ডেস্ক রির্পোট:- দেশে প্রতি হাজারের মধ্যে ২৫ দশমিক ৫ জন কোনো না কোনো ধরনের প্রতিবন্ধিতার শিকার। লিঙ্গভেদে নারী ও পুরুষের মধ্যে প্রতিবন্ধিতার হারে খুবই সামান্য পার্থক্য রয়েছে। পুরুষের ক্ষেত্রে এ হার ২৫ দশমিক ৬ এবং নারীদের ক্ষেত্রে ২৫ দশমিক ৪ জন।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) নতুন এক জরিপ প্রতিবেদনে এই চিত্র উঠে এসেছে। প্রতিবেদনটির নাম বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস-২০২২। প্রতিবেদনটি গত ৩১ জানুয়ারি প্রকাশ করা হয়।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিউনিকেশন ডিজঅর্ডারস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তাওহিদা জাহান বলেন, প্রতিবন্ধিতার নানা ধরন রয়েছে। এর মধ্যে নিউরো ডেভেলপমেন্টাল ডিজঅর্ডারে রয়েছে অটিজম, ডাউন সিনড্রম, সেরিব্রাল পালসি, বুদ্ধিপ্রতিবন্ধিতা। এ ছাড়া জীবনের যেকোনো সময় যেকোনো দুর্ঘটনার কারণে মানুষ প্রতিবন্ধী হয়ে যেতে পারে।
এখন প্রতিবন্ধী শিশুর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতিবন্ধী হিসেবে জন্মগ্রহণ করার স্পষ্ট একক কোনো কারণ এখন পর্যন্ত গবেষকরা খুঁজে পাননি। তবে বেশ কিছু কারণ আছে। এর মধ্যে বংশগত কারণ, পরিবেশদূষণ রয়েছে। এ ছাড়া প্রক্রিয়াজাত খাবার যেগুলো গর্ভবতী মায়ের জন্য ক্ষতিকর। গর্ভবতী মায়ের চারপাশের পরিবেশও প্রভাব ফেলে গর্ভের সন্তানের ওপর। গর্ভবতী মায়ের ওপর মানসিক চাপ পড়লে তার কারণেও অনাগত সন্তানের যেকোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা হতে পারে। এ ছাড়া বাবা-মায়ের বয়স যদি বেশি হয় অথবা বংশগত কারণ যেমন রয়েছে, তেমন আত্মীয়ের মধ্যে বিয়ের কারণেও অনেক সময় তাদের সন্তানদের মধ্যে নানা ধরনের প্রতিবন্ধিতা দেখা যায়।
প্রতিবেদনে দেখা গেছে, লিঙ্গনির্বিশেষে শহরাঞ্চলের মানুষের মধ্যে প্রতিবন্ধিতার হার পল্লি অঞ্চলের মানুষের তুলনায় কম। শহরে প্রতি এক হাজারের মধ্যে প্রতিবন্ধীর সংখ্যা ২৩ দশমিক ২ জন, পল্লি অঞ্চলে যা ২৬ দশমিক ২ জন। প্রতিবন্ধিতার হার সর্বোচ্চ ময়মনসিংহ বিভাগে। এ বিভাগে প্রতি হাজারে প্রতিবন্ধীর সংখ্যা ৩০ দশমিক ৩ জন। এর পরের অবস্থানে থাকা রাজশাহী বিভাগে প্রতি হাজারে এ সংখ্যা ২৮ দশমিক ৬ জন। সিলেট বিভাগে প্রতিবন্ধিতার ব্যাপকতা সবচেয়ে কম; প্রতি হাজারে ২১ দশমিক ৩ জন। পরিসংখ্যান বলছে, ময়মনসিংহ বিভাগে পুরুষের ক্ষেত্রে ২৯ দশমিক ৭ এবং নারীদের ক্ষেত্রে তা ৩০ দশমিক ৯ জন।
ময়মনসিংহ বিভাগীয় সমাজসেবা অফিসের অতিরিক্ত পরিচালক তাপস ফলিয়া বলেন, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের তালিকাভুক্ত করে সমাজসেবা অধিদপ্তরের অধীনে যেসব সুযোগ-সুবিধা রয়েছে, তা তাদের দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া যেসব প্রতিবন্ধিতা থেরাপির মাধ্যমে ঠিক হওয়ার সুযোগ রয়েছে, সে ধরনের ব্যক্তিকে প্রয়োজনীয় থেরাপিও দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি প্রতিবন্ধিতার বিষয়ে নারী-পুরুষনির্বিশেষে সব মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতেও নানা পদক্ষেপ রয়েছে।
