ডেস্ক রির্পোট:- আমরা অত্যন্ত উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি যে, সম্প্রতি ইসকন ইস্যুতে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে চলমান শীতল সম্পর্কে নতুন করে টানাপোড়েন শুরু হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতায় বাংলাদেশের উপ-হাইকিমশন ঘেরাওয়ের চেষ্টা হয়েছে, হামলা চালিয়েছে দেশটির কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠন হিন্দু মহাসভার সদস্যরা। তার প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশে ভারতীয় পতাকা অবমাননাসহ মিছিল ও প্রতিবাদ কর্মসূচী চলছে। ধর্মভিত্তিক কতিপয় সংগঠন ভারতীয় দূতাবাস ঘেরাওয়ের ঘোষণা দিয়েছে।
আমরা মনে করি ২০২৪ সালের ৫ই আগষ্ট বাংলাদেশে যে বিপ্লব সংঘটিত হয়েছে, সেটা সারা বিশ্বের নিপীড়িত জনগোষ্ঠীর জন্য গণমুক্তি আন্দোলনের একটি রোল মডেল। এই মহান আন্দোলন এবং তার অর্জনকে নস্যাৎ করার জন্য ভারত এবং বাংলাদেশের একটি উগ্রবাদী মহল খুবই পরিকল্পিত ও সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে দেশের শান্তিকামী জনগণকে এই জাতীয় উস্কানি দিয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ সীমান্তের দীর্ঘ অংশ জুড়ে বেষ্টিত সবচেয়ে বড় প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত। ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীনের পর থেকে গত অর্ধ শতাব্দীতে ভারত বাংলাদেশের জনগণের সাথে সাম্য ও মর্যাদার ভিত্তিতে সুপ্রতিবেশীসুলভ আচরণ করতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে এসেছে। বাংলাদেশ নিয়ে তার কূটকৌশল ভয়ানকভাবে আন্তর্জাতিক রীতিনীতি এবং জাতিসংঘ বিধিমালার পরিপন্থী। আমরা ভারতীয় শাসকবর্গ এবং সেদেশের বিচক্ষণ জনগণকে আহবান জানাব, তারা যেন সম্পর্কের সংকট উত্তরণে আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে ইতিবাচক ভূমিকা ও পদক্ষেপ গ্রহণ করতে এগিয়ে আসেন।
অন্যদিকে ভারতীয় আধিপত্যবাদী ও আগ্রাসী নীতির বিরোধীতা করতে গিয়ে বাংলাদশের জনগণকেও পারস্পরিক সম্মান ও শিষ্টাচার বজায় রাখতে সজাগ থাকতে হবে। সকল স্বীকৃত পন্থায় আমরা ভারতীয় হেজিমনির বিরুদ্ধে ন্যায়সঙ্গত লড়াই করতে থাকব ইনশাআল্লাহ। তবে আমরা এটাও বিশ্বাস করি যে, ভারতের ‘তিন রঙা টয়লেট পেপার’ ব্যবহার করা বা ‘বুয়েটে ভারতীয় পতাকা পদদলিত করা’ ইত্যাদি কাজগুলো উস্কানিমূলক, নিষ্প্রয়োজনীয় এবং সংকট গভীরতর করার ক্ষেত্রে ইন্ধনমাত্র।
আমরা সকল যৌক্তিক পন্থায় ভারতীয় আধিপত্যবাদী নষ্টনীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাব, আমরা ভারতে সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে আরও সোচ্চার হবো, তবে দু’দেশের জনগণের মধ্যে বিদ্বেষ তৈরি করতে পারে, এমন কাজ করতে যাব না। এমনকি এ জাতীয় কাজ ওদের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে হলেও না।
আমরা দেশবাসীর প্রতি আহবান জানাই যে এসব হঠকারী, আত্মঘাতী তৎপরতা বন্ধ হোক! আমরা কট্টর হিন্দুত্ববাদী উগ্র মোদি বা তার প্রশাসনকে বিভিন্ন কারণে নিন্দা জানাতে পারি। কিন্তু একটি দেশের পতাকা সেদেশের সকল জনগণকে প্রতিনিধিত্ব করে – মনে রাখতে হবে ভারতীয় জনগণের বিরুদ্ধে আমাদের এই যুদ্ধ নয়।
কুরআন ধর্মের নামে বা জাতি-গোত্রের নামে জবরদস্তি, বাড়াবাড়ি, উগ্রতা-হিংস্রতাকে কোনোভাবেই সমর্থন করে না। কাজেই ভারতে হোক আর বাংলাদেশেই হোক, যে কোন উগ্রবাদী তৎপরতাকে আমরা কঠোর ভাষায় নিন্দা জানাই। একইভাবে ভারতীয় আগ্রাসনসহ যে কোনো আগ্রাসনের তীব্র প্রতিবাদ জানাই।
আমরা মনে করি ভারত সরকার এবং বাংলাদেশ সরকার উভয়েরই যথেষ্ট দায়িত্ব রয়েছে যা তাদের পালন করতে হবে। এক্ষেত্রে উভয়পক্ষ শ্রদ্ধা, সাম্য ও মর্যাদার ভিত্তিতে যৌক্তিক আলোচনার মাধ্যমে পারস্পরিক সম্পর্কোন্নয়নে অনতিবিলম্বে উদ্যোগী হবে বলে আমরা জোর দাবী জানাই।
কুরআন পাঠ আন্দোলন-এর পক্ষ থেকে সবশেষে এটাও আশা করতে চাই যে, উভয় দেশের জনগোষ্ঠী সৎ প্রতিবেশীসুলভ চেতনা নিয়ে শান্তি, সম্প্রীতি আর সৌহার্দের সাথে সহাবস্থান করুক। আমরা সকলের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে বিশ্বাস করি।