-আবাসন খাতের সংগঠন রিহ্যাবের উদ্যোগে ঢাকায় বসেছে পাঁচ দিনের আবাসন মেলা। সেখানে আবাসনসংশ্লিষ্ট সব সেবা মিলছে এক ছাদের নিচেই। এ সময় আবাসন খাতের বিভিন্ন দিক নিয়ে সঙ্গে কথা বলেছেন সাবেক রিহ্যাব সভাপতি এবং আবাসন নির্মাণ প্রতিষ্ঠান বিল্ডিং ফর ফিউচার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীরুল হক প্রবাল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আবু সাইম।
—: আবাসন খাত এখন কেমন চলছে?
তানভীরুল হক প্রবাল: আবাসন ও নির্মাণ দেশের জিডিপিতে বড় অবদান রাখছে। এই খাতের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক অনেক খাত ও উপখাত ওতপ্রোতভাবে জড়িত। নির্মাণসামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়াসহ নানা কারণে এখন এ খাতে সংকট চলছে। এখনো কিছু ফ্ল্যাট আছে, বেচাকেনাও আছে। তবে সামনের দিকে ফ্ল্যাট ও বেচাকেনা দুটোই কমে যাবে। কারণ, যেসব ফ্ল্যাট-প্লট আছে, তা পুরোনো বা আগে নেওয়া আবাসন প্রকল্পের। নতুন ডিটেইল এরিয়া প্ল্যানের (ড্যাপ) কারণে সামনে নতুন আবাসন প্রকল্প কমে যাবে। কারণ, এখন আগের চেয়ে বেশি জায়গা ছাড়তে হবে, উচ্চতায় ছাড় দিতে হবে। ফলে একই পরিমাণ জায়গায় কম ফ্ল্যাট তৈরি হবে, দাম বাড়বেই। বাসাভাড়াও বেড়ে যাবে।
—-: নির্মাণ ব্যয় আগের চেয়ে কেন বেড়েছে?
তানভীরুল হক প্রবাল: এমনিতেই ফ্ল্যাটের দাম আগের চেয়ে বেড়েছে। ডলার সংকটের কারণে এলসি করা যাচ্ছে না। নতুন লিফট, জেনারেটর আমদানি করা যাচ্ছে না। ইটের দাম বেড়ে গেছে। রডের দাম বেড়ে গেছে। টাইলসের দাম বেড়ে গেছে। এমন কোনো পণ্য নেই যার দাম আগের চেয়ে কমেছে বা আগের দামেই আছে। সার্বিকভাবে নির্মাণ ব্যয় ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ বেড়ে গেছে। তাই নতুন প্রজেক্টে দাম অনেক বেশি হবে। ড্যাপ পাস হয়েছে গত আগস্টে। এরপর যাঁরা ড্রয়িং করাচ্ছেন, সেগুলো তো এখনো আসেনি। সেসব প্রকল্প তৈরি হলে দামের প্রভাব আরও বেশি পড়বে। কারণ, আগের চেয়ে কম ফ্ল্যাট আসবে। কিন্তু জমি তো একই থাকবে।
—-: ড্যাপে প্রধান আপত্তি কী?
তানভীরুল হক প্রবাল: ড্যাপের প্রধান সমস্যা আগের চেয়ে ফ্লোর এরিয়া রেশিওর (ফার) কমে গেছে। অর্থাৎ ভবনের আয়তন ও উচ্চতা আগের চেয়ে কমে যাবে। আগে যেখানে ২০ হাজার বর্গফুট জায়গা পেতাম, এখন পাব ১৪ হাজার বর্গফুট। ফলে একই জমিতে আমি আগে ১০টা ফ্ল্যাট তৈরির সুযোগ পেলে, এখন পাব ছয়টা। এতে জমির দাম বেড়ে যাবে। এ ক্ষেত্রে দাম ঠিক রাখতে হলে হয় জমির মালিক, না হয় ডেভেলপারকে ছাড় দিতে হবে। জমির মালিক কিছু ছাড় দিলে সমস্যা থাকবে না। কিন্তু তা তো হবে না। জমির দাম বাড়লে, ফ্ল্যাটের পরিমাণ কমলে, অন্যান্য সামগ্রীর দাম বাড়লে ফ্ল্যাটের সরবরাহ কমে যাবে। ফলে সামনে দাম অস্বাভাবিক বাড়ার শঙ্কা রয়েছে।
——: ড্যাপের কি প্রয়োজন নেই?
তানভীরুল হক প্রবাল: ঢাকা শহরের ওপর মানুষের চাপ কমানো এবং উন্নত নাগরিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে ড্যাপ করা হয়েছে। এর সঙ্গে আমি দ্বিমত পোষণ করছি না। ড্যাপ তো দরকার। তবে আমরা ড্যাপের যে এফএআর আছে, তা সংশোধনের কথা বলছি।ড্যাপের এফএআর তো সব জায়গায় কমেনি। এটা কমেছে শান্তিনগর, সেগুনবাগিচাসহ সাধারণ মানুষের এলাকায়। অভিজাত এলাকায় কমেনি, সেখানে যথেষ্ট স্বাধীনতা আছে। সরকার যুক্তি দিচ্ছে অভিজাত এসব এলাকা প্ল্যানড, অন্য এলাকা আন-প্ল্যানড। কিন্তু পরিকল্পিত এলাকা করার দায়িত্ব তো সরকারের। সরকার সেখানে আগে থেকে রাস্তাঘাট করে দিলেই তো হতো। এখনো দিতে পারে। সরকারের মূল লক্ষ্য হচ্ছে ঢাকা থেকে লোক কমানো। কিন্তু তা এখনই হওয়া উচিত না। ঢাকায় এখন দুই কোটি লোক বাস করে, তাদের তো থাকতে দিতে হবে। মানুষের ঢাকায় আসা বন্ধ না করে আবাসন বন্ধ করা হয় কীভাবে।
—-: রিহ্যাব মেলা চলছে, বেচাকেনার কী অবস্থা?
তানভীরুল হক প্রবাল: নানা সীমাবদ্ধতা মেনেও ব্যবসায়ীরা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। এসবের প্রতিফলন ঘটছে এবারের আবাসন মেলায়। বেচাকেনা ভালোই চলছে। তবে কেউ কম দামে বিক্রি করতে পারছে না। তারপরও বিক্রি হচ্ছে। তবে গতবার যে দামে ছিল এবার তার চেয়ে দাম অনেক বেশি, এবার যে দামে পাবেন আগামীবার সে দামে পাবেন না।
—-: এমনিতেই দাম চড়া, আরও বাড়লে ক্রেতা তো থাকবে না। মধ্যবিত্ত কি আবাসন সুবিধা পাবে না?
তানভীরুল হক প্রবাল: দাম বেড়ে যাওয়া তো ক্রেতার জন্য একটা বড় সমস্যা। তাই তাদের জন্য কম সুদে বা সহজ শর্তে আবাসন ঋণই একমাত্র সমাধান আছে। আর কিছু ক্ষেত্রে শুল্ক ছাড় দিল উৎপাদন ব্যয় হয়তো কমতে পারে।প্রকৃত মধ্যবিত্তের জন্য ফ্ল্যাট কেনা কঠিন। তবে সবাই তো গ্রামে বা কোথাও জমি বিক্রি করেই ঢাকায় ফ্ল্যাট কেনে, অথবা ব্যাংক থেকে লোন নিয়েই ফ্ল্যাট কেনে। এখন কিন্তু অনেক প্রতিষ্ঠান ঋণ দিচ্ছে, সুদের হারও ৯ শতাংশ। আর যারা সরকারি কর্মকর্তা তাঁরা কিন্তু ৫ শতাংশ সুদে ঋণ পাচ্ছে। এ সুবিধাগুলো এখনো আছে। এগুলো কমার সম্ভাবনাও নেই।
—–: বিভিন্ন দেশে তো নিম্নবিত্তের আবাসনের ব্যবস্থা আছে। আমাদের দেশের অবস্থা কী?
তানভীরুল হক প্রবাল: আবাসন কোম্পানিরা তো সাধারণত ব্যবসায়ী, তাঁরা তো লাভই দেখবেন। আর নিম্নবিত্তের জন্য সুবিধা দেখবে সাধারণত সরকার। সরকারকেই সেখানে বিনিয়োগ করতে হবে। সরকারকেই ভাবতে হবে। খাসজমিতে তাদের জন্য আবাসন করা সম্ভব। সরকার তো রাজউকের মাধ্যমে উত্তরায় প্রকল্প নিয়েছে। যদিও সেখানে উচ্চবিত্তরাই বেশি ফ্ল্যাট পাওয়ার অভিযোগ রয়েছে। সেসব ফ্ল্যাট তো এখনো পড়ে আছে। আর যে দাম তা গরিবের সাধ্যের বাইরে।আজকের পত্রিকা