টেকনাফ (কক্সবাজার):-কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভ ধরে গেলে টেকনাফের শামলাপুর চেকপোস্ট, যেখানে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল সেনাবাহিনীর মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানকে। বাঁয়ে ঢুকলেই বাহারছড়া ইউনিয়ন, সেখানেই জাহাজপুরা পাহাড়। ওই পাহাড় পেরিয়ে পূর্ব দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের হ্নীলা ইউনিয়নের লেচুয়াপ্রাং পাহাড়। এ দুই পাহাড়ের মাঝে ৮ থেকে ১০ কিলোমিটার গহিন এলাকা।
গত চার মাসে ওই এলাকায় অপহরণ হয়েছে ২১ জন। এর বাইরে টেকনাফে দুটি ঘটনায় অপহৃত হয়েছে ১৭ রোহিঙ্গা। এই ৩৮ জনের মধ্যে ১১ রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। ২৬ জন ছাড়া পেয়েছেন মুক্তিপণ দিয়ে। টাকা না পাওয়ায় খুন হয়েছেন একজন। তবে মুক্তিপণের বিষয়টি স্বীকার করে না পুলিশ।
ধারাবাহিক অপহরণের ঘটনায় ওই পাহাড়ি এলাকা এখন স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে আতঙ্ক। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র বলছে, কয়েকটি গ্রুপ অপহরণের ঘটনা ঘটাচ্ছে। সশস্ত্র এসব দলে স্থানীয় লোকজনের পাশাপাশি রোহিঙ্গারাও রয়েছে। বেশির ভাগ ঘটনা ঘটছে টাকা আদায়ের জন্য। বেশির ভাগ ঘটনাতেই মামলা হয়নি।
গত ১৮ ডিসেম্বর টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের জাহাজপুরার একটি পাহাড়ের পাদদেশ থেকে অপহৃত হন আটজন। তাঁদের বাড়ি জাহাজপুরা গ্রামে। ২৬ জানুয়ারি শিলখালী বনসংলগ্ন ওই গ্রামে আজকের পত্রিকার প্রতিবেদক গেলে তাঁদের ছয়জনের সঙ্গে কথা হয়। তাঁদের বাড়ি আধা কিলোমিটারের মধ্যে। জড়ো হন উৎসুক অনেকে।
অপহৃত ব্যক্তিরা জানান, একজন কলেজছাত্রসহ তাঁরা আটজন পাহাড়ের পাদদেশে খালে মাছ ধরতে গিয়ে অপহৃত হন। তিন দিন পর ৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা দিলে মুক্তি পান তাঁরা। এই আটজন হলেন রশিদ আহমদের ছেলে নুরুল আফসার, মমতাজ মিয়ার ছেলে মো. রেদোয়ান, রশিদ আহমদের ছেলে মোহাম্মদ উল্লাহ, কাদের হোসেনের ছেলে নুরুল হক, নুরুল হকের ছেলে নুর মোহাম্মদ, ছৈয়দ আমিরের ছেলে মোস্তফা কামাল ও করিম উল্লাহ এবং রুস্তম আলীর ছেলে সলিম উল্লাহ।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে নুরুল আফসার বলেন, সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা মুক্তিপণ দেয় তাঁর পরিবার। সলিমউল্লাহ ১ লাখ ৯০ হাজার, মোহাম্মদউল্লাহ ৮০, নুরুল হক, রেদোয়ান ও মোস্তফা কামাল ৫০ হাজার করে এবং নুর মোহাম্মদ ২০ হাজার টাকায় ছাড়া পান। করিম উল্লাহর কাছে মোবাইল ফোন না থাকায় তাঁর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারায় মুক্তিপণ আদায় করতে পারেনি অপহরণকারীরা।
অপহৃত ব্যক্তিরা জানান, ভারী অস্ত্রধারী অপহরণকারীদের দলটিতে ২২ জন ছিল। তাদের তিনজন রোহিঙ্গা। তারা কালো ফুলহাতা টি-শার্ট, হ্যাট পরত। মুখে ছিল মাস্ক। সরদারকে মামা ডাকত। একবেলা খাবার দিত। টাকার জন্য সকাল-বিকেল দুই বেলা পেটানো হতো। প্রতিদিন এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে নিয়ে যেত। চারজনের পায়ে শিকল বেঁধে তালা মেরে ফেলে রাখা হতো। অপহরণ নিয়ে কোথায় কী সংবাদ এল, কী লাইভ হচ্ছে—পাহাড়ে বসেই দেখত অপহরণকারীরা। অপহৃত ব্যক্তিদের পরিবারের কেউ কড়া বক্তব্য দিলে তাঁকে বেশি পেটানো হতো।