খাগড়াছড়ি :- সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এ চূড়ার উচ্চতা ৬০০ ফুট। এখানে দাঁড়ালে দৃষ্টিসীমায় ধরা পড়ে শুধু সবুজ বন। নীল আকাশের সীমারেখায় এখানে সবুজের খেলা। পরিচিত কিংবা অপরিচিত সেসব গাছের পাতা ছুঁয়ে ভোরে সূর্য ওঠে, সন্ধ্যায় অস্ত যায়। দু দণ্ড প্রশান্তির জন্য মানুষ এখানে ফিরে ফিরে আসে। ছয় ঋতুতে এর রূপ ছয় রকম। এর নাম আলুটিলা। খাগড়াছড়ির প্রধান পর্যটন কেন্দ্র।
এক সময় এখানে দাঁড়িয়ে শুধু প্রকৃতিই দেখা যেত। কিন্তু এখন শোনা যাবে পাহাড়ি সুর। দেখা যাবে শত শত বছর ধরে গড়ে ওঠা পাহাড়ি সংস্কৃতির বিভিন্ন নান্দনিক পরিবেশনা।
সম্প্রতি এখানে উদ্বোধন করা হলো একটি অ্যাম্ফিথিয়েটার। খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস এর উদ্বোধন করেন। এক হাজার আসনের গ্রিক স্থাপত্য রীতিতে তৈরি এটিই দেশের প্রথম অ্যাম্ফিথিয়েটার। উদ্বোধনের দিন বিকেল ৪টায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটের শিল্পীরা চাকমা গীতিনাট্য ‘রাধামন ধনপুদি’ পরিবেশন করেন। এ সময় উপস্থিত দর্শকেরা মুগ্ধ হয়ে উপভোগ করেন এই গীতিনাট্য।
খাগড়াছড়িতে বেড়াতে আসা পর্যটকদের মূল আকর্ষণের জায়গা আলুটিলা। পর্যটকদের কথা বিবেচনা করে সেখানে পাহাড়ের কোল ঘেঁষে নির্মাণ করা হয়েছে নতুন এ অ্যাম্ফিথিয়েটার। উদ্দেশ্য, পাহাড় ও সমতলের সংস্কৃতির মেলবন্ধন এবং পর্যটন খাতের উন্নয়ন। খাগড়াছড়ি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটের উপপরিচালক জিতেন চাকমা তেমন কথাই জানালেন। তিনি বলেন, মানুষ পাহাড়ে বেড়াতে আসে। কিন্তু এখানকার বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হওয়ার তেমন কোনো সুযোগ ছিল না এত দিন। আলুটিলায় নির্মিত অ্যাম্ফিথিয়েটারে স্থানীয় শিল্পীরা তাঁদের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা করছেন। এটি নিয়মিত চলবে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বেড়াতে আসা পর্যটকেরা এখানকার সংস্কৃতি উপভোগ করতে পারবেন। এতে আমাদের পর্যটন খাতও লাভবান হবে।
এই অ্যাম্ফিথিয়েটার খাগড়াছড়ির পর্যটন শিল্পের বিকাশে নতুন মাত্রা যোগ করবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিরা। এখানে নিয়মিত প্রতি শুক্র ও শনিবার
নাচ, গানসহ নিজেদের সংস্কৃতির বিভিন্ন উপাদান উপস্থাপন করবেন স্থানীয় শিল্পীরা।
উদ্বোধনের দিন খাগড়াছড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন মো. ইয়াসিন ও জসীম উদ্দিন। তাঁরা জানান, খাগড়াছড়িতে ঘুরতে এসে আলুটিলা থেকে দূর পাহাড়ের সৌন্দর্য দেখে দুজনেই বিমোহিত হয়েছেন। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি এখানকার সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ হয়েছে তাঁদের। স্থানীয় শিল্পীদের নাচ, গানসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক পরিবেশনা দেখে মুগ্ধ হয়েছেন তাঁরা। প্রকৃতি ও সৌন্দর্যের এ মেলবন্ধন দেখতে আবারও আলুটিলায় আসতে চান বলে জানান মো. ইয়াসিন।
খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, জেলার অর্থনীতির অন্যতম প্রধান খাত পর্যটন শিল্প। এর ওপর বিরাট এক জনগোষ্ঠী নির্ভরশীল। পর্যটন খাত বিকশিত করতে জেলার প্রধান পর্যটন কেন্দ্র আলুটিলাকে নান্দনিক করা হয়েছে। প্রাচীন গ্রিসে অ্যাম্ফিথিয়েটার ব্যবহার করা হতো নাটকসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক উপাদান উপস্থাপনার জন্য। পাহাড়ের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতির সঙ্গে পর্যটকদের পরিচয় করিয়ে দিতে এখানে এই অ্যাম্ফিথিয়েটার নির্মাণ করা হলো। এর মধ্য দিয়ে পাহাড় ও সমতলের মানুষের মধ্যে সংস্কৃতির বন্ধন আরও জোরদার হবে। নিঃসন্দেহে এ অঞ্চলের তথা বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পে নতুন মাত্রা যোগ করবে এটি।
এখানে প্রবেশ করতে হবে টিকিট কেটে। প্রতিটি টিকিটের দাম ৫০ টাকা।