খাগড়াছড়ি:- খাগড়াছড়ির অন্যতম বৃহত্তম উপজেলা রামগড়সহ পাশ্ববর্তী ফটিকছড়ি উপজেলার বাগানবাজার ইউনিয়নের মানুষ চিকিৎসা সেবা নেয় রামগড় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। কাগজে কলমে ৫০শয্যার হাসপাতাল হলেও এখানে চিকিৎসা সেবা অত্যন্ত নাজুক। মাত্র একজন স্থায়ী চিকিৎসক দিয়েই হাসপাতালের কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। চিকিৎসক, নার্স থেকে শুরু করে টেকনিশিয়ান সহ সব পদে লোকবল সংকট।
জানা যায়, ২০১৩–২০১৪ অর্থ বছরে হাসপাতালটি ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় রূপান্তর করা হলেও কোনো জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়নি। ৩১ শয্যার কাঠামোতে হাসপাতাল চললেও সেখানে রয়েছে চিকিৎসক ও নার্সের অভাব। ৩১ শয্যার হাসপাতালে চিকিৎসক পদের সংখ্যা ১৩টি, কিন্তু বর্তমানে কর্মরত রয়েছেন ১ জন। অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে ৩জনকে সংযুক্তি দেয়া হলেও তাদের মাঝে ডা. তাপস চৌধুরী কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বদলি হয়েছেন। অপর চিকিৎসক ডা. মাহমুদ শাহ আবরার এক মাসের ছুটিতে আছেন। হাসপাতালে কর্মরত আছেন একমাত্র চিকিৎসক রোকসানা ইয়াসমিন এবং অতিরিক্ত একজন চিকিৎসক মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন। তিনি ডেপুটেশনে সপ্তাহে দুই দিন রোগী দেখেন।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, সার্জারি, চক্ষু, গাইনি, অ্যানেস্থেসিয়া, মেডিসিন, ডেন্টাল, অর্থোপেডিক, চর্ম ও যৌন বিভাগে নেই কোনো ধরনের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। মেডিকেল অফিসার (ইওসি), মেডিকেল অফিসার (আইএমও) ও মেডিকেল অফিসার (এমএমসি) পদ গুলো শূন্য। নার্সের সংখ্যাও অপ্রতুল। বর্তমানে নেই কোনো দক্ষ গাইনি চিকিৎসকও। হাসপাতালের গুরুত্বপূর্ণ বিভাগগুলোতেও নেই পর্যাপ্ত জনবল। হাসপাতালে নেই কোনো পুষ্টিবিদ ও টেকনিশিয়ান। স্বাস্থ্য পরিদর্শক, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর পদগুলোতে জনবল সংকট প্রকট।
রামগড় বাজারের বাসিন্দা মোস্তাফিজুর রহমান জানান, কখনোই এ হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসা ছিলো না। আর এখন হাত ভাঙ্গা রোগীকেও বিভাগীয় শহরে রেফার্ড করতে দেখি প্রতিনিয়ত। পরীক্ষা–নিরীক্ষাও স্থানীয় ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো থেকে করতে হয়। গুরুতর রোগী নিয়ে গেলে প্রাথমিকভাবে কিছুক্ষণ চিকিৎসা দিয়ে চট্টগ্রাম শহরে স্থানান্তর করতে বলা হয়।
দারোগাপাড়ার বাসিন্দা সাহেনা আক্তার বলেন, প্রসূতিদের চিকিৎসার জন্য কোনো উন্নত ব্যবস্থা নেই। গর্ভবতী মহিলাদের পরিস্থিতি একটু জটিল হলেই তাৎক্ষণিক চট্টগ্রাম কিংবা ফেনীতে নিয়ে যেতে হয়। তিনি আরো জানান, অ্যাম্বুলেন্সও সবসময় পাওয়া যায় না। জরুরি মুহূর্তে ব্যক্তিগত গাড়ি ভাড়া করে বিভাগীয় শহরগুলোতে যেতে হয়।
কালাডেবা এলাকার বাসিন্দা ওসমান মোল্লা জানান, সামান্য রক্ত পরীক্ষা করার জন্যও ডায়াগনস্টিক সেন্টার গুলোতে দৌঁড়াতে হয়। হাসপাতালে গুরুতর রোগী রাখে না কর্তৃপক্ষ। এ উপজেলার মানুষ পরিপূর্ণ চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত।
রামগড় উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোজাম্মেল হোসেন হাসপাতালের এই নাজুক পরিস্থিতির কথা স্বীকার করে বলেন, হাসপাতালে চিকিৎসক এবং জনবল সংকট রয়েছে। জোড়াতালি দিয়ে চিকিৎসা সেবা অব্যাহত রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আশা করি দ্রুত হাসপাতালে চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হবে। তিনি জানান, জেনারেটর বিকল হওয়ায় বহুমুখী সমস্যার সম্মুখীন হলে আইপিএস দিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়।
খাগড়াছড়ি জেলা সিভিল সার্জন মোহাম্মদ ছাবের বলেন, ‘রামগড় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক সংকট দ্রুত কেটে যাবে। সেখানে শীঘ্রই চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হবে। জেলার শুধু দীঘিনালা এবং মহলছড়ি হাসপাতালে টেকনিশিয়ান রয়েছে। তাদের রোস্টার পদ্ধতিতে সব উপজেলায় ডিউটি দেওয়া হবে। আর অন্যান্য সমস্যা সমাধানে চেষ্টা চলছে।’