই হ্রদে পানি সঙ্কট চরম আকার ধারণ করেছে। চলতি বর্ষা মৌসুমে স্বল্প কিংবা অনাবৃষ্টিই এই সঙ্কটের মূল কারণ।
ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ৫টি ইউনিটের মধ্যে বন্ধ রয়েছে ৪টি ইউনিট। উৎপাদন হচ্ছে মাত্র ১টি ইউনিটে। শনিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৯টা পর্যন্ত শুধু একটি ইউনিটে ৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। চলতি মৌসুমে হ্রদে পানি স্বল্পতার ফলে বিদ্যুৎকেন্দ্রে চারটি ইউনিট ১, ২, ৩ ও ৫ বন্ধ হয়ে গেছে। শুধু মাত্র ৪নং ইউনিটে ৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। পানির নির্দিষ্ট লেভেল বজায় না থাকার ফলে কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
কাপ্তাই জল জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র ব্যবস্থাপক এটিএম আব্দুজ্জাহের জানান, হ্রদে চলতি মৌসুমে পানি নেই। পানি স্বল্পতার ফলে ইতোমধ্যে ৪টি ইউনিট বন্ধ হয়ে গেছে। বর্তমানে হ্রদে পানি থাকার কথা (৯৬.৫৮এম.এস.এল ফিট)। কিন্তু তা কমে আছে (৮৩.৩১ এম.এসএল ফিট)। দিন দিন কাপ্তাই হ্রদে পানি হ্রাস পাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে আগামী মার্চ মাসে বড় ধরণের বিদ্যুৎ ধসের আশঙ্কা করা হচ্ছে। বর্ষায় পর্যাপ্ত পরিমাণ বৃষ্টিপাত না হওয়ার দরুন সব ইউনিট চালানো সম্ভব হচ্ছে না। বৃষ্টিপাত না হলে সামনে বিদ্যুৎ উৎপাদনে বড় ধরণের সমস্যায় পড়তে হবে বলে জানান তিনি।
এদিকে, কাপ্তাই হ্রদে পানি কম থাকায় উপজেলার সঙ্গে নৌ যোগাযোগ ব্যবস্থাও ব্যাহত হচ্ছে। ফলে দুর্ভোগে পড়েছেন জেলার কয়েক লাখ মানুষ। চলতি সপ্তাহের মধ্যে বড় ধরনের বৃষ্টিপাত না হলে হ্রদের আরো দুরবস্থা হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
উল্লেখ্য, কাপ্তাই পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে ১৯৬০ সালে খরস্রোতা কর্ণফুলি নদীর উপর দিয়ে নির্মিত হয় কাপ্তাই বাঁধ। সৃষ্টির পর বিদ্যুৎ উৎপাদনের পাশাপাশি মৎস্য উৎপাদন, নৌ-যোগাযোগ, জলে ভাসা জমিতে কৃষি চাষাবাদ, সেচ, ব্যবহার্য পানি সরবরাহ, পর্যটনসহ বিভিন্ন সুযোগ ও সম্ভাবনা গড়ে ওঠে কাপ্তাই হ্রদ ঘিরে।
কিন্তু সৃষ্টির ৬০ বছরে কাপ্তাই হ্রদের কোনো সংস্কার, ড্রেজিং বা খনন করা হয়নি। ফলে বছরের পর বছর ধরে নামা পাহাড়ি ঢলে পলি জমে এবং নিক্ষেপ করা হাজার হাজার টন বর্জ্যে ভরাট হয়ে যাচ্ছে হ্রদের তলদেশ। এতে নাব্যতার সংকটে অস্তিত্বের সম্মুখীন এই হ্রদ। প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুমে পানি শুকিয়ে যাওয়ায় হ্রদ ঘিরে তৈরি হয় নানা সংকট।