রাঙ্গামাটি:- রাঙ্গামাটির কাপ্তাই উপজেলায় এক প্রতিবন্ধী মারমা নারী ধর্ষণের ঘটনায় দ্রুত বিচার ও দোষীদের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ (পিসিসিপি) রাঙামাটি জেলা শাখা।
সোমবার ২০ (অক্টোবর) বিকেলে শহরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে এই বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন পিসিসিপি রাঙ্গামাটি জেলা সভাপতি তাজুল ইসলাম তাজ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক পারভেজ মোশাররফ হোসেন। এতে বক্তব্য রাখেন জেলা সাধারণ সম্পাদক মো. আলমগীর হোসেন, ৩৫ কাঠুরিয়া স্মৃতি সংসদের আহ্বায়ক শাখাওয়াত হোসেন, পিসিএনপি রাঙামাটি জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক মো. হুমায়ুন কবিরসহ সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।
সভায় বক্তারা অভিযোগ করেন, কাপ্তাই উপজেলার চিৎমরম ইউনিয়নের চংড়াছড়ি মুখ এলাকায় এক প্রতিবন্ধী মারমা নারীকে স্বজাতি তিন ব্যক্তি অনুচিং মারমা (৫০), কালা মারমা (৫৫) ও মং উ মারমা (৩৫) ধর্ষণ করেছে। ধারাবাহিক নির্যাতনের ফলে ওই নারী বর্তমানে পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা বলে দাবি করেন তারা।
উপস্থিত বক্তারা জানান, গত ১৭ অক্টোবর স্থানীয়ভাবে একটি প্রথাগত বিচার অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে অভিযুক্তদের তিন লাখ টাকা জরিমানা এবং সমাজের নামে শুকর ক্রয়ের জন্য অতিরিক্ত ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। তবে একই বিচারে ভুক্তভোগীকেও ‘সমাজের নিয়ম ভঙ্গের’ দায়ে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে যা বক্তাদের মতে এক ধরনের অবিচার ও ভুক্তভোগীর প্রতি দ্বিতীয়বারের মতো নিপীড়ন।
পিসিসিপি জেলা সভাপতি তাজুল ইসলাম তাজ বলেন, ‘একজন প্রতিবন্ধী নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন, অথচ তাকেই সমাজের নিয়ম ভঙ্গের অভিযোগে জরিমানা করা হয়েছে। এটি ন্যায়বিচার নয়, বরং অন্যায়ের বৈধতা দেওয়ার নামান্তর।‘
তিনি আরও অভিযোগ করেন, ওই এলাকা একটি আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলের সশস্ত্র বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকায় ভুক্তভোগীর পরিবার আতঙ্কে আইনের আশ্রয় নিতে পারছে না।
পিসিসিপি সাধারণ সম্পাদক মো. আলমগীর হোসেন বলেন, ‘সামাজিক বিচারের নামে পাহাড়ে নারীর প্রতি সহিংসতার এ ঘটনা এক ভয়াবহ উদাহরণ। অর্থদণ্ড দিয়ে দায়মুক্তি দেওয়া কোনো বিচারব্যবস্থা হতে পারে না।‘
তিনি আরও অভিযোগ করেন, এ ঘটনায় পাহাড়ের প্রভাবশালী সংগঠনগুলো যেমন ইউপিডিএফ, জেএসএস বা কেএনএফ কেউই কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। ‘যখন কোনো বাঙালির বিরুদ্ধে পাহাড়ি নারীর প্রতি অভিযোগ ওঠে, তখনই আন্দোলন ও প্রচারণা শুরু হয়। কিন্তু এখন প্রকৃত ধর্ষণের ঘটনাতেও নীরবতা দেখা যাচ্ছে,’।
“এই দ্বিমুখী অবস্থান প্রমাণ করে, পাহাড়ে মানবাধিকারের প্রশ্নটি প্রায়ই রাজনীতির ছায়ায় ঢাকা পড়ে যায়।”
পিসিসিপি নেতারা দ্রুত সরকারি পর্যায়ে তদন্ত, অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার এবং ভুক্তভোগী নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন।প্রেস বিজ্ঞপ্তি