আন্তর্জাতিক ডেস্ক:- ইসরায়েলকে অবশ্যই গাজায় গণহত্যামূলক কার্যক্রম বন্ধে সব ধরনের পদক্ষেপ নিতে হবে। শুক্রবার (২৬ জানুয়ারি) এ রায় দেয় আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালত (আইসিজে)। তবে জাতিসংঘের শীর্ষ আদালত তাৎক্ষণিকভাবে যুদ্ধবিরতির কোনো নির্দেশনা দেয়নি।
এ ছাড়া গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যা চালানোবিষয়ক যে অভিযোগ দক্ষিণ আফ্রিকা উত্থাপন করেছে, তা খতিয়ে দেখার এখতিয়ার আছে বলে সিদ্ধান্ত জানিয়েছে আইসিজে। এর মধ্য দিয়ে মামলা নাকচ করে দেওয়ার জন্য ইসরায়েলের আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন আদালত।
আদালতে বিচারক বলেন, ‘জেনোসাইড কনভেনশন অনুসারে কোনো রাষ্ট্র অন্য রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে আইসিজেতে আসতে পারে। গাজা পরিস্থিতি নিয়ে মামলা করার আইনি অধিকার দক্ষিণ আফ্রিকার রয়েছে।’
শুক্রবারের রায় ঘোষণা করেন ১৭ জন বিচারকের প্যানেল। তাদের মধ্যে ১৫ জন স্থায়ী বিচারক। এর বাইরে একজন করে বিচারক নিয়োগ দিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা ও ইসরায়েল।
বিবিসির প্রতিবেদন বলছে, গাজায় গণহত্যামূলক কার্যক্রম বন্ধে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীকে সব ধরনের পদক্ষেপ নিতে হবে- বিচারকদের ১৫ জন এটির পক্ষে ভোট দেন, বিপক্ষে ভোট দেন ২ জন। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী গণহত্যামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে না ইসরায়েলকে তা নিশ্চিত করতে হবে- এটির পক্ষেও ১৫টি ভোট পড়ে। বিপক্ষে ভোট দেন ২ বিচারক।
গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে গণহত্যামূলক কর্মকাণ্ড ঠেকাতে ইসরায়েলকে সব ধরনের পদক্ষেপ নিতে হবে এবং এর সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি দিতে হবে- এ বিষয়ে পক্ষে ১৬টি ভোট এবং বিপক্ষে ১টি ভোট পড়ে। এ ছাড়া অবরুদ্ধ উপত্যকাটিতে জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় সহায়তা ও মৌলিক সেবা নিশ্চিতে ইসরায়েলকে তাৎক্ষণিক ও কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে- এটির পক্ষে ১৬টি এবং বিপক্ষে ১টি ভোট পড়ে।
আদালতের রায় অনুসারে, গণহত্যামূলক বলে বিবেচিত হতে পারে এমন সব কর্মকাণ্ড প্রতিহত করতে ইসরায়েলকে সব ধরনের পদক্ষেপ নিতে হবে। কোনো গোষ্ঠীর সদস্যকে হত্যা করা যাবে না, শারীরিক ক্ষতি করা যাবে না, এমন পরিস্থিতি তৈরি করা যাবে না যা কোনো গোষ্ঠীকে ধ্বংসের মুখে নিয়ে গিয়ে দাঁড় করায়, জন্মগ্রহণ ঠেকানো যাবে না।
রায় আরও বলছে, ইসরায়েলকে অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে যে, তাদের সামরিক বাহিনী কোনো গণহত্যামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে না। গাজায় গণহত্যাকে প্ররোচিত করতে পারে এমন প্রকাশ্য মন্তব্য করা যাবে না এবং এ ব্যাপারে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। মানবিক প্রবেশাধিকার নিশ্চিতেও ইসরায়েলকে পদক্ষেপ নিতে হবে।
এ ছাড়া গণহত্যার মামলার প্রমাণ নষ্ট করা যাবে না, এটি ঠেকাতে ব্যবস্থা নিতে হবে ইসরায়েলকে। আদালতের এসব নির্দেশের বিষয়ে ইসরায়েলকে এক মাসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
হামাসের হাতে থাকা জিম্মিদের নিয়েও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন আদালত। তাদের অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের অন্তর্বর্তীকালীন রায় ছিল এটি। দক্ষিণ আফ্রিকা গণহত্যার যে অভিযোগ তুলেছে, সেটির রায় আসতে কয়েক বছর সময় লাগতে পারে। ইসরায়েল অভিযোগকে ‘ভিত্তিহীন’ আখ্যা দিয়ে দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যমের প্রতিবেদন বলছে, আগামী দিনগুলোতে গাজায় সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা করতে সিআইএ প্রধানের ইসরায়েলি, কাতারি এবং মিসরীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাতের কথা রয়েছে। সূত্র: বিবিসি, রয়টার্স