আমানত লুটে খাচ্ছে কয়েকটি গোষ্ঠী: আহসান এইচ মনসুর

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় শনিবার, ১৩ জুলাই, ২০২৪
  • ৭০ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রিপেৃাট:- ব্যাংক খাতে আমানতের অর্থ লুটে খাচ্ছে কয়েকটি গোষ্ঠী। সরকারের সহযোগিতায় তাঁরা পুষ্ট হয়ে উঠেছে। তাঁদের কারণেই এখন আর্থিক খাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে। এমন মন্তব্য করেছেন গবেষণা সংস্থা পিআরআইয়ের নির্বাহী পরিচালক ও অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর।

আজ শনিবার অর্থনৈতিক রিপোর্টারদের সংগঠন ইআরএফ আয়োজিত ‘বাংলাদেশে ব্যাংকিং খাতে দুরবস্থার কারণ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি রেফায়েত উল্লাহ মীরধা। সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম।

ড. আহসান মনসুর বলেন, ‘ব্যাংকিং খাতের তথ্য-উপাত্ত এখন সবচেয়ে বেশি উল্টাপাল্টা। রপ্তানি আয়ের তথ্য তো ২০ শতাংশ কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকে ৪০০ শতাংশ তথ্য লুকানো আছে। বলা হচ্ছে ১০ শতাংশ খেলাপি ঋণ কিন্তু বাস্তবে তা ২৪-২৫ শতাংশ। এটা কেন হচ্ছে? বিভিন্নভাবে তাঁদেরকে প্রশ্রয় দিয়ে এটাকে লুকিয়ে রাখা হয়েছে। এটা সবচেয়ে বেশি স্বচ্ছ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এটাই আজকে সবচেয়ে বেশি অস্বচ্ছ। ময়লা যদি কার্পেটের নিচে চেপে রাখা যায় সেটাতো আর দূর হচ্ছে না। এটা দুর্গন্ধ ছড়াবেই। আমরা সমস্যাগুলোকে সমাধান করছি না। সমস্যাগুলোকে জিইয়ে রাখছি।’

ড. আহসান এইচ মনসুর আরও বলেন, ‘আমাদের ব্যাংকিং খাত, শেয়ার মার্কেট, বন্ড মার্কেট–কোনোটাতেই স্বস্তি নেই। ব্যাংক খাতে ঘুণ ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে অনিয়ম বেড়েছে এবং আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে। এখন ব্যাংক নিজেই নিজেকে রক্ষা করতে পারছে না। আমানতকারীদের সুরক্ষা দেবে কীভাবে? আর্থিক দুরবস্থার কারণে দেশ দিন দিন ঋণনির্ভর হয়ে পড়ছে। ধীরে ধীরে ঋণ পাওয়ার সক্ষমতাও কমছে। সরকার বাজেট বাস্তবায়নের জন্য পর্যাপ্ত রাজস্ব আদায় করতে পারছে না। এখন বাজেট বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় টাকাও নেই, ডলারও নেই আমাদের। কীভাবে বাস্তবায়ন হবে?’

কৃষি খাতেও তথ্যের স্বচ্ছতা নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘নিজেদের পারফরম্যান্স দেখানোর জন্য কৃষি খাতে প্রতি বছর উৎপাদন একটু করে বাড়িয়ে দেখানো হয়। ৩ লাখ ৬০ হাজার মেট্রিক টন চাল উৎপাদন দেখানো হচ্ছে। আবার আমদানিও হচ্ছে। এত চাল কোথায় যায়, কারা খায়? আমরা এখন মাছ উৎপাদনে নাকি বিশ্বের দ্বিতীয়, অথচ মাছের দর তো কমে না। ইলিশ মাছ উৎপাদনে আমরা নাকি বিশ্বের প্রথম। অথচ আমি নিজেই তো ইলিশ মাছ কিনতে পারি না।’

রিজার্ভে ডলার সরবরাহ বাড়ানো প্রসঙ্গে ড. মনসুর বলেন, ‘অন্য দেশ থেকে ধার করে এখন রিজার্ভ বাড়ানো হচ্ছে। এভাবে বেশি দিন রিজার্ভ বাড়ানো যাবে না। মানুষ যখন অভাবে পড়ে তখন আত্মীয়স্বজনেরাও টাকা দিতে চায় না। আমাদের এখন সংকট দৃশ্যমান। তাই চীনও সে কারণে আর টাকা দিতে চায় না।’

তিনি ব্যাংক মার্জারের প্রসঙ্গে বলেন, ‘সেটা এখন কোথায় গেল? এটার জন্য যে পলিটিক্যাল ইকোনমি এসিস্টমেট দরকার ছিল সেটা করা হয়নি। এখান আর একীভূত করার কথা কেউ বলছে না।’

আলোচনা অনুষ্ঠানে ইআরএফের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বর্তমান গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার যোগদানের পরই এক সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা দেন ১০টি দুর্বল ব্যাংক আলাদাভাবে নিবিড় তদারকি করা হবে। তা করা হয়নি। তাতে পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে খেলাপি ঋণ ৩৬ হাজার ৬৬২ কোটি টাকা বেড়ে গত মার্চ শেষে ১ লাখ ৮২ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা হয়েছে। ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো ছাড় দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন ইআরএফের নেতারা।

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions