শিরোনাম
খাগড়াছড়িতে দুই গ্রুপের গোলাগুলি, নিহত ৪, ইউপিডিএফের না থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া সীমান্ত সংঘাত : নি/হত ৩২ বঙ্গোপসাগরে নতুন উত্তেজনার সূচনা: রাখাইন করিডোর নিয়ে চীন, ভারত, যুক্তরাষ্ট্রের লড়াই দেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পাচ্ছেন দশম গ্রেড পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের হাতে মারণাস্ত্র,স্বাধীন জুম্মল্যান্ড প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখিয়ে অশান্ত করা হচ্ছে, গড়ে উঠেছে অস্ত্রাগার বিএনপির উদ্বেগ পিআর ঐকমত্যের জুলাই সনদে ভিন্নমতও থাকবে পার্বত্য অঞ্চলকে খ্রিস্টান রাজ্য বানানোর চেষ্টা চলছে ১২ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের টার্গেটে এগোচ্ছে সরকার মাইলস্টোন ট্র্যাজেডি : অকালে ঝরা ফুল,যাঁদের হারালাম

ঐকমত্যের জুলাই সনদে ভিন্নমতও থাকবে

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় শনিবার, ২৬ জুলাই, ২০২৫
  • ৩৩ দেখা হয়েছে

চলতি মাসেই জুলাই সনদ ঘোষণা করতে চায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।
মতৈক্য না হলে থাকছে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ নেওয়ার সুযোগ।
মঙ্গলবারের মধ্যে দ্বিতীয় ধাপের সংলাপ শেষ করবে কমিশন।

ডেস্ক রির্পোট:- জুলাই অভ্যুত্থানের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান দুটি কাজের একটি হলো, রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে রাষ্ট্রব্যবস্থা সংস্কারের একটি রূপরেখা দেওয়া; যেটি জাতীয় সনদ আকারে ঘোষণা করা হবে। এই লক্ষ্যে গঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশন চলতি মাসেই ‘জুলাই সনদ’ নামে এই জাতীয় সনদ দেওয়ার জোর চেষ্টা চালাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সংস্কার প্রস্তাবের সব বিষয়ে রাজনৈতিক মতৈক্য না হলে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ বা ভিন্নমত পোষণের সুযোগ রেখেই জাতীয় সনদ ঘোষণা করতে চায় কমিশন। সে অনুযায়ী প্রস্তুতি চলছে বলে কমিশন সূত্রে জানা গেছে।

সম্প্রতি রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে জুলাই সনদ তৈরির প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ও দৃশ্যমান রাখার নির্দেশনা দেন কমিশনের সভাপতি ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক কাঠামোর সংস্কার এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই বলেও জানান তিনি। বৈঠকে ঐকমত্য কমিশনের কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করা হয়। দ্রুততম সময়ের মধ্যে জুলাই সনদ তৈরির কাজ সম্পন্ন করতে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চলছে বলে কমিশনের সদস্যরা প্রধান উপদেষ্টাকে জানান।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সূত্রগুলো বলছে, প্রতিদিনের সংলাপের আলোকে জুলাই সনদ প্রণয়নের কাজ চলছে। সনদে সংবিধান, বিচার বিভাগ, নির্বাচন ব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, দুর্নীতি দমন ও পুলিশ সংস্কার কমিশনের ১৬৬টি প্রস্তাবের মধ্যে দলগুলো কোন কোন বিষয়ে একমত থাকবে; তার উল্লেখ থাকবে। কোন দল কোন প্রস্তাবে আপত্তি জানিয়েছে, তা-ও বলা থাকবে। সরকারের ঘোষিত মৌলিক সংস্কারের অধিকাংশ প্রস্তাব সংবিধান-সম্পর্কিত হওয়ায় সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবগুলো সনদে শুরুতেই রাখা হবে। ঘোষণার আগে সনদের খসড়া রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো হবে।

এরপর দলগুলোর স্বাক্ষর নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে জুলাই সনদ ঘোষণা করা হবে।

জুলাই সনদকে ঘিরে রাজনৈতিক চাপ বাড়তে পারে, এমনটি মনে করছে সরকার। এ কারণে ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে সনদটি ঘোষণা করতে চায় তারা। এই লক্ষ্যে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কাজ করছে। কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এ নিয়ে অধিকতর আলোচনা করবে। সনদের খসড়া দলগুলোকে দেওয়ার পর দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের পরিবারসহ বসার পরিকল্পনা রয়েছে কমিশনের। প্রয়োজনে সেখানে দুই পক্ষের প্রত্যাশা ও বক্তব্য নেওয়া হবে, যা বাংলাদেশ টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করা হবে।

রাষ্ট্র সংস্কারে গত বছর প্রথম দফায় ছয়টি কমিশন করে সরকার। সেগুলো হলো—সংবিধান সংস্কার কমিশন, বিচার ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন, দুদক সংস্কার কমিশন ও পুলিশ সংস্কার কমিশন। গত ফেব্রুয়ারির শুরুতে ছয়টি কমিশন তাদের পূর্ণাঙ্গ মতামত সরকারের কাছে তুলে ধরে। এর ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত নিয়ে সংস্কার বাস্তবায়নে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি ছয় মাস মেয়াদি জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হয়। আগামী ১৫ আগস্ট ওই কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। কমিশন প্রথম ধাপে ৩৩টি রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে ৪৫টি অধিবেশনে পৃথক সংলাপ করে। দ্বিতীয় ধাপে ১৮ দিনে ৩০টি দল ও জোটের সঙ্গে বিষয়ভিত্তিক সংলাপ শুরু করে। সেখানে মৌলিক ১৯টি বিষয়ে দলগুলোর মতামত নিচ্ছে। সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন, সংসদীয় স্থায়ী কমিটি, নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ, রাষ্ট্রপতির ক্ষমা-সম্পর্কিত বিধান, বিচার বিভাগ বিকেন্দ্রীকরণ, প্রধান বিচারপতি নিয়োগ, জরুরি অবস্থা ঘোষণা, সংবিধান সংশোধন এবং প্রধানমন্ত্রীর একাধিক পদের বিষয়ে এখন পর্যন্ত একমত হয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো। এর মধ্যে ৭০ অনুচ্ছেদ ও প্রধানমন্ত্রীর একাধিক পদ নিয়ে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দেবে বিএনপি। সংবিধান ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানে নিয়োগে পৃথক পৃথক প্রস্তাব দেয় কমিশন। সেখানে নির্বাচন কমিশন নিয়োগের বিধান সংবিধানে যুক্ত করার বিষয়ে একমত হয় দলগুলো। সরকারি কর্মকমিশন, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, দুর্নীতি দমন কমিশন এবং ন্যায়পাল নিয়োগ বিধানের বিষয়ে আগামীকাল রোববার আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। বিষয়গুলো সংবিধানে যুক্ত করার বিষয়ে দ্বিমত জানিয়েছে বিএনপি। এ জন্য এই আলোচনায় বিএনপি অংশ নেবে না বলে বৃহস্পতিবার দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ জানিয়ে দিয়েছেন।

সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের নিয়োগের বিধান সংবিধানে যুক্ত করাকে মৌলিক সংস্কার হিসেবে বলছে কমিশন। সংবিধান ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের স্বাধীনতার পথ নিশ্চিত করতে হবে। প্রকৃতপক্ষে এগুলো যাতে নির্বাহী বিভাগের করতলগত না থাকে, এমন ব্যবস্থা করতে হলে, তা অবশ্যই সাংবিধানিকভাবে করতে হবে। সে ক্ষেত্রে বাকি চার বিষয়ে বিএনপিকে নোট অব ডিসেন্ট দেওয়ার সুযোগ রাখা হবে।

