অভ্যুত্থানের ৯ মাস পেরোলেও কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন অধরা

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় শনিবার, ১৭ মে, ২০২৫
  • ৫ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- অভ্যুত্থানের ৯ মাস পার হলেও কাঙ্ক্ষিত রাজনৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক পরিবর্তন থেকে বাংলাদেশ দূরেই অবস্থান করছে। শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেতৃত্বে সংস্কার প্রক্রিয়া শুরু হলেও নানা জটিলতা ও মতবিরোধের ফলে অগ্রগতি ব্যাহত হচ্ছে। নির্বাচন, বিচারব্যবস্থা ও সংবিধান সংস্কারে একাধিক কমিশন কাজ করলেও জাতীয় ঐকমত্য গড়ে তোলা কঠিন হয়ে পড়েছে। হাসিনার শাসনামলের নিপীড়নের পুনরাবৃত্তি রোধ করতে রাজনৈতিক বিভাজন ভুলে সব দলের পক্ষ থেকেই গণতান্ত্রিক সংস্কারের দাবি জোরালো হচ্ছে। কিন্তু অভ্যুত্থানের ৯ মাস পরও কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন এখনো অনেকটা অধরা রয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছে বৃটেনের শক্তিশালী সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন দ্য ইকোনমিস্ট।

এতে বলা হয়, গত ১৬ বছর ধরে একটানা ‘ভূমিকম্পে’ কাঁপছে বাংলাদেশ। এ কথা বলেছেন মাইক্রোক্রেডিটের পথপ্রদর্শক ও শান্তিতে নোবেলজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তার এই মন্তব্য আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী শাসনের প্রতি ইঙ্গিত করে, ২০২৪ সালের আগস্টে ব্যাপক গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামী সরকারের পতন হয়। এখন দেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্বপালন করছেন ড. ইউনূস। বলছেন, যা কিছু ধ্বংস হয়েছে, আমরা তা ঠিক করার চেষ্টা করছি। তিনি আরও যোগ করেন, আমরা সঠিক পথে এগোচ্ছি, জনগণ আমাদের সঙ্গে আছে। আমরা আশাবাদী।

এমন আশাই এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। শেখ হাসিনার পতনের পর তার শাসনামলের অনিয়ম ও নিপীড়নের ব্যাপকতা ধীরে ধীরে বের হয়ে আসছে। গত বছর প্রকাশিত একটি শ্বেতপত্রে অভিযোগ করা হয়েছে, হাসিনার শাসনামলে বছরে প্রায় ১৬ বিলিয়ন ডলার (১ হাজার ৬০০ কোটি ডলার) বিদেশে পাচার করা হয়েছে। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে হত্যা, গুম ও গণহত্যার মতো গুরুতর অভিযোগে একের পর এক মামলা করা হচ্ছে (যদিও তিনি সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন)। রাজনৈতিক ধারার বিভাজন ভুলে সব দলের পক্ষ থেকেই গণতান্ত্রিক সংস্কারের দাবি উঠেছে। যেন এ ধরনের নিপীড়নের পুনরাবৃত্তি রোধ করা যায়।

শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পরপরই এই সংস্কারের প্রক্রিয়া শুরু হয়। গত সেপ্টেম্বরেই ড. ইউনূস নির্বাচন, বিচারব্যবস্থা ও সংবিধানসহ বিভিন্ন খাতে সংস্কারের ধারণা দিতে একাধিক কমিশন গঠনের উদ্যোগ নেন। এসব কমিশনে সুশীল সমাজ ও একাডেমিয়া থেকে আসা বিশেষজ্ঞরা কাজ করছেন। আর এসব কমিশনের সুপারিশ পর্যালোচনা ও সমন্বয়ের জন্য সরকার একটি পৃথক সংস্থা গঠন করেছে। যার নাম জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এ পর্যন্ত প্রাপ্ত ১৬৬টি সুপারিশ একত্র করে একটি স্প্রেডশিটে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে, যেখানে ৩৫টি রাজনৈতিক দল তাদের মতামত দিয়েছে। এই ঐকমত্য কমিশন এখন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যৌথভাবে একটি ‘জুলাই সনদ’ প্রণয়নের কাজ করছে, যা নির্বাচন অনুষ্ঠানের পথ সুগম করবে এবং ‘নতুন বাংলাদেশের’ সূচনা করবে বলে উল্লেখ করেছেন ড. ইউনূস। তবে ঐকমত্যে পৌঁছানো সহজ নয়। রাজনীতিক এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে মতবিরোধ নিয়ে প্রথমেই বিতর্ক তৈরি হয়েছে। কোন কোন বিষয়ে কমিশন থাকা উচিত সে বিষয় নিয়ে একমত হতে পারছে না তারা। কেউ কেউ অভিযোগ করছেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল ভিত্তি তৈরি পোশাক খাত নিয়ে কোনো কমিশন গঠিত হয়নি, আবার অনেকের মতে, শিক্ষাখাতকে উপেক্ষা করা হয়েছে। তবে সবচেয়ে বড় বিতর্কের সৃষ্টি করেছে নারী সংস্কার কমিশন। যা গঠিত হতে দেরি হয়েছে। এই কমিশনের সুপারিশে ইসলামী উত্তরাধিকার আইনে পরিবর্তনের প্রস্তাব রাখা হয়েছে। যার মাধ্যমে নারীদের অধিক অধিকার দেয়ার কথা বলা হয়েছে। ফলে ইসলামপন্থি দলগুলোর তীব্র প্রতিবাদ ও ব্যাপক ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

তবু সংস্কার কমিশনগুলো আশাবাদী। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ ইতিমধ্যে বাস্তবায়িত কিছু পরিবর্তনের দিকে ইঙ্গিত করেছেন। যেমন, হাইকোর্টে বিচারপতি নিয়োগের জন্য একটি স্বাধীন প্রক্রিয়া। আলী রীয়াজ জানিয়েছেন, ১৫ই মে’র পরই সংলাপের দ্বিতীয় ধাপ শুরু হবে, আর আগস্টের মধ্যেই একটি চূড়ান্ত সনদ প্রণয়ন সম্ভব হবে বলে তিনি আশাবাদী।

নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী অগ্রগতি হলে, চলতি বছরের ডিসেম্বরেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। ড. ইউনূস জোর দিয়ে বলেছেন, ২০২৬ সালের জুনের পরে নির্বাচন কোনোভাবেই পেছানো হবে না এবং তিনি নিজে ওই নির্বাচনে অংশ নেবেন না। তবে এই বিলম্ব ইতিমধ্যেই কিছু মূল্য চাপিয়ে দিচ্ছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার মূল্যস্ফীতি ও ব্যাংক খাত কিছুটা স্থিতিশীল করতে পেরেছে, কিন্তু অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এখনো দুর্বল। রাজনৈতিক পরিস্থিতিও এখনো ভঙ্গুর। এক জরিপে দেখা গেছে, জনগণের প্রায় ৬০ শতাংশ মনে করে, সরকার পরিবর্তনের পরও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটেনি। রাস্তায় বিক্ষোভ এখন প্রায় নিত্যদিনের চিত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিক্ষোভকারীদের সবচেয়ে সাধারণ দাবি হচ্ছে আওয়ামী লীগের বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত করা। ১২ই মে নির্বাচন কমিশন দলটির নিবন্ধন বাতিল করে দিয়েছে। ফলে তারা আর কোনো নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। তবে দলটির বিরুদ্ধে এত ঘৃণা ও ক্ষোভ থাকা সত্ত্বেও, এখনো জনগণের ছোট একটি অংশের আওয়ামী লীগের প্রতি সমর্থন রয়েছে। দলের জ্যেষ্ঠ নেতা মোহাম্মদ আরাফাত দাবি করেছেন, আওয়ামী লীগ ছিল ‘জনগণের ম্যান্ডেটপ্রাপ্ত’ সরকার। যাদের ‘জিহাদিরা’ সহিংস উপায়ে ক্ষমতা থেকে সরিয়েছে, এবং দলটি ‘বাংলাদেশে তাদের ন্যায্য স্থান পুনরুদ্ধারের জন্য লড়বে’। ক্ষমতার বাইরে থাকলেও আওয়ামী লীগ এখনো দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে অস্থিরতা তৈরি করতে সমর্থ হতে পারে।

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions