খাগড়াছড়ির রামগড় সীমান্তে মাদকের ছড়াছড়ি

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় রবিবার, ৭ জুলাই, ২০২৪
  • ৮৭ দেখা হয়েছে

খাগড়াছড়ি:- ভারতের ত্রিপুরার সাবরুম সীমান্তসংলগ্ন খাগড়াছড়ির রামগড় উপজেলা ও এর আশপাশের পার্বত্য গ্রামীণ জনপদে মাদক ব্যবহারকারী ও পাচারকারীরা বেশ তৎপর বলে জানা গেছে। সূত্র জানায়, রামগড় সীমান্ত হয়ে বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য দেশে ঢুকছে। মাদক পাচার বন্ধে উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় পুলিশের সত্যিকারের সক্রিয়তা চেয়েছেন এলাকাবাসী।

গত ৩০ জুন রামগড় ৪৩, বিজিবি আয়োজিত মাসিক নিরাপত্তা সমন্বয় সভায় সীমান্ত হয়ে মাদক পাচারের প্রসঙ্গটি উঠে আসে। অধিকাংশ বক্তাই চোরাকারবারিদের কঠোরভাবে দমন করার আহ্বান জানান। বিজিবি জোন কমান্ডার (সিও) লে.কর্নেল ইমাম হোসেন বলেন, মাদকের ব্যাপারে বিজিবি শূন্য সহনশীলতার নীতিতে অবিচল। কোন অবস্থাতেই তাদের ছাড় দেওয়া হবে না।

সরেজমিন ঘুরে সীমান্ত এলাকায় বসবাসরত স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কয়েকজন চিহ্নিত মাদক কারবারি সীমান্তের ওপার থেকে মাদক এনে রামগড়সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চালান করে। কালেভদ্রে কিছু ধরা পড়লেও সিংহ ভাগই পাচার হয়ে যায় নির্দিষ্ট গন্তব্যে। রামগড়ে ভারতীয় বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মদ, ইয়াবা, ফেনসিডিল, হেরোইন, গাঁজা, দেশীয় চোলাইমদসহ নানা ধরনের মাদকদ্রব্য অবাধে বিক্রি হয়। ভারত থেকে পাচার হয়ে আসা ফেনসিডিল, ভারতীয় মদ, গাঁজা এবং দেশি চোলাইমদ এখানে খুবই সহজলভ্য। রামগড় বাজার ও এর আশপাশের নির্দিষ্ট কিছু স্থানে এসব নেশাজাতীয় দ্রব্য পাওয়া যায়। পরিত্যক্ত বাস টার্মিনাল, স্টেডিয়াম এলাকা, রাইচ টনিক এলাকা, মন্দির ঘাট, সয়েল বাগান, হাইস্কুলের শহীদমিনার এলাকা উল্লেখযোগ্য। এর বাইরেও আরও মাদকস্পট থাকার কথা শোনা যায়।

রামগড় উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বিশ্ব প্রদীপ কুমার কারবারি বলেন, এ বিষয়ে উপজেলা প্রশাসন সজাগ আছে। পূর্বের তুলনায় এলাকায় মাদকের আগ্রাসী তৎপরতা এখন কম। পূর্বে আরও বেশি ছিল। হেঁয়াকো-বাগান বাজার হয়ে মাদক রামগড়ে ঢুকে। মাদক ও নারী-শিশু পাচারকারী সমাজের ঘৃণিত ব্যক্তি। সামাজিকভাবে এদের প্রতিহত করতে হবে।

সূত্র জানায়, রামগড়ের মহামুনি, সোনাইপুল, দারোগাপাড়া, ফেনীরকূল, আনন্দপাড়া, আবাসিক এলাকা, পর্যটন এলাকা, জগন্নাথপাড়া, বল্টুরাম, গর্জনতলী, মাস্টারপাড়া, চৌধুরীপাড়া, তৈচালা, লালছড়ি, লামকুপাড়া, খাগড়াবিল, গার্ডপাড়া, বাংলাবাজার, বাগানবাজার, বাঘমারা, বড়বিল, চিকনছড়া, হেঁয়াকো, বালুটিলা, আমতলা, কয়লামুখ, জালিয়া পাড়া, নাকাপা প্রভৃতি এলাকায় মাদকসেবীদের দৌরাত্ম্য বেশি।

অনুসন্ধানে জানা যায়, রামগড় এলাকার ভদ্র পরিবারের সন্তানেরাও মাদকসেবীদের সাহচর্যে এসে মারাত্মকভাবে নেশার জগতে ঢুকে বিপদগামী হয়ে পড়ছে। বহু চেষ্টার পরও তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরানো যাচ্ছে না।

পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ নেতা সাংবাদিক নিজাম উদ্দিন বলেন, সয়েল বাগান (পাহাড়াঞ্চল কৃষি গবেষণা কেন্দ্র) এলাকায় কয়েকটি গ্রুপের বেশকিছু ছেলে-পুলে মাদক সেবনকারী ও পাচারের সঙ্গে জড়িত থাকার খবর পাওয়া যাচ্ছে। এরাই গত ১৩জুন সয়েল বাগানের কর্মচারী আবু মিয়াকে হত্যা করে থাকতে পারে। পুলিশের ধারণাও এমনটিই। সিনিয়র সাংবাদিক প্রেসক্লাব সাধারণ সম্পাদক বেলাল হোসাইন বলেন, পুরো এলাকায় মাদকের ছড়াছড়ি । সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে মাদক ঢুকে পড়েছে। এদের কঠোরভাবে দমন করা দরকার। সামাজিক অবক্ষয় চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে।

রামগড় মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মফিজুল ইসলাম বলেন, দিনে দিনে যেন মাদক বেড়েই চলছে এলাকায়। তরুণরা কুসঙ্গে মিশে অসৎ লোকের প্ররোচণায় মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে। এ থেকে পরিত্রাণের জন্য ব্যক্তি ও পারিবারিক সচেতনতা ও ধর্মীয় মূল্যবোধের চর্চা জরুরি।

রামগড় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দেবপ্রিয় দাশ বলেন, মাদকবিরোধী অভিযানে জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় লোকজনদের আন্তরিক সহযোগিতা জরুরি। শুনেছি, মাদক পাচারে এলাকার বিপথগামী লোকজন জড়িত। বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন তিনি ।

রামগড় পৌরসভার মেয়র রফিকুল আলম কামাল বলেন, রামগড়ে মাদক আসছে এটি সত্যি। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বাইরে পাচার হচ্ছে। তবে এখানে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, মাদক পাচারের খবরাখবর আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানিয়ে সহযোগিতার পরিবর্তে কতিপয় দুষ্টলোক সংশ্লিষ্ট বাহিনীগুলোর গতিবিধিই পাচারকারীদের নিকট পৌঁছে দেয়। মাদক এখন নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে ঢোকে পড়ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

বিজিবি জোন কমান্ডার লে.কর্নেল ইমাম হোসেন আরও বলেন, বাইরে থেকে এসে এখানে কেউ এই অবৈধ কাজে লিপ্ত হয় না, স্থানীয় লোকজনই পাচারকারী। তারাই এসব অপকর্মে জড়িত। স্থানীয় চোরাকারবারিদের নামের তালিকা বিজিবি’র হাতে রয়েছে উল্লেখ করে তিনি অসাধু ব্যক্তিদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার আহ্বান জানান। অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন তিনি।

রামগড় সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে সম্প্রতি দেখা যায় পেছনের সীমানা প্রাচীরের ভেতর ফেনসিডিলের খালি বোতল পড়ে রয়েছে। মাদকাসক্তরা নেশার সিরাপ খেয়ে খালি বোতল ছুড়ে ফেলে বিদ্যালয়ের ভেতর। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষক বলেন, রাতে বিদ্যালয়ের সামনের খোলা অংশে স্থাপিত শহীদ মিনার এলাকায় মাদকসেবীদের আড্ডা বসে। রামগড় উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি মো.মোস্তফা হোসেন মিয়া বলেন, যারা মাদককারবারী তাদের চিহ্নিত করে অবিলম্বে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। এরা পুরো সমাজটাকে ধ্বংংস করছে।

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions