বান্দরবান:- বান্দরবানের থানচি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান থোয়াইহ্লামং মারমা। আওয়ামী লীগ সরকারের গত ৫ বছরে উপজেলা চেয়ারম্যান ও ৩ বছরে জেলা পরিষদের সদস্য থাকাকালীন দলীয় ক্ষমতা প্রভাব খাঁটিয়ে অবৈধভাবে পাহাড়ের সমান সম্পদের মালিক হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।
তিনি সাবেক থানচি উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি উপজেলা চেয়ারম্যান থানচি হেডম্যান পাড়া গ্রামের একটি দরিদ্র পরিবারের সন্তান ছিলেন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ২০১১ সালে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন তিনি। তখন থেকে তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। এ যেন আলাউদ্দিনে চেরাগ পেয়েছেন।
এর আগে জেএসএস (জনসংহতি সমিতি) একজন উপজেলা স্বক্রীয় কর্মী ও গুরুত্বপূর্ণ পদ উপজেলা সাধারণ সম্পাদক পদে দ্বায়িত্বে ছিলেন বলে জানা গেছে । বান্দরবান জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা এর আস্থাভাজন হয়ে উঠা ও তার ছত্র ছায়া হয়ে গত ৮ বছরে নামে বেনামে বৈধ অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়েছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে।
আওয়ামী লীগের দলীয় উপজেলা সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যানের দুই পদের ক্ষমতা থাকায় অনৈতিকভাবে বালি, পাথর, পাহাড় কাটা, গাছ কাটাসহ নানান অবৈধ উপায়ের কাজের অহংকারী দাম্ভিকতা,ক্ষমতা অপব্যবহার চালিয়ে আসছে বলে অভিযোগ উঠেছে। উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে ৪০ হাজার টাকা সম্মানী ভাতা দিয়ে পাহাড় সমান সম্পদ কীভাবে হলো সাধারণ জনগণের মুখে প্রশ্ন ও থানচি বাসী জানতে চেয়েছে ।
সরেজমিনের গিয়ে জানা যায়, থানচি আলিকদম সড়কে ২৮ কিলো নামক স্থানের অংপুং ম্রো ও রুমবেত ম্রো দুই গ্রামের ৮০ পরিবারের বসবাস। সেখান থেকে ৬০ পরিবারের জন্য উপকার ভোগী দেখিয়ে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন রাঙামাটি কার্যালয় হতে ২০১৭-১৮ সালে মোট ২৭ লক্ষ টাকার বরাদ্দ নিয়ে প্রায় ৩০ একর পাহাড়ি জমি অবৈধ উপায়ে দখল করে ঝিঁড়িতে সোলার প্যানেলের মাধ্যমে মৎস্য চাষের বাঁধ নির্মাণ করেছেন।
বিভিন্ন ফলজ্য ও বনজ্য বাগান গড়ে তোলার পর উপকার ভোগীদের মাঝে বণ্টন করে হস্তান্তর করার কৃষি বিভাগের প্রকল্পের উল্লেখ করা হলে ও তা করা হয়নি। কৃষি কর্পোরেশনের বরাদ্দের প্রকল্পের সম্পূর্ণভাবে সাবেক উপজেলার চেয়ারম্যান থোয়াইহ্লা মং মারমা ও তার আপন ছোট ভাই অবৈধভাবে দখল করে নিয়েছে। দুই ভাইয়ের অবৈধ দখলকৃত ঔ জমিটি বর্তমানের বাজার মূল্য প্রায় ৭-৮ কোটি টাকা হবে বলে স্থানীয়রা ধারনা করছেন।
রুমবেত পাড়া, অংপু পাড়াবাসী সিয়াম ম্রো ও মেনলে ম্রো বলেন, আমাদের গ্রামের হত দরিদ্রদের আত্ম-সামাজিক নিরাপত্তা জন্য বরাদ্দকৃত সরকারি প্রকল্পের সম্পূর্ণভাবে আত্মসাৎ করা হয়েছে। আমরা দু’ পাড়াবাসী মিলেও বাঁশের বাগান করেছিলো কিন্তু চেয়ারম্যানের ক্ষমতায় দাপত দেখিয়ে সব নিজেরা দখলে নিয়ে যায়। আমাদের জায়গাগুলো ফিরিয়ে দেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের নিকট দাবি জানাচ্ছি।
অনুসন্ধানের জানা গেছে, থানচি বাজারের ব্যবসায়ী রুপন চৌধুরী নিকট থেকে ২০২০ সালে একটি দোকান প্লট বাবদ মোট ৬০ লক্ষ টাকা মূল্যে ক্রয় করা হয়েছে। বর্তমানের বাজার মূল্য দেড় কোটি টাকা বলে ধারণা করেছেন অনেকে।
