ডেস্ক রির্পোট:- জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয় থেকে ১৩ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশ পুলিশের এলিট ফোর্স র্যাবকে বিলুপ্ত করার আহ্বান জানিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, র্যাব ‘গুরুতর মানবাধিকার’ লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত। এরপর থেকেই মূলত সরকার নড়েচড়ে বসেছে।
র্যাব বিলুপ্তির জন্য জাতিসংঘ যে সুপারিশ করেছে তার বিকল্প ভাবা শুরু করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। জানা গেছে, র্যাবের বিকল্প হিসেবে পুলিশের নতুন বিশেষায়িত বাহিনী হিসেবে র্যাট নাম দেওয়া হতে পারে। তবে একাধিক নতুন নাম বিবেচনায় রয়েছে। বিশেষায়িত বাহিনী নতুন হলে এর পোশাক ও মনোগ্রাম পরিবর্তন করা হবে। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর পুলিশের নতুন পোশাক নির্ধারিত হয়েছে।
এলিট ফোর্স র্যাবে সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী, নৌবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ ও আনসারের চৌকস কর্মকর্তাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এতে বাহিনীর মধ্যে মনস্তাত্ত্বিক দূরত্ব রয়েছে। এই বিষয়টি এবার আমলে নিয়েছে সরকার। প্রেষণে অন্য বাহিনী থেকে সদস্যদের না এনে পুলিশের ১৬ ইউনিট থেকে চৌকস, দক্ষ ও সৎ কর্মকর্তাদের আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই বিষয়টি অন্য বাহিনীতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে কি না, তা বিবেচনা করছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ।
এ ছাড়া পুলিশের এই বিশেষায়িত বাহিনীতে জবাবদিহি ও স্বচ্ছতার জন্য আলাদা তদন্ত কমিটি করা হবে। যাতে বাহিনীর মধ্যে কোনো মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ আসলে নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে আত্মপক্ষ সাফাই করার পাশাপাশি দোষীদের শাস্তির আওতায় আনা যায়। তবে র্যাবকে বিলুপ্তি না করা হলে এর মূল থেকে আগা পর্যন্ত সংস্কার করা হবে। বিলুপ্তি না সংস্কার উভয় বিষয়টি ভেবে দেখছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি গত বুধবার রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে এক অনুষ্ঠান শেষে জানান, ‘র্যাব বিলুপ্তি না সংস্কারের বিষয়ে পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, র্যাব প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর বাহিনীটির যেমন আভিযানিক সাফল্য রয়েছে তেমন অভিযোগেরও পাহাড় রয়েছে। জোট সরকারের আমলে র্যাব চরমপন্থি, জঙ্গি, জলদস্যু ও বনদস্যু দমনে সাফল্য লাভ করে। এতে বাহিনী হিসেবে স্বাধীনতা পদকও পেয়েছে। কিন্তু, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে বাহিনীটি। বিরোধী দল দমনে ব্যবহার করা হয় পুলিশের এই বিশেষায়িত ফোর্সকে। শুধু তাই নয়, বিরোধী মত-পথের নেতাকর্মীদের গুমেরও অভিযোগ আছে বাহিনীটির ওপর।
র্যাবের বিরুদ্ধে মাদক অভিযানের নামে ক্রসফায়ারে হত্যা, নারায়ণগঞ্জের ৭ খুন ও বিএনপির একাধিক নেতাকে গুমের অভিযোগ ওঠে। এতে এই বাহিনীর সমালোচনা বেড়ে যাওয়ায় দেশে ও বিদেশে বাহিনীটির ইমেজ সংকট দেখা দেয়। নানা অভিযোগ ওঠায় দেশি আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় র্যাব সংবাদের শিরোনাম হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনমূলক কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে র্যাব এবং এই বাহিনীর ছয় কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ দপ্তরের ফরেন অ্যাসেটস কন্ট্রোল অফিস।
এই নিষেধাজ্ঞায় চাপে পড়ে যায় পুলিশের এই এলিট ফোর্স। পরে পতিত আওয়ামী লীগ সরকার বাধ্য হয়ে র্যাবের পক্ষে সাফাই গাওয়ার জন্য আমেরিকায় বিপুল অর্থ খরচ করে পিআর ফার্মের মাধ্যমে আমেরিকায় পররাষ্ট্র দপ্তরে নথিপত্র জমা দেয়। পাশাপাশি একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে আমেরিকার র্যাবের নিষেধাজ্ঞা কাটানোর উদ্যোগ নেওয়া হলেও কোনো কাজই আসেনি। উল্টো র্যাবে অর্থ ও ট্রেনিং বন্ধ করে দেয় আমেরিকান প্রশাসন। গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের আগ পর্যন্ত র্যাবের ব্যাপারে আমেরিকার অবস্থান আগের মতোই আছে। এর মধ্যে জাতিসংঘের প্রতিবেদন র্যাব বিলুপ্তির সুপারিশ আসার কারণে পুলিশের এই বিশেষায়িত ইউনিট নিয়ে নতুন করে ভাবা শুরু করেছে সরকার।