ডেস্ক রির্পোট:- ক্যানসার চিকিৎসার অন্যতম অনুষঙ্গ রেডিয়েশন (বিকিরণ) থেরাপি। রোগের প্রাথমিক বা শেষ পর্যায়ে অনেক রোগীর চিকিৎসায় যন্ত্রটি ব্যবহার করে থাকেন চিকিৎসকেরা। দেশের নয়টি সরকারি হাসপাতালে সব মিলিয়ে এ যন্ত্র আছে ১৬টি। এগুলোর মধ্যে ১২টিই পড়ে আছে অচল অবস্থায়। এ কারণে থেরাপির জন্য রোগীদের ছুটতে হচ্ছে বেসরকারি হাসপাতালে। গুনতে হচ্ছে ১২ থেকে ১৫ গুণ বেশি টাকা। ফলে দরিদ্র রোগীদের পক্ষে এই সেবা নেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও আজ ৪ ফেব্রুয়ারি শনিবার পালিত হচ্ছে বিশ্ব ক্যানসার দিবস। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য, ‘ক্যানসার সেবায় বৈষম্য কমাই’।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্যোগে দ্য গ্লোবাল ক্যানসার অবজারভেটরির দেওয়া ২০২০ সালের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতিবছর দেড় লাখ মানুষ নতুন করে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়। এ রোগে মৃত্যু হয় ১ লাখ ৮ হাজারের বেশি মানুষের।
জানা গেছে, সরকারি পর্যায়ে জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে রেডিওথেরাপি মেশিন ছয়টি। এগুলোর মধ্যে পাঁচটি দীর্ঘদিন ধরে নষ্ট। মাত্র একটি মেশিনে চলছে রেডিওথেরাপি-সেবা। আগে যেখানে প্রতিদিন ৭০০ থেকে ৮৫০ জন রোগীকে সেবা দেওয়া হতো, এখন সেখানে সেবা পাচ্ছেন ৮০ থেকে ১০০ জন।
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি; ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দুটি; বগুড়া, ময়মনসিংহ, রংপুর ও বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একটি করে মেশিন থাকলেও সব কটি বর্তমানে নষ্ট।
তবে চট্টগ্রাম, সিলেট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেশিন দুটি চলছে। আর রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেশিনটিও ফরিদপুর ও খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একটি করে দামি লিনিয়ার এক্সিলারেটর মেশিন পাঠানো হলেও দীর্ঘদিন ধরে সেগুলো বাক্সবন্দী হয়ে পড়ে আছে।
সরকারি হাসপাতালে মেশিন নষ্ট হওয়ার ঘটনাটি বাড়তে থাকার সঙ্গে সঙ্গে বেসরকারি হাসপাতালগুলোয় বসছে বেশিসংখ্যক মেশিন। কয়েক বছর আগেও তিনটি বেসরকারি হাসপাতালে মাত্র চারটি মেশিন ছিল। এখন সেখানে ছয়টি হাসপাতালে ১৫টি মেশিনে চলছে রমরমা ব্যবসা।
বেসরকারি পর্যায়ে রাজধানীর ডেলটা হাসপাতালে রেডিওথেরাপি মেশিন আছে পাঁচটি। আহ্ছানিয়া মিশন ক্যানসার হাসপাতালে আছে তিনটি। ইউনাইটেড হাসপাতালে দুটি, ল্যাবএইড হাসপাতালে দুটি, সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দুটি এবং এভারকেয়ার হাসপাতালে একটি মেশিন রয়েছে।
জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের কয়েকজন চিকিৎসক জানান, এখানে কোবাল্ট-৬০ মেশিনে একবার থেরাপি নিতে রোগীকে দিতে হয় মাত্র ১০০ টাকা, অন্যদিকে লিনিয়ার মেশিনে থেরাপি নিতে দিতে হয় ২০০ টাকা। সব সরকারি হাসপাতালে একই খরচ। এ ছাড়া সরকারি হাসপাতালে রেডিওথেরাপির প্ল্যানিং ফি ৫০০ থেকে ১৫০০ টাকা দিতে হয়। অর্থাৎ একজন রোগীকে রেডিওথেরাপির একটি কোর্স সম্পন্ন করতে যদি ছয়বার থেরাপি নিতে হয়, তাহলে ব্যয় হবে সর্বোচ্চ ৬ হাজার ৫০০ টাকা।
অন্যদিকে বেসরকারি হাসপাতালে (কোবাল্ট মেশিনে) একই সেবা পেতে রোগীকে গুনতে হয় কমপক্ষে ৮৭ হাজার টাকা। প্রতি এক্সপোজার ২৫০০ টাকা করে, এর সঙ্গে প্ল্যানিং বাবদ ২৫ হাজার টাকা। একই থেরাপি লিবিয়ার মেশিনে নিতে হলে রোগীকে গুনতে হবে ১ লাখ ২২ হাজার টাকা।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে মেশিন কেনার জন্য অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হলেও আগের দুজন পরিচালক নানা কারণে মেশিন কেনা থেকে বিরত ছিলেন।
এ বিষয়ে ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক মোল্লা ওবায়েদুল্লাহ বাকী বলেন, আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় কেনাকাটা সম্পন্ন করতে অনেক সময় লাগে। সব মিলিয়ে একটা স্থবিরতা তৈরি হয়। কেনাকাটার সঙ্গে অডিট আপত্তির বিষয়টিও সম্পৃক্ত। ফলে পরিচালকেরা নিজ দায়িত্বে এগুলো করতে চান না। নষ্ট মেশিন তাৎক্ষণিকভাবে ঠিক করতে হলে পরিচালককে ক্ষমতা দিতে হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের (ভারপ্রাপ্ত) পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহ) শেখ দাউদ আদনান বলেন, জাতীয় ক্যানসার ইনস্টিটিউটের জন্য দুটি মেশিন কেনার দরপত্র প্রক্রিয়া শুরুর জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি চাওয়া হয়েছে। আরও আটটি বিভাগীয় বিশেষায়িত ক্যানসার হাসপাতালের কাজ চলমান আছে। সেগুলো সম্পন্ন হলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক আহমেদুল কবীর বলেন, ক্যানসার রোগীদের সেবা নিশ্চিত করতে সব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মেশিনপত্র কেনাকাটায় কিছুটা সময়ের প্রয়োজন। দ্রুত সমস্যার সমাধান করা হবে।