শিরোনাম
রাঙ্গামাটির কাপ্তাইয়ে বাংলাদেশ-সুইডেন পলিটেকনিকে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ থেকে আওয়ামীপন্থীদের অপসারণ করে জেলা পরিষদ পুনর্গঠনের দাবি রাঙ্গামাটির লংগদুতে জেলা পরিষদের সদস্য মিনহাজ মুরশীদ ও হাবীবকে সংবর্ধনা রাঙ্গামাটিতে বিনামূল্যে চক্ষু চিকিৎসা সেবা: ৬৭৬ রোগীর চিকিৎসা রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদ পুনর্গঠনে তীব্র ক্ষোভ জনমনে: বিতর্কিত নিয়োগ বাতিলের দাবি আওয়ামী লীগ পাহাড়ে বিভাজনের রাজনীতির জন্য দায়ী : ওয়াদুদ ভূইয়া রাঙ্গামাটির কাপ্তাইয়ে মোটরসাইকেল-চোলাইমদসহ গ্রেপ্তার ৩ বান্দরবানে সেনাবাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে কেএনএফের তিন সদস্য নিহত বাণিজ্য সম্ভাবনায় ‘সেভেন সিস্টার্স’ দুবাইয়ে বিপু-কাজলের ২০০ কোটির দুই ভিলা

পিছু ছাড়ছে না দাপুটে পিএসরা

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় বুধবার, ৯ অক্টোবর, ২০২৪
  • ৪৯ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- বড়ই সৌভাগ্যবান উপসচিব মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন! আওয়ামী লীগ সরকারের এক আমলে তিনি ছিলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গার একান্ত সচিব (পিএস)। পরে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজমের পিএস হন। পরের মেয়াদে আবার ফিরে আসেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ে। পিএস হন প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্যের। সর্বশেষ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পর তিনি পিএস হন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলামের। আওয়ামী লীগ সরকারের চার মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর পিএস থাকা নাছির উদ্দিন অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও একই মন্ত্রণালয়ে বহাল। পিএসগিরি করছেন উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফের।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র জানায়, অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টার পিএস পদে মোহাম্মদ নাছির উদ্দিনকে পদায়ন করতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে তদবির করেন সচিব পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা। ওই তদবিরবাজ সচিবের নিজের বিরুদ্ধেই রয়েছে দুর্নীতির জোরালো অভিযোগ। রাজধানীর খ্যাতনামা একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সভাপতি পদে এ সচিবের দায়িত্ব পালনকালে অন্তত ৪০০ কোটি টাকা লোপাট হয়েছে বলে তদন্ত উঠে এসেছে।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে জনপ্রশাসনের সবচেয়ে ক্ষমতাধর আমলা ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া। তাঁর একান্ত সচিব ছিলেন আবু নঈম মুহাম্মদ মারুফ খান। মারুফ খান প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব ও পরে সংসদ সদস্য বনে যাওয়া সাজ্জাদুল হাসানেরও একান্ত সচিব ছিলেন। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে শীর্ষ ক্ষমতাধর দুই আমলার পিএস থাকায় মারুফ খান এক সময় নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক পদও বাগিয়ে নেন। এখন তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ুবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের পিএস।

অন্তর্বর্তী সরকারের সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা শারমিন মুরশিদ পিএস হিসেবে পেয়েছেন মো. মাহমুদ হাসানকে। তাঁর নিয়োগ নিয়ে দেখা দিয়েছে বিতর্ক। গত ১৪ আগস্ট জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনের ভিত্তিতে ১৮ আগস্ট সমাজকল্যাণ উপদেষ্টার পিএস হিসেবে যোগ দেন মো. মাহমুদ হাসান। মাহমুদ হাসানকে সমাজকল্যাণ উপদেষ্টার পিএস নিয়োগ দেওয়ার পর পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাস্তবায়ন, মূল্যায়ন ও পরিবীক্ষণ বিভাগে (আইএমইডি) কর্মজীবী সমিতির তরফ থেকে গত ১৮ আগস্ট সমাজকল্যাণ উপদেষ্টাকে লিখিত আপত্তি জানানো হয়। ওই আপত্তিপত্রে আইএমইডির দু’জন পরিচালক, একজন উপপরিচালক, তিনজন সহকারী পরিচালক ও চারজন মূল্যায়ন কর্মকর্তা সই করেন।

আপত্তিপত্রে তারা জানান, মাহমুদ হাসান একজন দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা। আইএমইডিতে দুর্নীতিতে নিমজ্জিত একজন সাবেক সচিবের দুর্নীতির সহযোগী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন হাসান। এর আগে তাদের দু’জনেরই দুর্নীতির ফিরিস্তি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এতে আইএমইডিসহ সরকারি চাকরিজীবীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়। ফলে মাহমুদ হাসানকে একজন উপদেষ্টার একান্ত সচিব হিসেবে নিয়োগ দিলে অন্তর্বর্তী সরকারের ভাবমূর্তি বিনষ্ট হবে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে মাহমুদ হাসানের মতো একজন দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাকে সমাজকল্যাণ উপদেষ্টার পিএস হিসেবে নিয়োগ না দিতে বিশেষ অনুরোধ করেন আইএমইডির কর্মকর্তারা।

জানা গেছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচটি ইমাম, তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, সালমান এফ রহমান ও কামাল আবদুল নাসের চৌধুরীর একান্ত সচিবরা এখনও প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদ দখলে রেখেছেন।

প্রশাসনের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেওয়ার এক মাসেও প্রশাসন দুর্বৃত্তায়নের খোলসমুক্ত হতে পারেনি। সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে। ঘুরেফিরে বিগত সরকারের আস্থাভাজনকেই বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে।

চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার সাবেক ইউএনও মিজানুর রহমান এখন প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে কর্মরত। তাঁর বিরুদ্ধে শত শত অনিয়মের অভিযোগ। প্রশাসনের একাধিক কর্মকর্তা জানান, বিগত সরকারের গুরুত্বপূর্ণ নীতিনির্ধারকদের একান্ত সচিব হওয়ায় তারা প্রভাব খাটিয়ে নিজের ব্যাচমেটদেরও চাকরি জীবনে অনেক ক্ষতি করেছেন। যারা মেধাতালিকার ওপরের দিকে কিংবা চাকরি জীবনে এসে অধিকতর দক্ষ আমলার পরিচিতি পেয়েছেন, তাদের সবসময় কোণঠাসা করে রাখতেন। সরকারবিরোধী ধুয়া তুলে শত শত কর্মকর্তার প্রাপ্য পদোন্নতি তারা কেড়ে নিয়েছেন। দফায় দফায় পদোন্নতিবঞ্চিত করে তাদের সামাজিক ও পারিবারিকভাবে হেনস্তা করেছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, তাঁকে উপসচিব পদে চার দফায় পদোন্নতিবঞ্চিত করেছেন তাঁরই কিছু ব্যাচমেট। তাদের অনেকে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে এখনও বহাল তবিয়তে। তাদের ক্ষমা নেই।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গত সাড়ে ১৫ বছরে মন্ত্রী ও উপদেষ্টাদের একান্ত সচিব এবং জেলা প্রশাসক নিয়োগের প্রধান যোগ্যতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে প্রার্থীর রাজনৈতিক মতাদর্শ। ছাত্রজীবনে যারা ছাত্রলীগের রাজনীতি করতেন, তাদেরই জেলা প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। প্রার্থীদের রাজনৈতিক মতাদর্শ কয়েক স্তরে তদন্ত করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের সে সময়ের মন্ত্রী পদমর্যাদার উপদেষ্টা ও প্রতিমন্ত্রীর সাবেক পিএস দলবাজ আমলারা আবারও প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ উপদেষ্টার পিএস পদে নিয়োগ পেয়েছেন। আগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন– এমন কর্মকর্তাও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার পিএস হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিসিএস উইমেন নেটওয়ার্ক নিয়ন্ত্রণ করে আসছে একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট। যার নেতৃত্বে রয়েছেন ১৭তম ব্যাচের শায়লা ফারজানা। যিনি বাধ্যতামূলক অবসরে যাওয়া পুলিশের অতিরিক্ত আইজি এবং পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) প্রধান মনিরুল ইসলামের স্ত্রী। বিক্ষুব্ধ কর্মকর্তারা তাঁকে সম্প্রতি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দপ্তর থেকে বের করে দেন। তবে বিসিএস উইমেন নেটওয়ার্কে তাঁর নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব এখনও বহাল। এখানে তাঁর অন্যতম সহযোগী হিসেবে আছেন উম্মে সালমা তানজিয়া ও শেখ মোমেনা মনি। প্রায় সাড়ে ৫০০ নারী কর্মকর্তার এ গ্রুপের এডমিন মাত্র ৯ জনের হাতে জিম্মি। শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে গেলে তারা গ্রুপে পোস্ট দেওয়া বন্ধ করে রাখেন। এখনও তা ব্লক করা আছে।

প্রশাসনের ২০তম ব্যাচের কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম ছয় বছরের বেশি সময় কীভাবে রাজউকে প্রাইজ পোস্টিং নিয়ে চাকরি করলেন, কারা তাঁকে এতদিন সেখানে বসিয়ে ঘুষের ভাগ নিয়েছেন, তাদেরও চিহ্নিত করার দাবি জানান বিগত দিনে এ ব্যাচের বঞ্চিত কর্মকর্তারা।

জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ও সাবেক সচিব এ কে এম আব্দুল আউয়াল মজুমদার বলেন, একান্ত সচিব পদে এক সময় নেওয়া হতো মেধাবী, কর্মঠ, দক্ষ ও সুনামধারী কর্মকর্তাকে। নব্বই দশক থেকে মুখচেনা, খাতিরের এবং তারপর এসে পুরোপুরি দলীয় পরিচয়ধারীকে এ পদে নেওয়া শুরু হয়েছে।

তিনি বলেন, বিগত সরকারের মন্ত্রীদের পিএসকে বর্তমান সরকারের উপদেষ্টারা কেন পিএস পদে নিয়েছেন, সেটা তারাই ভালো বলতে পারবেন। তবে এটুকু বলা যায়, তারা প্রশাসনে আগের যে খোলস ঝেড়ে ফেলতে চাইছেন, সেখানে একটা ভুল বার্তা যাচ্ছে সবার কাছে।

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions