ডেস্ক রির্পোট:- ঐকমত্য কমিশন জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) বেশ কিছু দলের দাবিকে গুরুত্ব দিয়ে সিদ্ধান্ত দিয়েছে যে একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় প্রধানের দায়িত্ব পালন করা যাবে না। এ প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছিল দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এখনো রয়েছে অমীমাংসিত। সেটি হলো সংসদের কয়টি কক্ষ হবে, কোন কক্ষের ভোটপদ্ধতি কী হবে? এ ইস্যুতে জামায়াতে ইসলামী, এনসিপিসহ কিছু দল আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব বা পিআর পদ্ধতি দাবি করছে। বিএনপি ও সমমনা দলগুলো পিআর পদ্ধতির বিরোধিতা করছে। বিএনপি এখন অপেক্ষায় আছে ঐকমত্য কমিশন কোন পক্ষে রায় দেয় তা দেখার জন্য। এ নিয়ে বিএনপির মধ্যে দিনদিন উদ্বেগ বাড়ছে। জানতে চাইলে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমাদের রাজনৈতিক এবং সামাজিক ব্যবস্থায় মানুষ তার নির্দিষ্ট নির্বাচনি এলাকায় একজন ব্যক্তিকে জনপ্রতিনিধি হিসেবে দেখে অভ্যস্ত। যিনি তাদের প্রতিনিধিত্ব করবেন, তাকে দেখেই ভোট দেয়। একাধিক প্রতিনিধি মানুষের মধ্যে ভোটের আগ্রহ কমিয়ে দেবে এবং কার্যকরী গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হবে না। স্বতন্ত্র প্রার্থীর কোনো বিধানও এখানে নেই। একজন জনপ্রিয় নিরপেক্ষ ব্যক্তি নির্বাচনে জয়লাভ করলেও কোথাও এমপি হতে পারবেন না। এ রকম বহুবিধ অসুবিধা আছে পিআর পদ্ধতিতে। এসব কারণে কোনোমতেই পিআর মানা সম্ভব না।’
বিএনপির নেতারা বলছেন, বিএনপি পিআর পদ্ধতিতে ভোটের প্রস্তাবকে আমলেই নিতে রাজি নয়। বিষয়টি চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হলে রাজনৈতিকভাবে তা মোকাবিলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। গত বুধ ও বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভায় এ বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে। তারা বলছে, সরকারের ঘনিষ্ঠ একটি অংশ নিজেদের স্বার্থে এই নতুন ইস্যু সামনে এনে নির্বাচন পেছানোর চেষ্টা করতে পারে। পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে ভোটের শতকরা হিসাবে কোনো দলই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না।
এ দেশে সবচেয়ে বড় দল রেকর্ড ভোট হয়তো ৪০ শতাংশ পেয়েছে। সেই হিসাবেও পিআর পদ্ধতিতে ৩০০ আসনের মধ্যে ১২০ আসন পাবে। তাহলে সরকার গঠন করতে পারবে না। এ রকম জটিল অবস্থায় কোয়ালিশন সরকার গঠন হবে এবং ঝুলন্ত সংসদ হবে। এতে কোনো সরকারই দেশ পরিচালনা করতে পারবে না। কিন্তু ওই সব ক্ষুদ্র দল বা যারা জনগণের কম প্রতিনিধিত্ব করে, তাদের সুবিধা হবে। তারা যদি ১০ ভাগ ভোট পায়, তাহলে ৩০টি আসন পাবে। ৫ ভাগ পেলে ১৫টি আসন পাবে। এখন এসব দলের প্ররোচনায় যদি পিআর পদ্ধতি চালু হয়, তাহলে বাংলাদেশে সব সময় আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে, সরকার পরিচালনার ক্ষেত্রে অসুবিধা হবে। বিএনপি চায়, নিম্নকক্ষের প্রাপ্ত আসনের অনুপাতে হবে উচ্চকক্ষ। যেভাবে সংরক্ষিত মহিলা আসন নির্ধারণ করা হয়। উচ্চকক্ষে তারাই আসবেন, যারা রাষ্ট্রের বিভিন্ন সেক্টরে অবদান রেখেছেন। সমাজের ও রাষ্ট্রের অগ্রগতির জন্য, এমনকি বিশ্বের বিভিন্ন বিষয়ে যারা অবদান রাখতে সক্ষম হয়েছেন সেই মানুষগুলোকে নিয়ে আসা হবে। সেই শ্রেণি-পেশার লোকজন বলতে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, সমাজবিজ্ঞানী, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, ক্রীড়াবিদ, নারীদের প্রতিনিধিত্ব, মানবাধিকারকর্মী এবং বঞ্চিত বা পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব থাকবে। যাদের মেধা, প্রতিভা ও অবদান জাতিকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবে। এ ক্ষেত্রে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাব হলো ভোটের অনুপাতের ভিত্তিতে উচ্চকক্ষ গঠন হবে। অবশ্য সংসদের উচ্চকক্ষ, নিম্নকক্ষ ও সংরক্ষিত নারী আসন সব ক্ষেত্রেই পিআর পদ্ধতি চালুর পক্ষে জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, এনসিপি, গণঅধিকার পরিষদসহ ১৮টি দল।
পিআর পদ্ধতি নিয়ে দলগুলোর অবস্থান : দেশে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ৫৫টি। বিভিন্ন কারণে চারটি দলের নিবন্ধন বাতিল এবং আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত রয়েছে। ৫০টি নিবন্ধিত দলের মধ্যে ১৮টি পিআর পদ্ধতির নির্বাচনের পক্ষে। বিপক্ষে অবস্থান ২৮টি দলের। চারটি দল তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেনি। কিছু দল আংশিকভাবে এই পদ্ধতির পক্ষে। বিপক্ষে থাকা দলগুলো মূলত বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গী। এর বাইরে জুলাই অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক দল জাতীয় এনসিপি পিআর পদ্ধতির পক্ষে জোরালো অবস্থান নিয়েছে। মূলধারার ইসলামি দলের মধ্যে পাঁচটি দল পিআর পদ্ধতির পক্ষে, দুইটি বিপক্ষে এবং দুইটি দল অবস্থান পরিষ্কার করেনি।বাংলাদেশ প্রতিদিন