বিবিএসের ওই প্রতিবেদন বিশ্লেষণে আরো দেখা গেছে, ধর্মের অনুসারী বিবেচনায় নিলে মুসলমান ধর্মাবলম্বীদের তুলনায় হিন্দুদের মধ্যে প্রতিবন্ধিতার হার কিছুটা বেশি। প্রতি হাজার মুসলিম জনগোষ্ঠীর বিপরীতে প্রতিবন্ধীর সংখ্যা ২৫ দশমিক ২ জন। অন্যদিকে হিন্দু জনগোষ্ঠীর মধ্যে এটি ২৫ দশমিক ৭ জন। অন্যান্য ধর্মের অনুসারীদের মধ্যে প্রতিবন্ধিতার সর্বোচ্চ হার দেখা গেছে। তাদের মধ্যে প্রতি হাজারে ৪৫ দশমিক ৬ জন প্রতিবন্ধিতার শিকার।
প্রতিবন্ধিতার পরিসংখ্যান তৈরি করার জন্য এসভিআরএসে বাংলাদেশের ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন, ২০১৩’-এর পাশাপাশি ওয়াশিংটন গ্রুপ অন ডিজেবিলিটি স্ট্যাটিস্টিকস মডেল ও সংজ্ঞা দুটিকেই বিবেচনায় নিয়ে জরিপটি পরিচালনা করা হয়েছে।
‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন-২০১৩’ অনুসারে প্রতিবন্ধিতা বলতে একজন ব্যক্তির দীর্ঘমেয়াদি বা স্থায়ী শারীরিক, মানসিক, বুদ্ধি, বিকাশগত বা সংবেদনশীল বৈকল্য এবং উপলব্ধিগত ও পরিবেশগত বাধাগুলোর মিথস্ক্রিয়াকে বোঝানো হয়েছে, যা তাদের সমাজের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে অন্যদের মতো সমভাবে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করে। এ আইনে ১২ ধরনের প্রতিবন্ধিতাকে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে এখানে, যার মধ্যে রয়েছে অটিজম বা অটিজম থেকে উদ্ভূত প্রতিবন্ধিতা, শারীরিক প্রতিবন্ধিতা, মানসিক অসুস্থতা যা ধীরে ধীরে প্রতিবন্ধিতার দিকে অগ্রসর হয়, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধিতা, কথা বলার প্রতিবন্ধিতা, বৃদ্ধিবৃত্তিক। প্রতিবন্ধিতা, শ্রবণপ্রতিবন্ধিতা, বধির-অন্ধত্ব, সেরিব্রাল পালসি, ৮ ডাউন সিনড্রোম, একাধিক প্রতিবন্ধিতা ও অন্যান্য প্রতিবন্ধিতা। ২০১৩ সালের আইনে বর্ণিত প্রতিবন্ধিতার ধরন ও সংজ্ঞাকে বিবেচনায় রেখে বর্তমান জরিপটি তথ্য সংগ্রহের জন্য মডিউল তৈরি করা হয়েছে।
প্রতিবন্ধিতা কমিয়ে আনতে বা প্রতিরোধ করতে কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে জানতে চাইলে তাওহিদা জাহান খবরের কাগজকে বলেন, ‘যখন কোনো নারী গর্ভধারণ করেন তখন তাকে পুষ্টিকর ও নিরাপদ খাবার খেতে দেওয়া প্রয়োজন। সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ওই নারীকে দিতে হবে। বিশেষভাবে যে খাবারগুলো তিনি খাচ্ছেন সেগুলো ফরমালিনমুক্ত ও মাছগুলো যেন পারদমুক্ত হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। পাশাপাশি পরিবেশ দূষণ থেকে গর্ভবতী মাকে দূরে রাখতে হবে। কারণ বংশগত সমস্যা তো আমাদের হাতে নেই কিন্তু পরিবেশ ও খাবার তো আমাদের হাতে আছে। তাহলে হয়তো আমরা প্রতিবন্ধকতাকে কিছুটা প্রতিরোধ করতে পারি।’খবরের কাগজ