সংবিধান ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ, সংখ্যানুপাতিকে (পিআর) উচ্চকক্ষ, সরাসরি নির্বাচনে সংসদে নারী আসন, এই তিন বিষয়ে ঐকমত্যে আসাকে গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। কিন্তু এই বিষয়গুলো নিয়ে এখনো ঐকমত্য হয়নি। এ ছাড়া সংসদ সদস্যদের একাধিক পদ, প্রধানমন্ত্রীর একাধিক পদ, নাগরিকের মৌলিক অধিকার সম্প্রসারণ এবং রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও দায়িত্ব (অনুচ্ছেদ ৪৮(৩)—এই চার বিষয়ে এখনো কোনো আলোচনা হয়নি।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ছয়টি কমিশনের যেসব সুপারিশের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হবে, তা জুলাই সনদে থাকবে। জুলাই সনদের প্রধান বিষয় হচ্ছে, বাংলাদেশের রাষ্ট্রকাঠামোর ভবিষ্যতের পথরেখা নির্ধারণ করা। তিনি আরও বলেন, ‘ইতিমধ্যে যেসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে, তা মীমাংসার জায়গায় যেতে হবে। আমরা আশা করি, দ্রুতই মীমাংসার জায়গায় যাওয়া যাবে। যেহেতু অনেকগুলো বিষয়ে সকলের মতামত জানা গেছে, এখন একটা সিদ্ধান্তের জায়গায় আসা সম্ভব বলে মনে করি।’

ঐকমত্য কমিশন রোববার থেকে মঙ্গলবারের মধ্যে দ্বিতীয় ধাপের সংলাপ শেষ করতে চায় বলে জানা গেছে। এ জন্য অতীতে আলোচনা হওয়া বিষয়ে কমিশনের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত জানানো হবে। সেখানে টু দ্য পয়েন্টে দলগুলোকে আলোচনা করতে দেওয়া হবে। এখন পর্যন্ত আলোচনায় যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে, সেগুলো এবং ঐকমত্য না হওয়া বিষয়গুলো নিয়ে সনদের একটি খসড়া কমিশন তৈরি করছে বলে জানা গেছে। সেটা রোববার বা সোমবার দলগুলোকে দেওয়া হতে পারে বলে বলছে কমিশন।

এদিকে উচ্চকক্ষের বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাতে কমিশনকে দায়িত্ব দিয়েছে দলগুলো। কমিশনের পক্ষ থেকে ভোটের সংখ্যানুপাতিকে (পিআর) উচ্চকক্ষের বিষয়ে বলা হয়েছে, যার বিরোধিতা করছে বিএনপিসহ তার সমমনা পাঁচটি দল ও জোট। অন্যদিকে জামায়াত, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন, এবি পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, জেএসডি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণঅধিকার পরিষদসহ ২১টি দল পিআরের পক্ষে।

জুলাই সনদ প্রণয়ন নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা গেছে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে। জুলাই সনদ ঘোষণা নিয়ে সংশয়ের কথা বলেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেছেন, ‘জুলাই সনদ প্রণয়নের কার্যক্রম চলছে অত্যন্ত ধীরগতিতে। আমরা সংস্কার কমিশনকে বলেছিলাম, আগস্টের ৫ তারিখের আগে এটি প্রণয়ন করতে হবে। কিন্তু যে ধীরগতি লক্ষ করছি, তাতে আমার কাছে মনে হয়, এই সময়ের মধ্যে কি আপনারা এই কাজ করতে পারবেন?’

জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ‘আমরা জুলাই সনদের পক্ষে এবং জুলাই সনদ স্বাক্ষরিত হবেই। কারণ, যে পরিবর্তন, জীবন ও রক্ত আমরা দিয়েছি, এটার যদি কিছুই না হয়, আবার আগের জায়গায় ফিরে যায়, তাহলে তো এই ত্যাগ অর্থহীন হবে।’

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, মৌলিক সংস্কার বাস্তবায়নের বিষয়টি জুলাই সনদে থাকতে হবে। তিনি বলেন, ‘সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে ঐকমত্য কমিশন মৌলিক সংস্কার বাস্তবায়নের রূপরেখা দিয়ে জুলাই সনদ প্রণয়ন করবে। এই বাস্তবতা এখনো শেষ হয়নি। আমরা আশাবাদী।’আজকের পত্রিকা

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions