শিরোনাম
রাঙ্গামাটিতে ইউপিডিএফ সদস্যসহ ২ জনকে হত্যার প্রতিবাদে ২০ মে জেলায় অর্ধদিবস সড়ক ও নৌপথ অবরোধের ডাক রাঙ্গামাটির লংগদুতে সন্তু গ্রুপ কর্তৃক ইউপিডিএফ সদস্যসহ ২ জনকে গুলি করে হত্যার নিন্দা ও প্রতিবাদ রাঙ্গামাটিতে ব্রাশ ফায়ারে ইউপিডিএফের সদস্যসহ দুইজন নিহত এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পদ ৯৬,০০০ আবেদন ২৪,০০০ রিজার্ভ নিয়ে তিন হিসাব, চাপ বাড়ছে বিরোধী রাজনীতিতে নতুন মেরূকরণ! এক মঞ্চে আসছে বিএনপি-জামায়াত পাহাড়ে অস্ত্রধারীদের গোপন আস্তানা,দেড় বছরে ৮০ খুন গ্রেফতার ১১০ * অপরাধীদের শনাক্ত করতে চলছে অনুসন্ধান মেয়াদোত্তীর্ণ সিন্ডিকেট সদস্য দিয়ে চলছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সারা দেশে ১৭৩ কিশোর গ্যাং ইসরায়েলে ৭৫টি রকেট হামলা করেছে হিজবুল্লাহ

পরকীয়া থেকে খুন! বাবুল আক্তারের সাজা চেয়ে আদালতে অঝোরে কাঁদলেন মিতুর মা

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪
  • ৩৬ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- সাবেক পুুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের পরকীয়া প্রেমের কারণেই মেয়ে মাহমুদা খানম মিতুকে হত্যা করা হয়েছে বলে আদালতে জানিয়েছেন মা শাহেদা মোশাররফ। সাক্ষ্য দেওয়ার একপর্যায়ে তিনি বাবুল আক্তারের সাজা চেয়ে অঝোরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। এ সময় আদালতে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। আলোচিত মিতু হত্যা মামলায় গতকাল মঙ্গলবার চট্টগ্রামের তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. জসিম উদ্দিনের আদালতে সাক্ষ্য দেন শাহেদা মোশাররফ।
দীর্ঘ সাক্ষ্যে তিনি মিতুকে খুনের জন্য বাবুল আক্তারকে দায়ী করেন। ভারতীয় বংশোদ্ভূত নারীর সঙ্গে বাবুলের বিয়েবর্হিভূত সম্পর্ক, সেটা মিতু জেনে ফেলায় তাকে মানসিক অত্যাচার এবং পরবর্তীতে পরিকল্পিতভাবে তাকে খুনের ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন তথ্য সবিস্তারে উল্লেখ করেন সন্তানহারা এই মা।
প্রধান আসামি বাবুল আক্তারের উপস্থিতি চলে এই সাক্ষ্যগ্রহণ। শাশুড়ির বিস্ফোরক বিভিন্ন তথ্যের বিপরীতে একেবারে নীরব ছিলেন বাবুল আক্তার। দুপুর ১২টায় চাঞ্চল্যকর এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরুর পর প্রথমে সাক্ষ্য দেন অবসরে যাওয়া পুলিশ পরিদর্শক মহিউদ্দিন মাহমুদ, যিনি ঘটনার সময় নগরীর পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) দায়িত্বে ছিলেন। এরপর সাক্ষ্য দিতে কাঠগড়ায় দাঁড়ান শাহেদা মোশাররফ। সাক্ষ্যের এ পর্যায়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে শাহেদা বলেন, আমি মিতুর সন্তানদের ফেরত চাই। আমি ওদের ভিক্ষা চাই। তবুও তাদের আমি সৎমার সঙ্গে রাখব না।
আদালতে দীর্ঘ সাক্ষ্য দেয়ার পর আসামি পক্ষের আইনজীবীরা তাকে জেরা শুরু করেন। বাবুল আক্তারের আইনজীবী কফিল উদ্দিন চৌধুরী বলেন, শাহেদা মোশাররফ আদালতে যা বলেছেন তা অসত্য, বানোয়াট ও সাজানো। বাবুল আক্তারের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ এ আদালতে করেছেন তা তিনি আগে কখনও পুলিশ কিংবা কারও কাছে প্রকাশ করেননি। আজ বুধবার দ্বিতীয় দিনের মতো তাকে জেরা অব্যাহত থাকবে।
এর আগে আদালতে শাহেদা মোশাররফ বলেন, আমার বড় মেয়ে মাহমুদা খানম মিতুর ২০০২ সালের ২৬ এপ্রিল বাবুল আক্তারের সঙ্গে বিয়ে হয়। তখন বাবুল আক্তার বেকার ছিল। বিবাহের পর একেবারে শুরু থেকে তাদের সম্পর্ক তেমন ভালো ছিল না, মোটামুটি ছিল। পরে পুলিশে যোগদান করেন। এরপর কক্সবাজারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে বদলি হয়। সেখানে ভারতীয় বংশোদ্ভূত এক নারীর সঙ্গে পরকীয়া প্রেমে জড়িয়ে পড়ে। কক্সবাজার বেড়াতে গিয়ে বাবুল ও ওই ভারতীয় নারীর গভীর সম্পর্ক জানতে পারে মিতু। মিতু বিষয়টি টেলিফোনে আমাকে জানায়। তখন আমি তাকে বলি, তুই চলে আয়। মিতু তখন বলে, আমার ছেলে-মেয়েরা আমাকে খারাপ মনে করবে। তাই আমি আল্লাহর ওপর ভরসা রাখি।
সাক্ষ্যে শাহেদা মোশাররফ বলেন, এরপর বাবুল আক্তারকে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশে (সিএমপি) বদলি করা হয়। তখন বাবুল আক্তার আর আমার মেয়ে এক বাসায় থাকলেও আলাদা-আলাদা রুমে থাকতো। বাবুল আক্তার গভীর রাত পর্যন্ত অনেক মেয়ের সঙ্গে কথা বলতো। মিতু সেগুলো আঁড়ি পেতে শুনতো। বাবুল ২০১৪ সালে মিশনে যায়। মিশনে যাওয়ার সময় তার একটি মোবাইল বাসায় রেখে যায়। ওই মোবাইলে বাবুল আক্তারকে দেওয়া ওই ভারতীয় বংশোদ্ভূত নারীর মেসেজ খুঁজে পায় মিতু। একইসঙ্গে বাবুল আক্তারকে ওই নারীর উপহার দেওয়া দুটি ইংরেজি বই পায় মিতু। মিতু মেসেজগুলো দুটি বড় পৃষ্ঠা ও দুটি ছোট পৃষ্ঠায় লিখে রাখে।
শাহেদা আদালতকে বলেন, ২০১৫ সালের ডিসেম্বর মাসে আমার ছোট মেয়ের বাসায় মিতু ও তার ছেলে-মেয়েরা বেড়াতে যায়। মিতু তখন আমাকে পৃষ্ঠায় লেখা মেসেজগুলো দেয়। এসব কিছু আমাদের বলায় বাবুল মিতুর ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু করে। এরপর মিতু তিন-চারবার আত্মহত্যার চেষ্টা করে।
মেয়ের ওপর বাবুলের অত্যাচারের কথা বলতে গিয়েই শাহেদা মোশাররফ কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তিনি বলেন, মিতু চট্টগ্রামের বাসা থেকে ঢাকায় চলে যাওয়ার চেষ্টা করে। ২০১৬ সালের জুনের ৪ তারিখ রাতে মিতু আমাকে ফোন দেয়। ফোন দিয়ে বলে, আম্মা মাহিরের স্কুল থেকে ম্যাসেজ এসেছে। আমাকে খুব ভোরে মাহিরকে নিয়ে স্কুলে চলে যেতে হবে। ৫ জুন সকালে মিতুর বাসার পাশ থেকে একজন মহিলা আমাকে ফোন দেন। এ পর্যায়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তিনি। কিছু সময় তিনি কিছুই বলতে পারছিলেন না। এ পরিস্থিতিতে আদালত তাকে চেয়ারে বসে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য বলেন।
২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে এক মহিলার ফোনকল পাবার তথ্য দিয়ে শাহেদা মোশাররফ বলেন, ওই মহিলা আমাকে বলেন- মিতু গাড়ির সিলিন্ডার ব্লাস্ট হয়ে অ্যাকসিডেন্ট করেছে। আমি বলি, মা তুমি মিতুকে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করাও। আমি টাকা নিয়ে আসছি। এরপর মাহির (মিতুর ছেলে) একজনের মোবাইল থেকে কল দিয়ে বলে- নানু, আম্মুকে সন্ত্রাসীরা কোপাইছে, গুলি করছে। তখন আমি মাহিরকে বলি, তোমার আম্মু কি কথা বলছে? মাহির বলে, না আম্মু তাকিয়ে আছে শুধু। আমি মাহিরকে বলি, তুমি তোমার বাবাকে কল দিয়েছ ? মাহির বলে, হ্যাঁ নানু, ফোন দিয়েছি, তবে বাবা কথা বলে না।
আমি মাহিরকে বলি তোমার আম্মুকে চাদর দিয়ে ঢেকে রাখো। এরপর আমি, আমার ছোট দুই দেবর, জা ও ছোট মেয়েকে নিয়ে ফ্লাইটে চট্টগ্রাম চলে আসি। মিতুকে যেখানে খুন করা হয়েছে, আমি সেখানে যাই। এরপর আমি মিতুর বাসায় আসি। ওখানে শুনি মিতু (লাশ) হাসপাতালে আছে।
এ সময় তিনি তথ্য দেন, মিতু মারা যাওয়ার পর ছেলে মাহির বাবুল আক্তারকে তিনবার কল দিয়েছিল। কিন্তু বাবুল কল রিসিভ করলেও কোনো কথা বলেনি। শাহেদাও একবার কল দিয়েছিলেন, কিন্তু রিসিভ করেনি। তিনি জানান, বাবুল আক্তার বিদেশে থাকার সময় তিন-চারবার বাংলাদেশে আসেন। তবে দেশে ফিরলেও তিনি বাসায় অর্থাৎ মিতু কিংবা ছেলেমেয়েদের কাছে যাননি। মিশন শেষ করে ফিরেই তিনি চীনে চলে যান। সেখানে বসেই বাবুল মিতুকে মারার পরিকল্পনা করেন।
সাক্ষ্যে শাহেদা বলেন, মিতুর একটি ব্যবসা ছিল। ব্যবসার তিন লাখ টাকা দিয়ে মিতুকে খুন করে। মিতু মারা যাওয়ার পর বাবুল আক্তার আমাদের বাসায় ওঠে। ছয়মাস আমাদের বাসায় ছিল সে। সেখানে বসে সে আসামিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। ২৪ জুন (২০১৬) বাবুল আক্তারকে ডিবি অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর বাবুল সেখান থেকে চাকরি ছেড়ে আসে। আমি তখন তাকে জিজ্ঞেস করি, চাকরি ছাড়লে কেন? তখন সে বলে, মিতু খুন হওয়ার কারণে আমাকে চাকরি ছাড়তে হয়েছে। আমি তাকে বলি, তোমার চাকরি ছাড়ার বিষয় কি মিতুর খুনের বিচারের জন্য?
বাবুল আক্তার মিতুকে খুন করার জন্য মুসাকে ৭০ হাজার টাকা দিয়ে অস্ত্র কিনে দেয়। একথা বলেছে মুসার স্ত্রী। মুসার স্ত্রী তাকে জিজ্ঞেস করেছিল, তুমি মিতুকে খুন করেছ? তখন মুসা তার স্ত্রীকে বলে, আমি খুন না করলে বাবুল আক্তার আমাকে ক্রসফায়ার দেবে। বাবুল আক্তার আমাদের বলেছিল, মিতুর খুনের আসামিরা গ্রেফতার হয়েছে। আমি ক্রসফায়ার দিতে বলেছি।
শাহেদা আরও বলেন, আসামি ওয়াসিম, আনোয়ার গ্রেফতার হয়েছিল। এর কিছুদিন পরেই ভোলা ধরা পড়ে। গ্রেফতার হওয়ার পর সে আদালতে জবানবন্দি দেয়-বাবুল আক্তারের নির্দেশেই মুসা মিতুকে খুন করেছে। মিতু মারা যাওয়ার দেড় মাস পর সে যে বাসায় ছিল ওখানে মিলাদ পড়ানোর জন্য আমরা চট্টগ্রাম আসি। এর কিছুদিন পর আসামি কালু ও শাহজাহান গ্রেফতার হয়। আমরা চট্টগ্রাম আসার পরে অবস্থা দেখে মনে হয়েছে পূর্বপরিকল্পিতভাবে বাবুল আক্তার মিতুকে খুন করেছে। মিথ্যা তথ্য দিয়ে ও নিজেই মিতু হত্যার মামলা করল। পরে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আমার স্বামীকে বলে, আপনারা বাবুল আক্তারের বিরুদ্ধে মামলা করেন। ২০২১ সালের ১২ মে মিতুর বাবা বাবুল আক্তারকে আসামি করে পাঁচলাইশ থানায় মামলা করলেন।

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.net
Website Design By Kidarkar It solutions