ভারতীয় রাজ্যে বহুবিবাহ নিষিদ্ধের আইনে বিভক্ত মুসলিম নারীরা

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় সোমবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪
  • ২৩৫ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- ২০১৩ সালের সমীক্ষা মতে, মুসলিম পুরুষের প্রথম স্ত্রী থাকতে তাকে দ্বিতীয় বিয়ের অনুমতি দেওয়া উচিত নয় বলে মনে করেন ৯১.৭ শতাংশ মুসলিম নারী। ছবি: পিটিআই২০১৩ সালের সমীক্ষা মতে, মুসলিম পুরুষের প্রথম স্ত্রী থাকতে তাকে দ্বিতীয় বিয়ের অনুমতি দেওয়া উচিত নয় বলে মনে করেন ৯১.৭ শতাংশ মুসলিম নারী। ছবি: পিটিআই
ভারতের উত্তরাখণ্ড রাজ্যে বহুবিবাহকে নিষিদ্ধ করে প্রণীত হয়েছে আইন। এতে অনেক নারী যেমন স্বস্তির নিশ্বাস ফেলছেন তেমনি অনেকেই আইনটির বিপক্ষে নিয়েছেন অবস্থান। সুপ্রিম কোর্টে কয়েক বছর ধরেই মামলা লড়ছেন উত্তরাখণ্ডের বাসিন্দা শায়রা বানু। তিনি আইনটির পক্ষে।

শায়রা বানুর সম্মতি না নিয়েই তার স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করতে চেয়েছিলেন। তিনবার তালাক উচ্চারণ করে বিবাহ বিচ্ছেদ করেছেন তিনি। এখন শায়রা বানুর মামলা চলছে সুপ্রিম কোর্টে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে তিনি বলেন, ‘আমি এখন বলতে পারি যে, বিবাহ এবং বিবাহবিচ্ছেদের ব্যাপারে বহু পুরোনো ইসলামিক নিয়মের বিরুদ্ধে আমি যুদ্ধে জয়ী হয়েছি। এক সঙ্গে দুই বা ততোধিক স্ত্রী রাখার জন্য ইসলাম পুরুষদের যে সুযোগ দিয়েছে তার অবসান হওয়া জরুরি।’

তবে বহুবিবাহ ও তাৎক্ষণিক বিবাহ বিচ্ছেদ নিষিদ্ধ করা এই আইন নিয়ে সন্তুষ্ট হতে পারছেন না ভারতীয় কংগ্রেসের সদস্য সাদাফ জাফর। উত্তরাখণ্ডের এই নারীর সম্মতি না নিয়েই তার স্বামী বিয়ে করেন। সাদাফ জাফর বলেন, ইসলামে বহুবিবাহ অনুমোদিত হলেও এ ব্যাপারে কঠোর নিয়ম রয়েছে। তবে বহুবিবাহের সুযোগের অপব্যবহারও হচ্ছে প্রচুর।

সাদাফ জাফর তার দুই সন্তানের ভরণপোষণের জন্য অর্থ চাইছেন। ইসলামিক পণ্ডিতদের সঙ্গে তিনি পরামর্শ করেননি কারণ, ভারতীয় আদালত ন্যায়বিচার দেবে বলেই তার আশা।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হিন্দু জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক দল বিজেপি অঙ্গীকার করেছে যে, তারা ভারতে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি বা ইউনিফর্ম সিভিল কোড চালু করবে। উত্তরাখণ্ডে সেটাই বাস্তবায়িত হয়েছে। এ প্রেক্ষিতে ভারতের বৃহত্তম ধর্মীয় সংখ্যালঘু মুসলিম নারীদের মধ্যে তৈরি হয়েছে বিভাজন। স্বামীর একাধিক বিয়ের কারণে যেসব নারীর জীবন সম্পূর্ণভাবে পাল্টে গেছে, সেই নারীদের অনেকেই স্বতঃস্ফূর্তভাবে এ আইনকে সমর্থন করছেন না।

যে আইন নিয়ে বিতর্ক সেই ইউনিফর্ম সিভিল কোড কার্যকর হলে বিবাহ, বিবাহবিচ্ছেদ এবং উত্তরাধিকারের মতো বিষয়গুলো আর সংশ্লিষ্টদের ধর্মীয় আইন দিয়ে নিয়ন্ত্রিত হবে না। তা চলে আসবে এমন এক অভিন্ন আইনেরও আওতায়—যা সকল নাগরিকের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে।

৪৯ বছর বয়সী মানবাধিকার কর্মী শায়রা বানুর মতো কেউ কেউ শরিয়া আইনের বিপরীতে ধর্মনিরপেক্ষ আইনের বাস্তবায়নে আনন্দিত। তবে সাদাফ জাফরের মতো অনেক নারীর সঙ্গে মুসলিম রাজনীতিবিদ এবং ইসলামিক পণ্ডিতদের মতে, মুসলিমদের দমিয়ে রাখতে হিন্দু জাতীয়তাবাদী নরেন্দ্র মোদির রাজনৈতিক পদক্ষেপ এই আইন।

উত্তরাখণ্ডে চলছে বিজেপির শাসন। রাজ্যটিতে ধর্মনিরপেক্ষ আইনটি কার্যকর হওয়ার মাধ্যমে বিজেপি শাসিত অন্যান্য রাজ্যগুলোতেও একই পন্থা অনুসরণের পথ প্রশস্ত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ভারতে প্রায় ২০ কোটি মুসলিমের বসবাস। সে হিসেবে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ এটি। ধর্মনিরপেক্ষ আইনটি চালু হলে বিরোধিতা ডালপালা মেলবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।

২০১৩ সালের একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, সারা দেশে ৯১.৭ শতাংশ মুসলিম নারীর মতে, একজন মুসলিম পুরুষের প্রথম স্ত্রী থাকার অবস্থায় তাকে দ্বিতীয় বিয়ের অনুমতি দেওয়া উচিত নয়। তবুও আইনটিকে মোদির হিন্দুত্ববাদী এজেন্ডা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবেই দেখছে অনেক মুসলিম। তাদের মতে, ইসলামে হস্তক্ষেপকারী আইন আরোপের মাধ্যমে মুসলিমদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ আরও বাড়বে।

সাদাফ জাফরের মতে, ইসলামকে নেতিবাচকভাবে দেখাতে এবং মুসলিমদের জীবনমানের উন্নতির মতো বিষয়গুলো থেকে মনোযোগ সরানোর উদ্দেশ্যে এই কৌশল নিয়েছেন মোদি।

২০১৭ সালে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট তিন তালাকের বিবাহবিচ্ছেদকে অসাংবিধানিক বলে অভিহিত করেছিলেন। কিন্তু সমালোচকদের দৃষ্টিতে নারীদের সমানাধিকার লঙ্ঘন করে এমন কিছু ব্যবস্থার চর্চা এবং বহুবিবাহকে নিষিদ্ধ করা হয়নি সেই আদেশে।

বিজেপি নেতৃবৃন্দ এবং নারী অধিকার কর্মীরা এই আইনকে পশ্চাদপসরণমূলক চর্চার অবসান হিসেবে দেখলেও কয়েকজন মুসলিম রাজনীতিবিদ মনে করেন, এই আইন তাদের ধর্ম পালনের মৌলিক অধিকারকে লঙ্ঘন করবে।

অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড এই আইনকে অবাস্তব এবং বহুধর্মীয় ভারতীয় সমাজের জন্য সরাসরি হুমকি বলে অভিহিত করেছে। বোর্ড কর্মকর্তা এস কিউ আর ইলিয়াস বলেন, শরিয়া আইন নিয়ে প্রশ্ন তোলার অধিকার সরকারের নেই। কারণ তথ্য মতে, ভারতে খুব কম মুসলিম পুরুষেরই একাধিক স্ত্রী আছে।

উত্তরপ্রদেশে দুই সন্তান নিয়ে বসবাস করা সাদাফ জাফর বলেন, ‘ইসলামে মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাপনের জন্য যথেষ্ট বিধান রয়েছে। আমাদের আর কোনো আইনের প্রয়োজন নেই। তবে আমাদের যা দরকার তা হলো, মর্যাদার জন্য লড়তে থাকা নারীদের দ্রুত বিচারের নিশ্চয়তা।’

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions