শিরোনাম

আট জাতীয় দিবস বাতিল,উপদেষ্টা পরিষদে আজ অনুমোদন পাচ্ছে পালিত হবে গণঅভ্যুত্থান দিবস

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ১৭ অক্টোবর, ২০২৪
  • ৬৬ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- আট জাতীয় দিবস বাতিল করে আদেশ জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। অন্তর্বতীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের এসব দিবস উদযাপন/পালন না করার সিদ্ধান্ত গ্রহণের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল বুধবার এ আদেশ জারি করা হয়েছে। আওয়ামীলীগ সরকারে করা ৭ মার্চ, ১৫ আগস্টসহ জাতীয় আটটি দিবসের মধ্যে পাঁচটিই শেখ হাসিনার পরিবারের সদস্যদের জন্ম ও মৃত্যু সংক্রান্ত। এসব জাতীয় দিবস গতকাল রাতে বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। তবে নতুন জাতীয় দিবস হিসেবে যোগ করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগ দল হিসেবে ফ্যাসিস্টভাবে ক্ষমতায় ছিল। মানুষের ভোটাধিকার হরণ ও গুম-খুন করে এবং গণহত্যা করে তারা ক্ষমতায় ছিলো সে দিবস বাতিল করে নতুন করে গণঅভ্যুত্থান দিবস আসতে পারে বলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে। পতিত হাসিনা সরকারের আমলে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ১৫ আগস্টে সাধারণ ছুটি দেওয়া হতো। তবে এ দিবস পালন নিয়ে নানা ধরনের চাঁদাবাজির অভিযোগ দীর্ঘ ধরে রয়েছে। এছাড়া আগামী ২০২৫ সালের সরকারি ছুটির তালিকা অনুমোদনের প্রস্তাব উপদেষ্টা সভায় উত্থাপন করা হচ্ছে। মুসলমানদের প্রধান দুই ধর্মীয় উৎসব পবিত্র রমজান ও কোরবানি ঈদের ছুটি পাঁচ দিন করে করতে যাচ্ছে সরকার। এ ছাড়া হিন্দুদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজার ছুটি তিন দিন করা হতে পারে। এ ছাড়া প্রত্যাগত অভিবাসী নীতিমালা অনুমোদনের জন্য উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের তোলা হচ্ছে।

গতকাল বুধবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, অন্তর্বতী সরকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির জনক মনে করে না। তাহলে আমাদের কোনো জাতির পিতা থাকবে না? প্রশ্নে তিনি বলেন, আমাদের এই ভূখণ্ডের লড়াইয়ের ইতিহাসে বহু মানুষের অবদান রয়েছে। আমাদের ইতিহাস কিন্তু কেবল ৫২-তেই শুরু হয়নি, আমাদের ব্রিটিশবিরোধী লড়াই আছে, ৪৭ ও ৭১-এর লড়াই আছে, ৯০ ও ২৪ আছে। আমাদের অনেক ফাউন্ডিং ফাদারস রয়েছেন। তাদের লড়াইয়ের ফলে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। তথ্য উপদেষ্টা বলেন, যেসব জাতীয় দিবস বাতিল করা হচ্ছে, সেগুলো চাপিয়ে দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। ফ্যাসিস্ট আচরণ ছিল সেটা। সরকার মনে করেছে, সেগুলো অগুরুত্বপূর্ণ, তাই বাতিল করা হচ্ছে। গণঅভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে নতুন করে দিবস আসতে পারে। আওয়ামী লীগ দল হিসেবে ফ্যাসিস্টভাবে ক্ষমতায় ছিল। মানুষের ভোটাধিকার হরণ ও গুম-খুন করে এবং গণহত্যা করে তারা ক্ষমতায় ছিল। কাজেই কারা তাকে জাতির পিতা বলল, তারা কোন দিবসকে জাতীয় দিবস ঘোষণা করল, নতুন বাংলাদেশে সেটার ধারাবাহিকতা থাকবে না। আমরা বাংলাদেশকে নতুনভাবে গঠন করতে চাচ্ছি। ফলে ইতিহাসের প্রতি আমাদের নতুন দৃষ্টিভঙ্গি আনতে হবে।

আজ বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে সকাল ১১টায় তেজগাঁও তাঁর কার্যালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে আগামী ২০২৫ সালের সরকারি ছুটির তালিকা অনুমোদনের জন্য এই সভায় উত্থাপনের জন্য প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।এ ছাড়া প্রত্যাগত অভিবাসী নীতিমালা অনুমোদনের জন্য উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে রয়েছে। এর বাইরে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে টেবিলে উত্থাপন হতে পারে বলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একটি সূত্র জানিয়েছে। আগামী বছরের রোজা ও কোরবানি ঈদের ছুটি পাঁচ দিন করে নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। ঈদের দিন এবং ঈদের আগে পরে দুই দিন করে এই ছুটি নির্ধারণের প্রস্তাব দিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া আগামী বছর দুর্গাপূজার ছুটি তিন দিন নির্ধারণের সুপারিশ করা হয়েছে। সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর করার প্রস্তাব রেখে সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা স্বায়ত্তশাসিত, সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ, পাবলিক নন-ফিন্যানশিয়াল করপোরেশন সহ স্বশাসিত সংস্থাগুলো সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বয়সসীমা নির্ধারণ অধ্যাদেশ, ২০২৪ এর খসড়া চূড়ান্ত প্রস্তাব দিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। খসড়া অনুমোদনের জন্য উপদেষ্টা পরিষদের সভায় উপস্থাপন হতে পারে বলে জানা গেছে। চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়ানো হলেও অবসরের বয়স বাড়বে কি না, সে বিষয়ে উপদেষ্টা পরিষদের সভায় আলোচনার পর সিদ্ধান্ত হবে। সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা পুরুষের জন্য ৩৫ বছর এবং নারীদের জন্য ৩৭ বছর করার সুপারিশ করেছে আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন পর্যালোচনা কমিটি। সরকারি চাকরিতে প্রবেশের যৌক্তিক বয়স নির্ধারণের বিষয়ে সুপারিশ দিতে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরীকে আহ্বায়ক করে ৩০ সেপ্টেম্বর কমিটি করে সরকার। পর্যালোচনা কমিটি চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়ানোর সুপারিশ করলেও অবসরের বয়সসীমা নিয়ে কোনো সুপারিশ করেনি। বর্তমানে সর্বোচ্চ ৩০ বছর বয়স পর্যন্ত সরকারি চাকরিতে ঢোকা যায়। আর ৫৯ বছর বয়সে অবসরে যান সরকারি কর্মচারীরা। মুক্তিযোদ্ধার সন্তানেরা ৩২ বছর বয়স পর্যন্ত সরকারি চাকরিতে যোগ দিতে পারেন, আর ৬০ বছর বয়সে অবসরে যান। আটটি জাতীয় দিবস বাতিল করা সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে অনুমোদনের তোলা হয়েছে। এ প্রস্তাব বাতিল করে পরিপত্র জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। জাতীয় শোক, শিশু ও ঐতিহাসিক ৭ মার্চসহ আটটি দিবস বাতিল করছে অন্তর্বতী সরকার। গত সেপ্টেম্বর মাসে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে সরকার এসব জাতীয় দিবস বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত ৭ অক্টোবর তৎকালীন মন্ত্রিপরিষদসচিব মাহবুব হোসেন স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট অনুবিভাগকে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।

গতকাল বুধবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ঐতিহাসিক ৭ মার্চ ও ১৫ আগস্টসহ জাতীয় আটটি দিবস বাতিল করতে যাচ্ছে অন্তর্বতী সরকার। তিনি বলেন, ঐতিহাসিক ৭ মার্চ, ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম দিবস ও জাতীয় শিশু দিবস, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার ভাই শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামালের জন্মবার্ষিকী, ৮ আগস্ট শেখ হাসিনার মা বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জন্মবার্ষিকী, ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস, ১৮ অক্টোবর শেখ হাসিনার ছোট ভাই শেখ রাসেল দিবস, ৪ নভেম্বর জাতীয় সংবিধান দিবস ও ১২ ডিসেম্বর স্মার্ট বাংলাদেশ দিবস বাতিল হচ্ছে। সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে উপদেষ্টা পরিষদ এসব জাতীয় দিবস বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানা গেছে। গত ৭ অক্টোবর তৎকালীন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে সংশ্লিষ্ট অনুবিভাগকে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। গত ১৯৯৬ সালে যখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছিল, তখন ১৫ আগস্টকে জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পালন করা শুরু হয়। পরে ২০০২ সালে জাতীয় শোক দিবস পালনের সিদ্ধান্ত বাতিল করে। আবার ছয় বছর পর ২০০৮ সালের ২৭ জুলাই হাইকোর্টের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে ১৫ আগস্টকে জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পুনর্বহাল করা হয়। তবে এ দিবস পালন নিয়ে নানা ধরনের চাঁদাবাজির অভিযোগ ছিল। খ শ্রেণিভুক্ত দিবসে সরকারি উৎস থেকে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ প্রদান করা যায়। ‘ক’ শ্রেণির দিবসে সরকারি বরাদ্দের পরিমাণ উল্লেখ নেই। কিন্তু ১৫ আগস্টের শোক দিবসে সারা দেশে কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ের অভিযোগ রয়েছে। এ ব্যয় মেটাতে গিয়ে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারাও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে মোটা অঙ্কের চাঁদা নিয়েছেন। গত ২০২২ সালের ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস পালনের নামে কোটি টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগ ওঠে নারায়ণগঞ্জের সাত খুন মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি নূর হোসেনের ছোট ভাই নুরুজ্জামান ওরফে জজ মিয়ার বিরুদ্ধে। তিনি শিমরাইলের প্রতিটি ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি মালিককে ডেকে নিয়ে হুমকি-ধমকি দিয়ে ৫০ হাজার টাকা করে চাঁদা আদায় করেন। একইভাবে গাজীপুর, টঙ্গীসহ সারা দেশে চাঁদাবাজির অভিযোগ ছিল। শোক দিবসের নামে চাঁদাবাজি করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বহুবার হুঁশিয়ারি দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম দিবস ও জাতীয় শিশু দিবস, ৫ আগস্ট শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামালের জন্মবার্ষিকী, ৮ আগস্ট বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জন্মবার্ষিকী ও ১৮ অক্টোবর শেখ রাসেল দিবস পালন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর পর্যায়ক্রমে শুরু হয়। এদিকে গত ৮ আগস্ট বর্তমান সরকারের দায়িত্বভার গ্রহণের পর প্রথমেই আসে ১৫ আগস্ট। দিবসটি অন্তর্বতী সরকার কিভাবে পালন করবে, তা নিয়ে দেশব্যাপী ব্যাপক আলাপ-আলোচনা শুরু হয়। এ ছাড়া অন্তর্র্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস ও সরকারি ছুটি বাতিলের পরামর্শ দেয় বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। রাজনৈতিক দলগুলোর মতবিনিময় সভায় মতামত জানতে চাইলে একমাত্র বিজেপি চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ ১৫ আগস্ট শোক দিবস পালনের পক্ষে মত দেন। তিনি বলেন, ১৫ আগস্ট সর্বজনীন। পরে সরকার জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ঘোষিত ১৫ আগস্টের ছুটি বাতিল ঘোষণা করে। এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, উপদেষ্টা পরিষদের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপে ব্যাপক ঐকমত্যের ভিত্তিতে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ঘোষিত ১৫ আগস্টের সাধারণ ছুটি বাতিলের বিষয়টি উপদেষ্টামণ্ডলীর বৈঠকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে।ইনকিলাব

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions