শিরোনাম
বাণিজ্য সম্ভাবনায় ‘সেভেন সিস্টার্স’ দুবাইয়ে বিপু-কাজলের ২০০ কোটির দুই ভিলা পাচারের ১৭ লাখ কোটি ফেরাবে কে,প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের দিকে তাকিয়ে সবাই শিক্ষার্থীদের পরিকল্পিতভাবে বিতর্কিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে ঢাকা-দিল্লি পররাষ্ট্রসচিব বৈঠক ডিসেম্বরে, শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ নিয়ে আলোচনা হবে কি এবার মারা গেলেন পরীমণির প্রথম সিনেমার পরিচালক জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজনের পরামর্শ সরাসরি ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সুপারিশ, বদিউল বললেন, ‘বিবেচনায় রয়েছে’ বান্দরবানে নৌকা বাইচ দিয়ে ক্রীড়া মেলা শুরু রাঙ্গামাটিতে সাফজয়ী পাহাড়ের তিন কন্যাকে উষ্ণ সংবর্ধনা

৯২ কোটি টাকার ভবনে নেই ছাদ, নেই সিঁড়ি, আছে অগ্নিনিরাপত্তার ঝুঁকি

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় শনিবার, ১২ অক্টোবর, ২০২৪
  • ৫৪ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ১৪তলা ভবনটির চারপাশ কাচে ঘেরা। ওপরে ছাদ নেই, পরিবর্তে আছে লোহার কাঠামো। এ ধরনের উঁচু স্থাপনায় অগ্নিকাণ্ডের সময় জরুরি বহির্গমনের জন্য বাইরে সিঁড়ি রাখতে হয়, ভবনটিতে নেই সেটিও।

সুউচ্চ এ ভবনে ডাক অধিদপ্তর, কেন্দ্রীয় সার্কেল, আইটিসহ অন্যান্য শাখার অন্তত সাত শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী অফিস করছেন। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ভবনটির অগ্নিনির্বাপণ–ব্যবস্থা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। কোনো অগ্নিকাণ্ড ঘটলে প্রাণহানি বেশি হবে।

বেসরকারি কোনো স্থাপনা নয়, সরকারের ডাক বিভাগের সদর দপ্তরের চিত্র এটি। লাল রঙের ভবনটি করা হয়েছে ডাকবাক্সের আদলে। পৌনে এক একর জায়গার ওপর ৯২ কোটি টাকা খরচে তৈরি করা ভবনটি চালু হয় ২০২১ সালে।

চালু হওয়ার আড়াই বছরের মাথায় এ ভবনে নানা অসংগতি ধরা পড়ে। নতুন ভবনের বেজমেন্টে মাঝারি আকারের গাড়ি প্রবেশ করতে পারে না। এর ফলে ভবনের সামনেই এলোমেলো করে রাখা হচ্ছে গাড়ি। এখন বেজমেন্টে প্রবেশের রাস্তা ভেঙে নতুন করে করা হচ্ছে। কয়েক বছরেই ভবনের বেশ কয়েকটি স্থানে ধরা পড়েছে ফাটলও। কোথাও কোথাও দেয়ালের প্লাস্টার ঝরে পড়ছে। কোথাও–বা ওয়াশরুমের দরজা ভাঙা, লক নষ্ট।

ভবনটি বাইরে থেকে সুন্দর দেখালেও কারিগরি দিক বিবেচনায় ত্রুটিপূর্ণ। সিঁড়ির দিকে আগুন লাগলে কেউ বের হতে পারবে না। ভবনটি করার সময় সৌন্দর্যের দিকেই বেশি নজর দেওয়া হয়েছে, অগ্নিনিরাপত্তায় নয়। অগ্নিঝুঁকি এড়াতে ভবনের বাইরে দিয়ে অবশ্যই আলাদা সিঁড়ি নির্মাণ করতে হবে।

রিয়াজুল ইসলাম, ভবন নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক

সরেজমিনে এসব অসংগতি দেখতে পান। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) এক প্রতিবেদনেও এ তথ্য উঠে এসেছে। গত মাসে প্রতিবেদনটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশিত হয়।

দক্ষ প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনার কথা বলে ২০১৪ সালে ৫৫ কোটি টাকায় আগারগাঁওয়ে ডাক ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। উদ্দেশ্য ছিল ডাক বিভাগের সদর দপ্তর প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পরিসরে পোস্ট অফিসের ভাবমূর্তি বাড়ানো। ২০১৭ সালে অবকাঠামোর নির্মাণকাজ শেষ করার কথা ছিল। তবে নির্ধারিত মেয়াদে কাজ শেষ করতে না পারায় দুই বছর সময় বাড়ানো হয়। সেই সঙ্গে ব্যয় বাড়িয়ে করা হয় ৯২ কোটি টাকা।

২০১৯ সালের জুলাইয়ে নির্মাণকাজ শেষ হলেও দুই বছর এ ভবন অব্যবহৃত পড়ে ছিল। কারণ, গুলিস্তানে অবস্থিত জেনারেল পোস্ট অফিস (জিপিও) থেকে আগারগাঁওয়ে যেতে ডাক কর্মকর্তা-কর্মচারীরা রাজি হচ্ছিলেন না। ভবন খালি পড়ে থাকা নিয়ে ২০২১ সালের ৪ এপ্রিল প্রথম আলোয় একটি সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর ২৭ মে ভবনটি উদ্বোধন করা হয়।
সরেজমিন

গত রোববার ডাক ভবনে গিয়ে দেখা যায়, নিচতলায় ডে-কেয়ার সেন্টার। তবে সেটি ব্যবহার করা হচ্ছে না। ডে-কেয়ার সেন্টারের জন্য কেনা উপকরণ পড়ে আছে অব্যবহৃত অবস্থায়।

নিচতলায় চালকদের জন্য আছে বিশ্রামাগার। দেখা গেল, সেখানে বড় ধরনের ফাটল। প্লাস্টার ঝরে পড়ছে। পাশেই পোস্টমাস্টারের কক্ষ। সেখানেও একই চিত্র।

ডাক বিভাগের সদর দপ্তর, অথচ ক্যানটিন নেই। এ কারণে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পাশের বিএনপি বাজার ও বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের ক্যানটিন থেকে খাবার সংগ্রহ করতে দেখা গেল। বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা ক্যানটিন না থাকায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়াও জানান। তাঁরা বলেন, এতে কর্মঘণ্টার অপচয় হয়। কেউ সুযোগ নিয়ে ফাঁকিবাজিও করেন।

কথা হয় ডাক বিভাগের অন্তত ১০ কর্মকর্তার সঙ্গে। তাঁরা বলেন, বাইরে থেকে ভবনটি দেখতে যতটা দৃষ্টিনন্দন, ভেতরের চিত্র ঠিক উল্টো। ভবনের অগ্নিনির্বাপণ–ব্যবস্থা নিয়েও তাঁরা চিন্তিত। কখনো অগ্নিকাণ্ড ঘটলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে, এমনটা আশঙ্কা তাঁদের। অবশ্য এ বিষয়ে বিভিন্ন সভায় আলোচনা হলেও এখনো কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। প্রায় শতকোটি টাকা খরচ করে কেন এমন ঝুঁকিপূর্ণ ভবন নির্মাণ করা হলো, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা।

জানতে চাইলে ভবন নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক রিয়াজুল ইসলাম (অবসরোত্তর ছুটিতে) স্বীকার করেন, ভবনটি বাইরে থেকে সুন্দর দেখালেও কারিগরি দিক বিবেচনায় ত্রুটিপূর্ণ। ভবনটির অর্ধেকটা হয়ে যাওয়ার পর তিনি দায়িত্ব পান। তাঁর মতে, ভবনে সিঁড়ির দিকে আগুন লাগলে কেউ বের হতে পারবে না। ভবনটি করার সময় সৌন্দর্যের দিকেই বেশি নজর দেওয়া হয়েছে, অগ্নিনিরাপত্তায় নয়। অগ্নিঝুঁকি এড়াতে ভবনের বাইরে দিয়ে অবশ্যই আলাদা সিঁড়ি নির্মাণ করতে হবে।
আইএমইডির প্রতিবেদন

ইনোভেটিভ ইঞ্জিনিয়ার্স নামের তৃতীয় একটি প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে ‘ডাক অধিদপ্তরের সদর দপ্তর নির্মাণ’ প্রকল্প মূল্যায়ন করে আইএমইডি। তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়, ভবনটি নির্মাণের আগে ফায়ার সার্ভিসের অনুমোদন নেয়নি ডাক বিভাগ। পরে অনুমোদনের জন্য গেলে বেশ কয়েকটি শর্ত দেওয়া হয়। একটি ছিল, টপ ফ্লোর অর্থাৎ ১৪ তলা পুরোপুরি খালি রেখে ভবনের বাইরে দিয়ে আলাদা একটি সিঁড়ি করে দেওয়া।

তবে এ শর্ত মানা হয়নি। দেখা গেছে, ১৪ তলায় একটি অফিস স্থাপনের কাজ চলছে। ডাক অধিদপ্তরের পরিচালক আলতাফুর রহমানের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের আওতায় ‘অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন প্রোগ্রাম (এটুআই)’–এর কার্যালয়কে ওই তলা ভাড়া দেওয়া হয়েছে। তাদের জন্য অফিস প্রস্তুত করা হচ্ছে।

এসব বিষয়ে ডাক অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক এস এম হারুনুর রশীদ বলেন, ‘ভবনের অগ্নিনিরাপত্তায় দুটি সিঁড়ি আছে। একটি সাধারণ চলাচলে, অন্যটি অগ্নিকাণ্ডের সময় বের হওয়ার জন্য। ভবনটি এমন নকশায় করা, যাতে ওপরে ছাদ রাখার সুযোগ নেই। তবে ভবনের বাইরে সিঁড়ির প্রয়োজন হলে, সেই ব্যবস্থা আমরা করব।’প্রথম আলো

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions