মানিকছড়ি ,খাগড়াছড়ি;-পার্বত্য এলাকায় অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর আর্থসামাজিক উন্নয়নে ‘টেকসই সামাজিক সেবা প্রদান প্রকল্পে’ স্বাস্থ্য, পুষ্টি, পানি ও পয়োনিষ্কাশন, শিশুবিকাশ ও প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষাসহ নয়টি কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড। খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলায় প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রমে ‘পাড়াকেন্দ্রের’ মাধ্যমে ৩-৬ বছর বয়সী কোমলমতি শিশুকে হাতে-কলমে পাঠদান, কিশোর-কিশোরী ও গর্ভবতী নারীদের স্বাস্থ্যসচেতনতায় সেবা দিচ্ছেন একঝাঁক পাড়াকর্মী। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বা গ্রামে পাড়াকেন্দ্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শিশুকে হাতে-কলমে নৃত্য, ছড়াগান, অভিনয় এবং লেখাজোখার অক্ষর, শব্দ ও সংখ্যার সঙ্গে পরিচিত হচ্ছে ছোট্ট শিশুরা।
এসব শিশুকে বাংলা ও গণিত শিক্ষায় পাকাপোক্ত করার কঠিন চ্যালেঞ্জ নিয়ে যৎসামান্য বেতনে সেবা দিচ্ছেন মাঠকর্মীরা। কোলের শিশুকে নিরাপদে বাড়ির পাশে হাতে-কলমে শিক্ষার পরিবেশ হওয়ায় দিন দিন সুনাম বয়ে আনছে পাড়াকেন্দ্রগুলো। শিশুশিক্ষার পাশাপাশি এখানে প্রতি শুক্রবার কিশোর-কিশোরীদের বিনোদন, স্বাস্থ্যসচেতনতা, বাল্যবিবাহ, মাদক ও যৌতুকের কুফল এবং মাসে দুবার উঠান বৈঠকে গর্ভকালীন মা ও শিশুর স্বাস্থ্য, চিকিৎসা নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়। এলাকার সব তথ্য-উপাত্তে পাড়াকেন্দ্রকে ‘পাঠশালায়’ রূপান্তর করা হয়েছে।
আজকের পত্রিকা অনলাইনের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
উপজেলার ১৯৮টি পাড়াকেন্দ্রে ২ হাজার ৮৬৪ জন শিশুর পাঠদান ও তদারকিতে কর্মরত আছেন ১৯৮ জন পাড়াকর্মী ও ১৯ জন মাঠ সংগঠক।
সরেজমিন ও উপজেলার সংশ্লিষ্ট কার্যালয়ের তথ্যানুযায়ী পাহাড়ে ‘টেকসই সামাজিক সেবা প্রদান’ প্রকল্পে শিক্ষার মানোন্নয়নে ৩-৬ বছর বয়সী শিশুদের পাঠদানে গ্রামভিত্তিক পাড়াকেন্দ্রে শিশুশিক্ষা, কিশোর-কিশোরী ও নারীর স্বাস্থ্যসেবায় কাজ করছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড।
উপজেলার ১৯৮টি পাড়াকেন্দ্রকে ১৯টি ক্লাস্টারে ভাগ করে ক্লাস্টারপ্রতি ১ জন মাঠ সংগঠকের নিয়মিত তদারকিতে এবং নিবিড় পর্যবেক্ষণে শিক্ষার আলোয় আলোকিত হচ্ছে খুদে শিশুরা। শিশুশিক্ষার পাশাপাশি প্রতিটি পাড়াকেন্দ্রে রয়েছে কিশোর-কিশোরী ক্লাব। এখানে প্রতি শুক্রবার এলাকার কিশোর-কিশোরীরা স্বাস্থ্যসচেতনতা, বাল্যবিবাহ, যৌতুক, মাদকের কুফল সম্পর্কে প্রতি মাসে দুদিন মায়েদের নিয়ে উঠান বৈঠকে গর্ভকালীন চিকিৎসা, স্বাস্থ্যবিধি, জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ও নবজাতকের সুস্বাস্থ্য সম্পর্কে অবহিত করা হয়।
সম্প্রতি উপজেলার বিভিন্ন পাড়াকেন্দ্রে শিশুশিক্ষা কার্যক্রম পরিদর্শনে গেলে বড়ডলু ডিপি পাড়াকেন্দ্রের পাড়াকর্মী মাসুমা আক্তার বলেন, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে দূরে বসবাসরত পরিবারের শিশুদের নানা অঙ্গভঙ্গি, অভিনয়, ছড়াগানের মাধ্যমে শেখানো হয়। মাঠ সংগঠক সেলিনা আক্তার জানান, পাড়াকেন্দ্রের শিশুশিক্ষা কার্যক্রমে শিশুদের আনন্দ-বিনোদন, খেলাধুলার মাধ্যমে প্রত্যেক শিশুকে অক্ষর, শব্দ ও সংখ্যার সঙ্গে পরিচয় করানো হয়। কিশোর-কিশোরীদের প্রতি শুক্রবার বিনোদন, স্বাস্থ্য, মাদক, বাল্যবিবাহ, যৌতুক ও মায়েদের নিয়ে মাসে দুবার উঠান বৈঠকের স্বাস্থ্যসচেতনতা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়।
কিশোর-কিশোরী ক্লাবের সদস্য এরশাদুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতি শুক্রবার এলাকার সক সমবয়সীকে নিয়ে ক্লাবে খেলাধুলা, বয়ঃসন্ধিকালীন স্বাস্থ্যবিধি, মাদক, যৌতুক, বাল্যবিবাহ, দুর্নীতির কুফল সম্পর্কে আমরা জানতে ও বুঝতে পারছি।’
তিনটহরী মাস্টারপাড়া পাড়াকেন্দ্রের সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘পাড়াকেন্দ্রের ছোট্ট ছোট্ট শিশুর খেলাধুলা ও আনন্দের মাধ্যমে যেভাবে অক্ষর ও শব্দ শেখানো হয়, আমরা ছোটকালে তা পাইনি। একজন পাড়াকর্মী বা একজন মাঠ সংগঠক যে পরিশ্রমে শিশু, কিশোর-কিশোরী বা উঠান বৈঠকে গর্ভবতী মা-বোনদের নিয়ে কাজ করছেন, সে তুলনায় তাঁদের বেতন যৎসামান্য। এঁদের বেতন-ভাতা যুগোপযোগী করা উচিত।’
টেকসই সামাজিক সেবা প্রদান প্রকল্পের উপজেলা প্রকল্প ব্যবস্থাপক ফরিদুল বলেন, পার্বত্য এলাকায় অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর আর্থসামাজিক উন্নয়নে নানা কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে টেকসই সামাজিক সেবা দেওয়া হচ্ছে।