রাঙ্গামাটি:- অন্তর্বর্তীকালীন রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ পুনর্গঠন নিয়ে জনমনে হতাশা ও ক্ষুব্দ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। সরকার পরিবর্তনের তিনমাস পর অবশেষে অন্তর্বর্তীকালীন তিনটি পার্বত্য জেলা পরিষদ পুনর্গঠন করেছে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। ২০২০ সালের ৩০ ডিসেম্বর প্রজ্ঞাপনে গঠিত পরিষদ বাতিল ঘোষণা করে রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব তাসলীমা বেগম স্বাক্ষরিত পৃথক তিনটি প্রজ্ঞাপনে এসব আদেশ জারি করা হয়। রাঙ্গামাটিতে অবসরপ্রাপ্ত জেলা কৃষি কর্মকর্তা কাজল তালুকদারকে চেয়ারম্যান করে ১৫সদস্য বিশিষ্ট অন্তর্বর্তীকালীন পরিষদ পুনর্গঠন করা হয়েছে। কাজল তালুকদার জেলা বিএনপি সভাপতি দীপন তালুকদারের বড় ভাই বলে জানা গেছে।
পুনর্গঠিত রাঙ্গামাটি অন্তর্বর্তীকালীন পার্বত্য জেলা পরিষদের অন্য সদস্যরা হলেন দেব প্রসাদ দেওয়ান (বাঘাইছড়ি), প্রনতি রঞ্জনখীসা (নানিয়ারচর), প্রতুল দেওয়ান (সদর), বরুণ বিকাশ দেওয়ান (সদর), ক্যসিংমং (কাপ্তাই), নাউপ্রু মারমা (সদর), ড্যানিয়েল লাল মুয়ানপাংখোয়া (বিলাইছড়ি), রাঙাবী তঞ্চঙ্গ্যা (সদর), সাগরিকা রোয়াজা (সদর), দয়াল দাশ (নানিয়ারচর), মো. হাবীব আজম (সদর), মিনহাজ মুরশীদ (লংগদু), বৈশালী চাকমা (সদর) ও লুৎফুন্নেসা বেগম (সদর)। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে পার্বত্য জেলা পরিষদ আইনের ক্ষমতা বলে সরকার রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের অন্তর্বর্তীকালীন পরিষদ পুনর্গঠন করেছে। পরবর্তী আদেশ না দেওয়া পর্যন্ত বিধান অনুযায়ী এ পরিষদ সব দায়িত্ব পালন করবে।
এদিকে রাঙ্গামাটিতে পুনর্গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের নিয়ে জনমনে ক্ষুব্দ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। উঠেছে বৈষম্য ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ। এ নিয়ে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে তীব্র প্রতিবাদ ও সমালোচনার ঝড়। এতে দেখাযায়, আইনে প্রত্যেক উপজেলা থেকে প্রতিনিধি নিয়ে পরিষদ গঠনের কথা বলা হলেও জেলার বরকল, জুরাছড়ি, রাজস্থলী ও কাউখালী উপজেলার কাউকে নেওয়া হয়নি। বিপরীতে চেয়ারম্যানসহ ১৫ সদস্যের মধ্যে ৯ জনই রাঙ্গামাটি সদর উপজেলার।
এছাড়া কেবল নারীসদস্য নেওয়া হয়েছে ৫ জনকে এবং পার্বত্য উপদেষ্টার ঘনিষ্ট আত্মীয় রয়েছেন বেশ কয়েকজন। যাদের মধ্যে নিয়োগ পেয়েছেন পার্বত্য উপদেষ্টার তল্পিবাহকও। পাশাপাশি জনগণের গ্রহণযোগ্য, বিশিষ্টজন ও বহুল পরিচিত হিসাবে যাদের নাম আলোচনা-প্রস্তাবনায় ছিল, পুনর্গঠিত পরিষদে তাদের কেউ নেই। বিপরীতে যাদেরকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তারা কেউ আলোচনা-প্রস্তাবনায় ছিলেন না। কয়েকজন ছাড়া বেশির ভাগ সদস্য জনগণের কাছে অপরিচিত, অগ্রহণ যোগ্য ও বিতর্কিত। চার উপজেলা থেকে কোনো প্রতিনিধি না নিয়ে, সে সব উপজেলার শূন্য স্থান সদর থেকে পূরণ করে যে বৈষম্য তৈরি করা হয়েছে তা জনগণের কাছে কখনো গ্রহণ যোগ্য হতে পারে না।
নতুন অন্তর্বর্তীকালীন পরিষদে মনোনীত রাঙাবী তঞ্চঙ্গ্যা হলেন ফ্যাসিবাদ আওয়ামী সরকার মনোনীত সাবেক অন্তর্বর্তীকালীন জেলা পরিষদের সদস্য ও জেলা আওয়ামীলীগ নেতার বড় ভাই লাল ছোয়াক পাংখোয়ার স্ত্রী। এ ধরনের বিতর্কিত লোক নিয়ে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের অন্তর্বর্তীকালীন পুনর্গঠিত পরিষদকে জনগণ প্রত্যাখান করেছে বলে উল্লেখ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেওয়া পোস্টে অনেকের মন্তব্য লক্ষ্য করা গেছে। প্রস্তাবিত প্রার্থীদের নাম না থাকায় অনেকে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদও জানিয়েছেন।পাহাড়ের খবর
এদিকে রাঙ্গামাটি, থাগড়াছড়ি ও বান্দরবান জেলা পরিষদে সকল উপজেলার থেকে সম্প্রদায় ভিক্তিক প্রতিনিধি না দেয়ায় রেঅকজনের মধ্য ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। রাঙ্গামাটি ১০ উপজেলার মধ্যে গঠিত এই পরিষদে গুরুত্বপুর্ণ কাউখালী, রাজস্থলী,বরকল ও জুরাছড়ি এই ৪ উপজেলা থেকে কোন প্রতিনিধি নেয়া হয়নি। আবার নানিয়ারচর উপজেলা থেকে নেয়া হয়েছে ২জন প্রতিনিধি। তাছাড়া রাঙ্গামাটি সদর থেকে নেয়া হয়েছে ৯ জন প্রতিনিধি।
বান্দবান জেলাটি ৭টি উপজেলা নিয়ে গঠিত। বান্দরবানে ও দুই উপজেলা থেকেেেনেয়া হয়নি কোন প্রতিনিধি। সে খানেও থানচি উপজেলা থেকে নেয়া হয়েছে ৩ জনকে। আবার সদর থেকে নেয়া হয়েছে ৯ জনকে।
তাছাড়া খাগড়াছড়ি জেলাতে ও একই অবস্থা। ৯টি উপজেলা নিয়ে খাগড়াছড়ি জেলা গঠিত হলেও সে খানেও বাদ পড়েছে দীঘিনালা,রামগড় ও গুইমারা এই ৩টি উপজেলা। আবার মাটিরাঙ্গা উপজেলা থেকে নেয়া হয়েছে ৩জনকে। আর সদর থেকে নেয়া হয়েছে ৭জনকে।