ডেস্ক রির্পোট:- পুরো অকেজো হয়ে পড়া ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনগুলো (ইভিএম) বিনষ্ট বা ধ্বংস করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইসি তালিকা না করলেও এমন ইভিএম প্রায় ২৪ হাজার। এগুলোর দাম প্রায় ৫৬৩ কোটি টাকা।
ইসির সূত্র জানায়, ১৩ জুনের মাসিক সমন্বয় সভায় অকেজো ইভিএম বিনষ্ট করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এদিকে ব্যয় না বাড়িয়ে ইভিএম প্রকল্পের মেয়াদ আরও এক বছর বাড়ানোর জন্য গত বুধবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছে ইসি।
জানতে চাইলে ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, যেগুলো মেরামতযোগ্য নয়, সেগুলো যেকোনোভাবে নিষ্পত্তি করা হবে। একেবারে অব্যবহারযোগ্য ইভিএমের তালিকা এখনো হয়নি। তালিকা করে দিলে কমিশন নিষ্পত্তি করার প্রক্রিয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবে।
২০১৮ সালে ইসির জন্য দেড় লাখ ইভিএম কিনতে ৩ হাজার ৮২৫ কোটি টাকার প্রকল্প পাস হয়। সূত্র জানায়, প্রকল্পে ইভিএম কেনায় বরাদ্দ ছিল ৩ হাজার ৫১৫ কোটি টাকা, যা প্রকল্প ব্যয়ের প্রায় ৯২ শতাংশ। প্রতিটি ইভিএমের জন্য খরচ হয় ২ লাখ ৩৪ হাজার ৩৭৩ টাকা। ওই দেড় লাখ ইভিএমের মধ্যে প্রায় ৪০ হাজারটি ভালো রয়েছে। বাকিগুলো বর্তমানে ব্যবহারের উপযোগী নয়। এগুলোর মধ্যে প্রায় ২৪ হাজার একেবারে অকেজো। বাকি প্রায় ৮৬ হাজার ইভিএম মেরামত করতেও বিপুল পরিমাণ অর্থ ও সময় লাগবে। অথচ ইভিএম প্রকল্প দলিলে বলা হয়েছিল, ইভিএমের ওয়ারেন্টি ১০ বছর নিশ্চিত করতে হবে।
ইসি সূত্র জানায়, ইসির সচিব শফিউল আজিমের সভাপতিত্বে ১৩ জুনের মাসিক সমন্বয় সভায় বিভিন্ন জেলার নির্বাচন কর্মকর্তারা তাঁদের জেলায় সংরক্ষিত ইভিএমের বেশির ভাগ ব্যবহারের অনুপযোগী বলে জানান। মানিকগঞ্জ, কক্সবাজার, যশোর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাসহ অনেকে জানান, ব্যবহৃত ইভিএম অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সংরক্ষিত আছে। এর মধ্যে কিছু প্রতিষ্ঠানের নিচতলায় স্যাঁতসেঁতে অবস্থায় রয়েছে। এতে ইভিএম ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ইভিএম রাখায় কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদানে অসুবিধা হচ্ছে।
সূত্র আরও জানায়, সভায় সিদ্ধান্ত হয় মাঠপর্যায়ে ভাড়া করা গুদামে ব্যবহারযোগ্য ইভিএম সংরক্ষণের ক্ষেত্রে আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তারা প্রয়োজনীয় সমন্বয় করবেন এবং অকেজো ইভিএম বিধি অনুযায়ী বিনষ্ট করার ব্যবস্থা করবেন। ইসির সিস্টেম ম্যানেজার (আইসিটি), ইভিএম প্রকল্পের পরিচালক ও সব আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তাকে এ কাজ বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
ব্যবহারের অনুপযোগী ইভিএমের সংখ্যা জানতে চাইলে ইভিএম প্রকল্পের পরিচালক কর্নেল সৈয়দ রাকিবুল হাসান বলেন, মাঠপর্যায়ে সঠিকভাবে ইভিএম যাচাই করা হয়নি। তিনি মনে করেন, ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ ইভিএম একটু মেরামত করলে ব্যবহারযোগ্য করা যাবে। তিনি বলেন, ব্যবহারের অনুপযোগী ইভিএম পুরো বাদ দেওয়া হবে নাকি সেগুলো থেকে যন্ত্রাংশ নিয়ে অন্যগুলো ঠিক করা হবে, কতগুলো বিনষ্ট করা হবে, কীভাবে, কখন ও কোথায় ধ্বংস করা হবে, ধ্বংস করা হবে নাকি নিলাম করা হবে—এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তবে এর আগে প্রকল্পে কিছু জনবল দিয়ে মাঠপর্যায়ে গিয়ে ভালো, মেরামতযোগ্য ও ব্যবহার অযোগ্য ইভিএম বাছাই করা যায়।
ইসি সূত্র বলেছে, মাঠপর্যায়ে ইভিএম রাখতে ৪১ জেলায় গুদাম ভাড়া করেছে ইসি। এসব গুদামের বেশির ভাগই বাসা। এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক বলেন, তিনি যে কয়েকটি দেখেছেন, সেগুলো বাসা। কয়েকটিতে ইভিএম তো দূরের কথা, আসবাব রাখলেও নষ্ট হয়ে যাবে। যেহেতু ওয়্যারহাউস নেই, তাই আপাতত বাসাবাড়িতে রাখা হচ্ছে। এটি কখনোই স্থায়ী সমাধান নয়।
ইভিএম প্রকল্পের এক বছরের বর্ধিত মেয়াদ ৩০ জুন শেষ হচ্ছে। ব্যয় না বাড়িয়ে প্রকল্পটির মেয়াদ আরও এক বছর বাড়াতে বুধবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছে ইসি। সূত্র বলছে, শেষ মুহূর্তে প্রস্তাব পাঠানোর কারণে অনুমোদন দিলে বিশেষ বিবেচনায় দিতে হবে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৫০ আসনে ইভিএম ব্যবহারের জন্য কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন ২ হাজার ইভিএম কিনতে ৮ হাজার ৭১১ কোটি টাকার প্রকল্প নিয়েছিল। আর্থিক সংকটে তাতে সায় দেয়নি সরকার। পরে চলমান প্রকল্পের ইভিএমগুলো মেরামতের জন্য ১ হাজার ২৬০ কোটি টাকা চেয়েছিল বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি (বিএমটিএফ)।
সরকার সেই টাকাও দেয়নি। এতে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনেই ব্যালটে ভোট নেওয়া হয়। বিএমটিএফ ওয়্যারহাউসে ইভিএম রাখার ভাড়া হিসেবে প্রায় ৫৫ কোটি টাকা দাবি করছে। কিন্তু প্রকল্পের ডিপিপিতে ইভিএম সংরক্ষণের বিষয়টি না থাকায় সেই টাকা দিতে পারছে না কমিশন।আজকের পত্রিকা