ডেস্ক রির্পোট:- ব্রিটেনের দাতব্য সংস্থা অক্সফামের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যুদ্ধ ও সঙ্ঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোতে ক্ষুধায় প্রতিদিন সাত থেকে ২১ হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে। জাতিসঙ্ঘের প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, বর্তমানে বিশ্বে যে একশ’ কোটিরও বেশি মানুষ তীব্র দারিদ্র্যের মধ্যে বাস করে, যাদের প্রায় অর্ধেকই সঙ্ঘাতপূর্ণ দেশগুলোর বাসিন্দা। আর বিশ্বের দরিদ্রতম মানুষের ৮৩.২ শতাংশই বাস করে সাব-সাহারান আফ্রিকা এবং দক্ষিণ এশিয়ায়।
গতকাল প্রকাশিত ইউএন ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের (ইউএনডিপি) সূচক বলছে, যুদ্ধরত দেশগুলোতে ‘বহুমাত্রিক দারিদ্র্য’ বঞ্চনার উচ্চ স্তর সৃষ্টি করেছে। বাসিন্দাদের পুষ্টি, বিদ্যুৎ, পানি ও নিরাপদ পয়ঃনিষ্কাশনের তীব্র অভাবের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। এ ধরনের সুবিধার ক্ষেত্রে এসব মানুষ ‘উল্লেখযোগ্যভাবে আরো গুরুতর’ বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। ১১২টি দেশ এবং ৬৩০ কোটি মানুষের ওপর গবেষণার চালিয়ে পাওয়া তথ্যে বলা হচ্ছে, যে ১১০ কোটি মানুষ দারিদ্র্য সহ্য করে, তাদের মধ্যে ৪৫৫ মিলিয়ন মানুষ যুদ্ধবিধ্বস্ত ‘সঙ্ঘাতের ছায়ায়’ বাস করছে। ভারত রয়েছে চরম দারিদ্র্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক লোকের দেশ হিসেবে, যার ১৪০ কোটি জনসংখ্যার ২৩৪ মিলিয়নকে প্রভাবিত করেছে। এর পরে রয়েছে পাকিস্তান, ইথিওপিয়া, নাইজেরিয়া এবং কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র। ১১০ কোটি দরিদ্র মানুষের প্রায় অর্ধেক এ পাঁচটি দেশের।
ইউএনডিপির অ্যাচিম স্টেইনার বলেছেন, ‘সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সঙ্ঘাত তীব্র এবং বহুগুণ বেড়েছে, হতাহতের সংখ্যা নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। রেকর্ড লাখ লাখ মানুষকে বাস্তুচ্যুত করেছে এবং জীবন ও জীবিকায় ব্যাপক বিঘœ ঘটিয়েছে।’ সূচকটি দেখায়, বিশ্বব্যাপী ২৭.৯ শতাংশ শিশু, প্রাপ্তবয়স্কদের ১৩.৫ শতাংশের তুলনায় ১৮ বছরের কম বয়সী প্রায় ৫৮ কোটি ৪০ লাখ মানুষ চরম দারিদ্র্যের কবলে রয়েছে। শান্তিপূর্ণ দেশগুলোতে ১.১ শতাংশের তুলনায় সঙ্ঘাতের পরিবেশে শিশু মৃত্যুর হার ছিল আট শতাংশ।
সূচকে আফগানিস্তানের ওপর প্রাপ্ত সমীক্ষা বলছে ২০১৫-১৬ এবং ২০২২-২৩ সালে আরো ৫৩ লাখ মানুষ দারিদ্র্যের মধ্যে পড়েছিল। গত বছর, প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ আফগানকে দরিদ্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ইউএনডিপির প্রধান পরিসংখ্যানবিদ ইয়ানচুন ঝাং বলেছেন, ‘সঙ্ঘাত-আক্রান্ত দেশগুলোর দরিদ্রদের জন্য, মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণের সংগ্রাম অনেক বেশি কঠোর এবং তাদেরকে আরো মরিয়া লড়াই করতে হচ্ছে।’
ওপিএইচআইর পরিচালক সাবিনা আলকিরে বলেন, ‘সঙ্ঘাতের পরিবেশে দারিদ্র্য হ্রাস ধীর হয় তাই দ্বন্দ্বের পরিবেশে দরিদ্রদের পিছনে ফেলে দেয়া হচ্ছে। আমরা শান্তিতে বিনিয়োগ না করে দারিদ্র্যের অবসান ঘটাতে পারি না।’
এদিকে অক্সফামের প্রতিবেদনে বলা হয়, ৫৪টি দেশ সংঘাতে থাকায় এসব দেশের প্রায় ২৮ কোটি ১৬ লাখ মানুষ আজ তীব্র ক্ষুধার সম্মুখীন। সঙ্ঘাত এ দেশগুলোতে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতির একটি প্রধান কারণও হয়েছে, যা এখন রেকর্ড ১১ কোটি ৭০ লাখ লোকে পৌঁছেছে। সঙ্ঘাত শুধুমাত্র ক্ষুধাকে বাড়ায় না, বরং যুদ্ধরত পক্ষগুলো সক্রিয়ভাবে খাদ্য, জল এবং শক্তির অবকাঠামোকে লক্ষ্যবস্তু করে, সেইসাথে খাদ্য সহায়তাকে বাধা দিয়ে খাদ্যকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে।
খাদ্য ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা অক্সফামের এমিলি ফার বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে সঙ্ঘাত ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে, আন্তর্জাতিক আইনের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত পক্ষগুলোর দ্বারা অনাহার একটি প্রাণঘাতী অস্ত্রে পরিণত হয়েছে। খাদ্য সঙ্কট মূলত তৈরি করা হয়। গাজার প্রায় অর্ধ মিলিয়ন মানুষ- যেখানে বর্তমানে প্রয়োজনীয় খাদ্য সহায়তার ৮৩ শতাংশ তাদের কাছে পৌঁছাচ্ছে না- এবং সুদানে এক মিলিয়নের তিন-চতুর্থাংশ অনাহারে রয়েছে; কারণ খাদ্যের ওপর যুদ্ধের বিধ্বংসী প্রভাব প্রজন্মের জন্য অব্যাহত থাকার শঙ্কা রয়েছে।’
বিশ্লেষণে দেখা গেছে যে, যুদ্ধ, বাস্তুচ্যুতি এবং ক্ষুধার সঙ্কট এমন দেশগুলোতে ঘটে, যা প্রাথমিক পণ্য রপ্তানির ওপর খুব বেশি নির্ভরশীল। উদাহরণস্বরূপ, সুদানের রপ্তানি আয়ের ৯৫ শতাংশ আসে স্বর্ণ এবং পশুসম্পদ থেকে। খনির কাজগুলো সহিংস সঙ্ঘাতের দিকে পরিচালিত করেছে, অবনতি এবং দূষিত পরিবেশ বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ায় লোকজনকে তাদের বাড়িঘর থেকে সরে যেতে বাধ্য করা হয়েছে। অক্সফামের মতে, যুদ্ধ, বাস্তুচ্যুতি এবং ক্ষুধার সঙ্কট এমন দেশগুলোতে ঘটে, যা প্রাথমিক পণ্য রপ্তানির ওপর খুব বেশি নির্ভরশীল।
অক্সফাম সতর্ক করেছে যে, ২০৩০ সালের মধ্যে ‘শূন্য ক্ষুধা’র বৈশ্বিক প্রতিশ্রুতি ক্রমশ অসম্ভব হয়ে উঠছে।