রুপন চৌধুরী বলেন, জরুরি টাকার প্রয়োজনে বিক্রি করলাম কিন্তু এখন ও কিছু টাকা বকেয়া রেখেছে তিনি। ২০২২ সালে থানচি সদর ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডে আমতলী পাড়া ১০ শতক পাহাড় জমি ক্রয় করেন, একই বছরের জায়গাটিতে অবৈধভাবে পাহাড় কেটে অন্যত্র মাটি বিক্রি করেন তিনি। অভিযোগের পর বান্দরবান জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের মামলা ও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। বর্তমানে সে জমিটি মূল্য এক কোটি টাকা হবে বলে ধারণা করেছেন স্থানীয়রা।
বলীপাড়া ইউনিয়নের বান্দরবান থানচি সড়কের অনিল পাড়া এলাকায়(আইলমারা ঝিঁড়ি) উপর প্রায় ১০ একর উঁচু জমি ক্রয় করেন তিনি। যা আনুমানিক মূল্য কোটি টাকা কাছাকাছি হবে ধারণা করেছেন অনেকে । এছাড়াও বান্দরবান জেলা সদরে লেমু ঝিঁড়ি বৌদ্ধ বিহারে পাশে রোয়াংছড়ি সড়কে ঠিকাদার রুবেল নিকট থেকে এক কোটি টাকায় ৫০ শতক জায়গাও কিনেন তিনি।
এদিকে বান্দরবানে জেলা সদরে উজানি পাড়া মরহুম খোকন মাস্টার হতে ১০ শতক জায়গা ক্রয় করেন দেড় কোটি টাকা মূল্যে । শহরে মধ্যম পাড়া বোমান সার্কেলে পাশে ২য় তলায় একটি ফ্লাইট কিনেন ৭০ লক্ষ টাকা মূল্যের।
নির্বাচন কার্যালয়ের সূত্রে জানা যায়, ২০১১ সালে থানচি সদর ইউনিয়ন পরিষদের আওয়ামী লীগের বিরোধের চেয়ারম্যান পদে প্রতিদন্ডীতা করেছিলেন তিনি। ঐ সময় হলফনামা উলেখ করেন তার পরিবারের স্বর্নলংকার, ফার্নিচার, নগদ টাকা, স্থাবর অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ছিল মাত্র ৬ লক্ষ টাকা।
২০১৪ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেন। ঐ সময় পরিবারের সম্পদের পরিমাণ ৮ লক্ষ টাকা হলফনামা জমা দেন । নির্বাচনে পরাজয় পর পার্বত্য বান্দরবান জেলা পরিষদের সদস্য হিসেবে নিয়োগ দেন। সাবেক জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ক্যশৈহ্লা এর আশীর্বাদ ও আস্থাভাজন হয়ে ২০১৮ সালে উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে অংশ নেন । ওই সময় ২০১৪ সালের সম্পদের পরিমাণ ৮ লক্ষ থেকে ২০১৮ সালে ৬০ লক্ষের বৃদ্ধি হয়। নির্বাচনের বিজয়ী হওয়ার পর ৫ বছর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে প্রতি মাসের ৪০ হাজার টাকা সম্মানী ভাতা গ্রহণ করেন।
২০২৪ সালে আবার ও উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য দলীয় মনোনয়ন ও পান তিনি । ২০১৮ সালে ৬০ লক্ষ টাকা সম্পদ বেরিয়ে ১ কোটি ৮৬ লক্ষ ২৩ হাজার টাকা সম্পদের পরিমাণের জমা দিয়েছে হলবনামা । ২০২৪ সালে তিন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন স্থগিত হলে তাকে বর্তমান সরকার গত আগস্ট মাসের চেয়ারম্যান পদ থেকে অপসারণ করেন।
থানচি বাজারে থানচি ভাত ঘর রেস্টুরেন্ট মালিক আবদুল কাদের বুধবার রাতে আলাপকালে তিনি বলেন, আমি সাবেক চেয়ারম্যান থোয়াইহ্লামং এর স্ত্রী হ্লামেচিং নিকট ৫ বছরের ভাড়া নিয়ে হোটেল ব্যবসা করিতেছি। মাস শেষে চেয়ারম্যানের ভাই আমার থেকে ভাড়া নিয়ে যায়। আগে ছিল দোকান ভাড়া ৫০ হাজার কিন্তু থানচি পর্যটক না আসায় কারণে এখন ভাড়া দিতে হয় ৪০ হাজার টাকা।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত সাবেক চেয়ারম্যান থোয়াইহ্লা মং মারমাকে মুঠোফোনে একাধিকবার কল করেও সংযোগে পাওয়া যায়নি।