খাগড়াছড়ি:- খাগড়াছড়ি থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরের জনপদ মুবাছড়ি গ্রাম। পুরো পথে পড়বে উঁচু-নিচু পাহাড়। কোথাও ঘন বন আবার কোথাও ধানের খেত। এর মাঝে মাঝে গ্রাম। সবুজ পাতার গাছের মধ্যে চোখে পড়বে ঝাঁকড়া বট। পাহাড়ি গ্রামে বট যেন অনিবার্য বৃক্ষ। প্রায় প্রতিটি পাড়ায় বটগাছ দেখা যায়। এর কোনোটা যুবক তো কোনোটা শতবর্ষী। কোনোটার বয়স নিয়ে আছে বিতর্ক। আর কত কিংবদন্তি! এসব কিংবদন্তি ছাড়িয়ে চোখে পড়বে পাখি। হরেক রকম পাখি আর এদের কলতান।
বটবৃক্ষের ফল পাখিদের বেশ প্রিয় খাবার। এ পুরো এলাকায় বিভিন্ন বয়সী বটগাছ আছে বলে বছরের বিভিন্ন সময় তাতে ফল ধরে। ফল ধরলে নানা প্রজাতির পাখি সেখানে ফলের সন্ধানে ভিড় করে বছরের বিভিন্ন সময়। এ জন্য প্রায় সারা বছর এখানে দেখা যায় বিভিন্ন ধরনের পাখি।
খাগড়াছড়ির মহালছড়ি উপজেলার মুবাছড়ি গ্রামে অন্যান্য পাহাড়ি গ্রামের মতো রয়েছে বটগাছ। বটগাছের তলায় গড়ে উঠেছে কয়েকটি চায়ের দোকান। সেখানে মানুষের আনাগোনা থাকলেও পাখিরা পাকা ফলের খোঁজে নির্ভয়ে বিচরণ করে। সোনা কপালি হরবোলা, কাঠশালিক, পাহাড়ি ময়নাসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি বটের ফল খেতে আসে মুবাছড়ি গ্রামের বটগাছগুলোতে। পাখি আর মানুষের এক অদ্ভুত সহাবস্থান আছে এখানে। দোকানে আড্ডা দিতে আসা মানুষেরা জানান, এ গ্রামে পাখি শিকার বন্ধ। ছবি তুলতে পারেন। কিন্তু বিরক্ত করা যাবে না পাখিদের।
এখানে হাজারো পাখির মধ্যে চোখে পড়ে ছোট্ট পাখি চুনিমুখী মৌটুসি। জোড়া বেঁধে ঘুরে বেড়াচ্ছে এরা। এদের সংখ্যা কমে গেছে বলে জানালেন এলাকার মানুষেরা। বেশ ছটফটে ধরনের পাখি চুনিমুখী মৌটুসি। এই এক ডালে তো নিমিষেই হাওয়া। দেখা পাওয়া যাবে অন্য ডালে।
চুনিমুখী মৌটুসি আকারে চড়ুই পাখির চেয়ে ছোট। লম্বায় গড়ে ১২ সেন্টিমিটারের মতো হয় এরা। বাংলাদেশে পাঁচ প্রজাতির মৌটুসি আছে। সব প্রজাতির মৌটুসির দেখা মেলে হরহামেশা। খাগড়াছড়ির শৌখিন আলোকচিত্রী সবুজ চাকমা বলেন, পাহাড়ে বেগুনি কোমর মৌটুসি, বেগুনি গলা মৌটুসি সহজে দেখা গেলেও চুনিমুখী মৌটুসি মাঝে মাঝে দেখা যায়।
সাধারণত এদের রং হয় চকচকে সবুজ। ডানা ৫ দশমিক ৩ সেন্টিমিটার, ঠোঁট দেড় সেন্টিমিটার, লেজ ৪ দশমিক ২ সেন্টিমিটার এবং পা ১ দশমিক ৬ সেন্টিমিটার। স্ত্রী ও পুরুষ পাখির চেহারায় পার্থক্য আছে। পুরুষ মৌটুসির মাথার চাঁদি, ঘাড়, পিঠ, কোমর ও লেজের ওপরের আচ্ছাদক ধাতব সবুজ। ডানা ও লেজ কালচে। রোদে এদের গাল উজ্জ্বল লাল থেকে কিছুটা বেগুনি দেখায়। গলা ও বুক লালচে-কমলা, পেট হলুদ। স্ত্রী মৌটুসির পিঠ অনুজ্জ্বল জলপাই সবুজ রঙের। গলা ও বুক হালকা লালচে-কমলা। গালে লাল রং থাকে না। স্ত্রী ও পুরুষ পাখি উভয়ের চোখ লাল এবং পেট হলুদ। ঠোঁট অপেক্ষাকৃত খাটো ও সোজা। ঠোঁটের রং কালচে। পা ও পায়ের পাতা সবুজে-ধূসর। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির চেহারা অবিকল স্ত্রী মৌটুসির মতো।
বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, ভুটান, কম্বোডিয়া, চীন, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামে এদের নিয়মিত দেখা যায়। তবে এরা আমাদের দেশের স্থায়ী পাখি। আইইউসিএন চুনিমুখী মৌটুসিকে ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত বলে ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশের বন্য প্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত নয়। আজকের পত্রিকা