ডেস্ক রির্পোট:- ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমাকে শিক্ষক হিসেবে নেয়নি সেটা তাদের ব্যর্থতা; কিন্তু আমি কোনো না কোনোদিন ঢাবির চেয়ে অনেক বড় বিশ্ববিদ্যালয়ের টিচার হিসেবে নিয়োগ পাবো’ (ড. মির্জা গালিব)। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন শাস্ত্রে অনার্স ও মাষ্টার্সে শতকরা ৯৮ ভাগ নম্বর পেয়ে পাস করে শিক্ষক হতে চেয়েও নিয়োগ পাননি। ঢাবির কর্তৃপক্ষের উপর ক্ষোভ প্রকাশ করা সেই মির্জা গালিব এখন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসির হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিশ্ববিদ্যালয় র্যাংকিংয়ে ৩৫১) সহকারী অধ্যাপক। শুধু ড. মির্জা গালিব নয়, বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চাকরি না পাওয়া এবং কোটা পদ্ধতির কারণে সরকারি পেতে ব্যর্থ হওয়া বাংলাদেশের শতাধিক ছেলেমেয়ে কিউএস ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র্যাঙ্কিংয়ে সেরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি), যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব কেমব্রিজ, যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়, স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজ, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, ইটিএইচ জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন। বাংলাদেশের একাাধিক ছেলেমেয়ে নাসায় চাকরি করছেন। অথচ দেশে তাদের মূল্যায়ন করা হয়নি; বিসিএস তথা সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতির কারণে চাকরি পাননি। প্রচণ্ড মেধাবী ওই ছেলেমেয়েদের সেবা থেকে দেশ বঞ্চিত হচ্ছে। অন্যদিকে বিসিএসসহ কয়েকটি সরকারি চাকরিতে কোটা সংরক্ষণ করায় চাকরি প্রত্যাশি হাজার হাজার বেধাবী বাদ পড়ছেন; অথচ কোটা সুযোগ নিয়ে কম মেধাবী এবং মেধাহীনরা সরকারি চাকরি পাচ্ছেন। কোটা পদ্ধতির সুযোগে কম মেধাবীরা সরকারি চাকরিতে গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করায় পদে পদে সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে এবং দেশের মানুষকে খেসারত দিতে হচ্ছে।
কোটায় সরকারি চাকরি প্রসঙ্গে সাবেক কূটনীতিক সাবিক আলী বলেন, কোটা পদ্ধতি অযোগ্য এবং দলীয় বিবেচনায় নিয়োগ দেয়ার খেসারত দেশের জনগণকে দিতে হচ্ছে। প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে অযোগ্য কর্মকর্তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণে অযোগ্যতা এবং অদূরদর্শিতায় দেশকে খেসারত দিতে হচ্ছে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি করা, ভারতের সঙ্গে বিভিন্ন ইস্যুতে আলোচনায় বাংলাদেশের স্বার্থ তুলে ধরতে না পারা, করোনার সময় চীনের প্রস্তাব উপেক্ষা করে ভারত থেকে টিকা আনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ, মুসলিম দেশ হয়েও সউদী আরব থেকে বাড়তি সুবিধা আদায়ে ব্যর্থ হওয়া, দীর্ঘদিনেও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পূর্বমুখি নীতি নিয়ে অগ্রসর হতে না পারা এবং রাজনীতিকরা যতই ভারতের কাছে নতজানু হোক কূটনৈতিকভাবে প্রতিটি ইস্যুতে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরতে ব্যর্থ হওয়ার মূলেই রয়েছে অযোগ্য কর্মকর্তা। মেধাবী ও যোগ্য লোকদের সংশ্লিষ্ট জায়গাগুলোতে বসানো হলে দেশকে রোহিঙ্গা নিয়ে এতো সমস্যায় পড়তে হতো না এবং এতো নাকানি চুবানি খেতে হতো না।
২০১৮ সারের জারিকৃত পরিপত্র অনুযায়ী সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবিতে সারাদেশে চলছে ছাত্র আন্দোলন। তারা ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের দাবি, ২০১৮ সালে ঘোষিত সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখতে হবে; ১৮ এর পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি চাকরিতে (সকল গ্রেডে) অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দিয়ে কোটাকে ন্যূনতম পর্যায়ে নিয়ে আসতে হবে। সেক্ষেত্রে সংবিধান অনুযায়ী কেবল অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করা যেতে পারে; সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে না এবং কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্য পদগুলোতে মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দিতে হবে এবং দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।
সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জন্য ৩০ শতাংশ, নারী কোটা ১০ শতাংশ, জেলা কোটা ১০ শতাংশ,ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্য সংরক্ষিত ৫ শতাংশ। এছাড়া প্রতিবন্ধীদের জন্য এক শতাংশ কোটা সব মিলিয়ে ৫৬ শতাংশ। বাকি ৪৪ শতাংশে মোধার ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়া হতো। পরবর্তীতে মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি, নাতনিদের দেয়ার প্রচলন শুরু হয়। এতে করে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা বাড়তে থাকে এবং মেধাবীরা সরকারি চাকরি থেকে বঞ্চিত হন। ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’-এর ব্যানারে ২০১৮ সালে যে পাঁচটি বিষয়ে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন হয়েছিল, সেগুলোর অন্যতম ছিল মুক্তিযোদ্ধা কোটার সংস্কার। আন্দোলনকারীরা চেয়েছিলেন, সেই সময়ের ৫৬ শতাংশ কোটার মধ্যে যে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বরাদ্দ, সেটি সংস্কার করে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনা হোক। কিন্তু আন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে ঘোষণা দেন ‘কোনো কোটাই রাখবো না’। অতঃপর মন্ত্রিসভা ২০১৮ সালের ৩ অক্টোবর সরকারি চাকরিতে ৯ম থেকে ১৩তম গ্রেডে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা ব্যবস্থা বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। ২০১৯ সালের ৩০ জুলাই সরকার জানায়, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পদে (৯ম থেকে ১৩তম) নিয়োগের ক্ষেত্রে বর্তমানে কোনো কোটা বহাল নেই, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির পদে (১৪তম থেকে ২০তম পর্যন্ত) কোটা বহাল রয়েছে। তবে সংশ্লিষ্ট কোটার প্রার্থী না পাওয়া গেলে সাধারণ প্রার্থীর মেধা তালিকা থেকে তা পূরণ করতে হবে। ২০২০ সালের ২০ জানুয়ারি কোটার বিষয়ে আগের জারি করা পরিপত্র স্পষ্ট করার পাশাপাশি মন্ত্রিসভার বৈঠকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দেওয়া সরকারি চাকরিতে অষ্টম বা তার ওপরের পদেও সরাসরি নিয়োগে কোটা বাতিলের প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়। ফলে টানা পাঁচ বছর সরকারি প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোনো কোটা ছিল না। কিন্তু চলতি বছরের ৫ জুন এক রিট মামলার নিষ্পত্তি করে সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটাসহ অন্য কোটা ব্যবস্থা বাতিল করে ২০১৮ সালে সরকার যে পরিপত্র জারি করেছিল, তা বাতিল করে দেন হাইকোর্ট। আপিল বিভাগও ওই রায় বহাল রাখেন। ফলে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে আসেন।
কোটা পদ্ধতি প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেন, মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে জেদ বা আবেগ নয়, প্রয়োজন সুবিবেচনা। উচ্চ আদালতের শেষোক্ত কোটা পদ্ধতি পুনর্ববাল রায় নিয়ে ইতোমধ্যে সমাজে প্রতিক্রিয়া হয়েছে। এমন সিদ্ধান্ত নিতে হলে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সরকারকে এখন শক্তভাবে আপিল করতে হবে। কোটা পুনর্বহাল করার ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক সাংবিধানিক নীতি, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ও অতীত অভিজ্ঞতা বিবেচনায় নিতে হবে। কোটার এই আধিক্য সমাজে সীমাহীন বৈষম্য সৃষ্টি করেছে। উদাহরণস্বরূপ ২০০৬ সালে সম্পন্ন হওয়া ২৫তম বিসিএস পরীক্ষায় মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ পেয়েছিলেন প্রথম ২২৮ জন। বাকিদের অযোগ্য ঘোষণা করে চাকরি দেওয়া হয়নি। অপর দিকে বিভিন্ন কোটার কল্যাণে ১৬১১তম হয়ে পররাষ্ট্র, ৫১০৪তম হয়ে প্রশাসন, ৫৩৭৭তম হয়ে কেউ কেউ পুলিশ ক্যাডারে চাকরি পেয়েছিলেন। কোটা কারণে ২৮তম থেকে ৩১তম বিসিএসে ৩ হাজার ১৬২টি পদ শূন্য ছিল। অথচ সম্মিলিত মেধাতালিকায় ওপরের দিকে অবস্থান করেও অনেকে চাকরি পাননি।
তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক মেসবাহ কামাল বলেন, গত পাঁচ বছরে নারীরা সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে গেছে কোটা পদ্ধতি তুলে দেয়ার কারণে। আদিবাসী বা প্রতিবন্ধীরা চাকরির ক্ষেত্রে কোথাও নেই পাঁচ বছরে। কারণ, তাদের সুবিধাটা প্রত্যাহার করা হয়েছিল। কাজেই আদিবাসীদের জন্য কোটা অবশ্যই পুনঃপ্রবর্তন করা দরকার।
সূত্র জানায়, রাজনৈতিক বিবেচনা ও কোটার সুযোগ নিয়ে তুলনামূলক কম মেধাবীরা বিসিএসের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ পাওয়ায় গতিহীন হয়ে পড়েছে প্রশাসন। দলীয় বিবেচনা এবং কোটা সুবিধায় নিয়োগ পেয়ে অনেক কর্মকর্তাই প্রশাসন সামলাতে পারেন না; অনেকেই সময়ের কাজ সময়ে করা এবং যথা সময়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে ব্যর্থ হন। কথা প্রসঙ্গে সাবেক এক সরকারি কর্মকর্তা বললেন, আমলাদের অযোগ্যতা বর্তমানে পণ্যমূল্য লাগামহীনতার জন্য দায়ী। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে যোগ্য কর্মকর্তা থাকলে তারা বিদেশ থেকে ডাল, চিনি, তেল আমদানি করে টিসিবির মাধ্যমে খোলাবাজারে বিক্রি করে বাজার নিয়ন্ত্রণ করতেন। বাধ্য হয়ে আমদানিকারকরা তাদের পণ্য কম লাভে বিক্রি করতো। কিন্তু বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বিদেশ থেকে পণ্য আমদানির না করে দেশী আমদানিকারণ প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে পণ্য কিনে টিসিবির মাধ্যমে বিক্রি করছে। ফলে আমদানিকারকরা নিজেদের ইচ্ছামতো দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। আমলাদের অযোগ্যতার জন্য পণ্যমূল্য মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে।
সূত্র আরো জানায়, বৈশ্বিক মহামারি করোনায় লকডাউনের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৫০ লাখ পরিবারকে প্রণোদনা দেয়ার উদ্যোগ নেন। জনপ্রতিনিধিদের বদলে আমলা তথা জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের মাধ্যমে সারাদেশে গরীব ও মধ্যবিত্ত পরিবারের তালিকা প্রণয়ন ও টাকা বিতরণের সিদ্ধান্ত নেন। এ নিয়ে একটি বিশেষ সচিব কমিটিও গঠন করা হয়। কিন্তু মোবাইলে বিকাশের মাধ্যমে টাকা বিতরণের পর দেখা যায় বেশির ভাগ পরিবার টাকা পায়নি এবং একটি মোবাইল নাম্বারে ১০ থেকে ১৫ জনের টাকা চলে গেছে। অযোগ্য কর্মকর্তাদের কারণে প্রধানামন্ত্রীর মহতি উদ্যোগ বিতর্কিত হয়েছে। প্রতি মৌসুমে ধান ও চালের দাম বেঁধে দেয় সরকার। কিন্তু আমলাদের অযোগ্যতার কারণে ধান ক্রয়ে সিন্ডিকেট গড়ে উঠে এবং কৃষকরা সরাসরি খাদ্যগুদামে ধান বিক্রি করতে পারেন না। বাধ্য হয়েই কৃষককে কম দামে দালাল ফরিয়াদের কাছে ধান বিক্রি করতে হয়। এ সবই কোটা পদ্ধতিতে কম মেধাবী ও অযোগ্য ব্যাক্তিদের নিয়োগ দেয়ায় এমনটা হচ্ছে। মাঠ প্রশাসনে অযোগ্য কর্মকর্তাদের কারণে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে বিলম্ব হয়ে থাকে। সূত্রের দাবি সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ও অগ্রাধিকার ভিত্তিক প্রকল্প যথা সময়ে বাস্তবায়ন করা যায় না শুধু কর্মকর্তাদের অদুরদর্শিতার কারণে। অযোগ্য কর্মকর্তাদের কারছে যথা সময়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ, নদীভাঙ্গন ঠেকাতে কার্যকর পদক্ষেপ, অবকাঠামো উন্নয়নে ধীর গতি হয়ে থাকে। মেধাবী যোগ্য লোকদের সরকারি চাকরিতে নিয়োগ দেয়া হলে এতো সমস্যা হতো না।
ভুক্তোভোগীরা বলছেন, দলীয় বিবেচনা ও কোটা পদ্ধতিতে স্বল্প মেধাবীদের নিয়োগের কারণে প্রশাসনে মন্থর গতি। অন্যদিকে মেধাবীরা প্রত্যাশা অনুযায়ী দেশে চাকরি না পেয়ে বিদেশ চলে যাচ্ছেন। এর বেশির ভাগই উচ্চ শিক্ষার নামে বিদেশ গিয়ে সেখানেই পড়াশোনা করে নিজেদের মেধা কাজে লাগাচ্ছেন। উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশ গিয়ে আর ফিরে আসেননি এমন একাধিক শিক্ষার্থী জানান, শিক্ষাজীবন শেষ করে সবারই পছন্দের তালিকায় থাকে বিসিএসসহ সরকারি চাকরি। কিন্তু কোটা পদ্ধতির কারণে দেশে চাকরি পাওয়া দূরহ বুঝে বিদেশে যেতে বাধ্য হন। ইউনেস্কোর ইনস্টিটিউট ফর স্ট্যাটিসটিক্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রতি বছরই ৪০ হাজারের বেশি বাংলাদেশি শিক্ষার্থী উচ্চ শিক্ষার জন্য বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অষ্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, জার্মানি, জাপান, ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া, ডেনমার্ক, সুইডেন, নিউজিল্যান্ড, সাইপ্রাস, ফিনল্যান্ডে যাচ্ছেন বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা। উচ্চশিক্ষা অর্জন করে দেশে ‘চাকরি নেই’ বুঝতে পেরে বেশিরভাগ শিক্ষার্থী সে দেশেই থেকে যাচ্ছেন।
২০২২ সালে প্রকাশিত ইউনেস্কোর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, অন্তত ৪৯ হাজার ১৫১ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ৫৮টি দেশে পড়াশোনার জন্য গিয়েছেন। ২০২১ সালে প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী ৪৪ হাজার ২৪৪ জন, ২০২০ সালে ৫০ হাজার ৭৮, ২০১৯ সালে ৫৭ হাজার ৯২০ এবং ২০১৮ সালে ৬২ হাজার ১৯১ জন শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) প্রকাশিত ‘দ্য গ্লোবাল এমপ্লয়মেন্ট ট্রেন্ডস ফর ইয়ুথ-২০২২’ এর প্রতিবেদন অনুসারে বাংলাদেশের তরুণদের মধ্যে বেকারত্বের হার ১০ দশমিক ৬ শতাংশ। লন্ডনের ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ) তথ্যমতে, বাংলাদেশে প্রতি ১০০ জন স্নাতক ডিগ্রিধারীর মধ্যে ৪৭ জনই বেকার। অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ ও সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) এক জরিপে বলা হয়, বাংলাদেশে যুবগোষ্ঠীর বড় অংশ আর্থসামাজিক ঝুঁকির মধ্যে আছে।
এক সাক্ষাৎকারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সাবেক চেয়ারম্যান ইমেরিটাস প্রফেসর ড. এ কে আজাদ চৌধুরী বলেছেন, বেকারত্বের কারণে অনেকে বিদেশ যাচ্ছেন। তবে বিদেশ গিয়ে যদি কেউ নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে পারে সেটা খারাপ নয়। তবে সব মেধাবীরাই যদি বিদেশে পাড়ি দেয়, তাহলে দেশের বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। দেশকে এগিয়ে নিতে উদ্ভাবন দরকার। মেধাবীদের ফিরতে হবে। এ জন্য যারা বিদেশে যাচ্ছে তারা ফিরলে যেন যোগ্যতা অনুযায়ী উপযুক্ত কাজ ও সম্মান পায় সেই ব্যবস্থা সরকারি ও বেসরকারিভাবে করতে হবে।