ডেস্ক রির্পোট:- পোশাক খাতে অস্থিরতা নিরসনে নতুন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। অর্থনীতির ‘লাইফ লাইন’ হিসেবে পরিচিত গার্মেন্ট শিল্প রক্ষায় কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। দ্রুত সময়ের মধ্যে আশুলিয়ার শিল্প এলাকার পরিস্থিতি শান্ত করতে সমন্বিত যৌথ বাহিনীর অভিযানে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রটও রাখা হবে। তারা সেনা, পুলিশ, র্যাবের সঙ্গেই থাকবেন। কেউ কারখানা ঘিরে বিশৃঙ্খলা তৈরির চেষ্টা করলে গ্রেপ্তার করে তাৎক্ষণিক সাজা দেবেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র থেকে এ তথ্য জানা গেছে। গতকাল বৃহস্পতিবারও আশুলিয়া ও গাজীপুরে দুই শতাধিক কারখানা বন্ধ ছিল।
গতরাতে শিল্প পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, আশুলিয়ায় পোশাক খাতে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থার পাশাপাশি বেশ কিছু সামাজিক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, গণ্যমান্য ব্যক্তি, মালিক-শ্রমিক কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসনের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে বৈঠক হয়েছে। এতে স্বাভাবিক গতিতে কাজ করার পরিবেশ তৈরি করতে সহযোগিতার আশ্বাস দেওয়া হয়। এ ছাড়া বহিরাগত কেউ বিশৃঙ্খলায় থাকলে তাদের চিহ্নিত করতে স্থানীয়দের সহায়তার আহ্বান জানান কারখানার মালিক ও প্রশাসন।
বিজিএমইএ সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম বলেন, আশুলিয়ার পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে মালিক, শ্রমিক, রাজনৈতিক নেতা ও প্রশাসনের লোকজনকে নিয়ে ধারাবাহিকভাবে বৈঠক হচ্ছে। শুক্রবার আশুলিয়ায় আরেকটি বৈঠক আছে। আশা করি, এক-দু’দিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। এর পরও দু’চারটি কারখানায় শ্রমিকদের বিচ্ছিন্ন দাবিদাওয়া থাকলে নিজেরা বসে সমাধান করবে। বহিরাগত কেউ শিল্প এলাকায় গিয়ে ঝামেলা করলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কঠোর ব্যবস্থা নেবে।
এদিকে আশুলিয়ায় পরিস্থিতি শান্ত করার অংশ হিসেবে সেখানে সচেতনতামূলক মাইকিং শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। স্থানীয় বাড়িওয়ালাদেরও সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। এ ছাড়া শ্রমিক নেতাদের নিয়ে একাধিক বৈঠক করেছে প্রশাসন।
একাধিক কারখানার মালিক সমকালকে জানান, টানা কয়েক দিন আশুলিয়ায় যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে, তাতে কারখানার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। বেশ কিছু কারখানায় ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়েছে।
আরও ৭৪ কারখানা বন্ধ
সাভারের আশুলিয়া ও গাজীপুর শিল্পাঞ্চলে শ্রমিক অসন্তোষ দূর হয়নি। এ দুটি এলাকায় গতকাল আরও ৭৪টি কারখানা বন্ধ ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছে কর্তৃপক্ষ। এসব কারখানার শ্রমিকরা হাজিরা দিলেও কাজ করতে অস্বীকৃতি জানান। এ নিয়ে গতকাল পর্যন্ত বন্ধ কারখানার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৫৭টি। এর মধ্যে ৯৪টি শ্রম আইনের ১৩ (১) ধারায় বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ‘নো ওয়ার্ক নো পে’ ধারায় বন্ধ হওয়া এ কারখানাগুলো যতদিন বন্ধ থাকবে ততদিন মজুরি পাবেন না শ্রমিকরা। বাকি ১৬৩টি কারখানা সাধারণ ছুটির আওতায় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। গত বুধবার পর্যন্ত বন্ধ কারখানা ছিল ১৮৩টি।
তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম গতকাল বলেন, ‘শুক্রবার বেশির ভাগ কারখানায় সাপ্তাহিক ছুটি থাকে। আশা করছি, শনিবার থেকে পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হবে।’
পোশাক কারখানায় নারীর তুলনায় পুরুষ বেশি নিয়োগ দেওয়ার দাবিসহ বেশ কিছু দাবিতে দুই সপ্তাহ ধরে শ্রমিক অসন্তোষ চলছে আশুলিয়া ও গাজীপুর শিল্পাঞ্চলে। পরিস্থিতি বিবেচনায় শ্রমিকদের অনেক দাবি মেনে নিয়েছে কারখানা কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এর পরও শ্রমিক অসন্তোষ দূর হয়নি। নতুন দাবি সামনে আনছেন শ্রমিকরা।
আশুলিয়ায় গতকাল কোথাও সড়ক অবরোধ বা বিক্ষোভ হয়নি। শিল্পাঞ্চলের অন্যান্য কারখানাসহ ঢাকা ইপিজেডের কারখানাগুলো চালু ছিল। শিল্প পুলিশ-১ এর সুপার সারোয়ার আলম বলেন, ‘কিছু কারখানায় অভ্যন্তরীণ দাবিদাওয়া নিয়ে শ্রমিক অসন্তোষ চলছে। ওইসব কারখানার শ্রমিকরা কাজে ফেরেননি।’ তিনি জানান, গতকাল সকালে বেশ কিছু শ্রমিক কারখানায় প্রবেশের পর কাজ করতে অস্বীকৃতি জানান। এক পর্যায়ে তারা কারখানা থেকে বের হয়ে যান। যৌথ বাহিনীর টহল ছাড়াও কারখানাগুলোর সামনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
২০ শ্রমিকের বিরুদ্ধে মামলা
কারখানায় ভাঙচুর ও কর্মকর্তাদের মারধরের অভিযোগে ২০ শ্রমিকের বিরুদ্ধে আশুলিয়া থানায় মামলা হয়েছে। গতকাল দুপুরে জামগড়া এলাকার মডিনাপেল ফ্যাশন ক্রাফট লিমিটেড কারখানা কর্তৃপক্ষ মামলাটি করে। শ্রমিক অসন্তোষের কারণে বুধবার থেকে কারখানাটি বন্ধ রয়েছে। কারখানার ফটকে অভিযুক্ত শ্রমিকদের নামের তালিকা টানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
গাজীপুরে ৩০ কারখানা বন্ধ
শ্রমিকরা কাজ করতে রাজি না হওয়ায় বুধবার গাজীপুরে আটটি পোশাক কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়। গতকাল এখানে ছুটি ঘোষণা করা হয় ৩০টি কারখানায়। গাজীপুর শিল্প পুলিশ-২ এর সুপার সারওয়ার আলম জানান, গত কয়েক দিন শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করায় ভোগান্তিতে পড়ে সাধারণ মানুষ। এ কারণে পরিস্থিতি শান্ত রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে।
এদিকে ওষুধ কারখানা হোয়াইট হর্স ফার্মাসিউটিক্যালের শ্রমিকরা গতকাল বিক্ষোভ করেন। বেতন-ভাতা বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন দাবিতে সড়ক অবরোধ করেন তারা। জেলার শ্রীপুর উপজেলার বরমী কায়েতপাড়া এলাকায় ওই কারখানার শ্রমিকরা সকালে বরমী-কিশোরগঞ্জ আঞ্চলিক সড়ক অবরোধ করেন। পরে কর্তৃপক্ষ কারখানাটি বন্ধ ঘোষণার নোটিশ টানিয়ে দেয়।
কারখানায় আগুন দেওয়ার পেছনে বহিরাগত: শ্রম সচিব
শ্রম ও কর্মসংস্থার মন্ত্রণালয়ের সচিব এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেছেন, শ্রমিক কখনও তার কর্মস্থলে আগুন দিতে পারে না। বহিরাগত অপশক্তি এসব নাশকতা করছে। গতকাল গাজীপুরের টঙ্গী শিল্প পার্কে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। শিল্প খাতে শ্রম অসন্তোষ পরিস্থিতি নিয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
শ্রম সচিব বলেন, ‘স্থানীয় ঝুট ব্যবসাকে কেন্দ্র করে সাধারণ শ্রমিকদের ব্যবহার করা হচ্ছে। এ কারণে শিল্পনগরীতে অসন্তোষ কাটছে না।’সমকাল